
ছবি- বহুমাত্রিক.কম
বাড়িঘরের আশপাশে গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করেছে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (সিএনপিসি)। মাটির ৬০ ফুট গভীরে দিনভর একের পর এক বিস্ফোরণে পাকা, আধাপাকা বসতবাড়ি ও ভূগর্ভে বার বার কম্পন হচ্ছে। এতে শিশু ও অসুস্থ রোগীরা আতঙ্কিত হচ্ছেন।
বিস্ফোরণে টিউবওয়েল, পাকা দেয়ালে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় উদ্বেগ উৎকন্ঠায় স্থানীয়রা। চা শ্রমিকদের পুরনো ঘরে ফাটল দেখা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গ্যাস অনুসন্ধানে কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের ধূপাটিলা, নোয়াগাঁও ও শ্রীসূর্য্য গ্রাম থেকে গত দু’দিন যাবত বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার ৫শ’ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে সার্ভে, ড্রিলিং ও রেকর্ডিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছে বিজিপি, চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন। পেট্রোবাংলার তত্ত্বাবধানে ও সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লি: এর নির্দেশনায় এ্যাকরেজ ব্লক-১৩ ও ১৪ এর অবমুক্ত এলাকায় ৩-ডি সাইসমিক জরিপ প্রকল্প কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগঞ্জে, বসতবাড়ির আঙ্গিনায়ও ড্রিলিং করে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে।
দু’চার মিনিট পরপরই ভূগর্ভে বিস্ফোরণে প্রতিটি ঘরের মধ্যে কম্পন হচ্ছে। একসাথে মাটি ও ঘরের মধ্যে এই কম্পনে অসুস্থ রোগী ও শিশুরা ভয়ে আতঙ্কিত হচ্ছে। দিনে শতাধিক বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। গ্যাস কোম্পানী লোকদের কার্যক্রমে কৃষকদের অনেক ফসলি জমি বিনষ্টেরও অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া বিস্ফোরণের ফলে মাটি ধ্বসে যাওয়া, পাকা দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়া, টিউবওয়েলে সমস্যা, পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতিসহ ভূমিকম্পে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
দেওছড়া চা বাগানের রাজু গোড় বলেন, বিস্ফোরণের কারণে আমার ঘরের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। আপত্তি কাকে জানাবো বুঝতে পারছি না। পতনঊষারের নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো. শামসোদ্দীন আহমদ বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় আমার বাড়ির ভেতরেও চারা জমিতে মাটির প্রায় ৭০ ফুট নিচে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। পাশর্^বর্তী জাহাঙ্গীর মিয়া, গণি মিয়া, লিয়াকত আলীর বাড়ির পাশের্^ও অব্যাহতভাবে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। বিস্ফোরণের পর গর্ত থেকে প্রায় ঘন্টা খানেক সময় পানি ও বালি বের হতে থাকে। এ সময়ে শিশুরা ও অসুস্থ রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছে।’
শ্রীসূর্য্য গ্রামের সমাজকর্মী ফটিকুল ইসলাম, ধূপাটিলা গ্রামের সায়েদ মিয়া, আক্তার মিয়া, শেরওয়ান আলী, আতিকুর রহমান বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে তারা দল বেঁধে কাজের কারণে জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে। এখন বাড়িঘরের আশেপাশে যে হারে বিস্ফোরণ করছে তাতে আতঙ্কে উঠতে হয়। আর শিশু ও অসুস্থ লোকজনের জন্য আরো বেশি আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বাড়িঘরের আশেপাশে এভাবে অজস্র বিস্ফোরণের কারণে ঘরের পাকা দেয়ালে ফাটল দেখা দিতে পারে। টিউবওয়েলেও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। ভূমিকম্পে বড় ধরণের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তাছাড়া বন্যা আসলেও মাটি ধ্বসে যেতে পারে। এভাবে গ্রামের ভেতরে অব্যাহত বিস্ফোরণ মোটেও উচিত হয়নি বলে তারা দাবি করেন।
চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এর পাবলিক রিলেশন অফিসার ইমাম হোসেন এর সাথে মোবাইল ফোনে আলাপকালে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, পেট্রোবাংলার তত্ত্বাবধানে আমাদের সার্ভে কাজ চলমান রয়েছে। কাজের জন্য বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সহ বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতি সাপেক্ষে সার্ভে ও ড্রিলিং কাজ চলছে। মৌলভীবাজারের ২০টি সহ সারাদেশে ৪৯টি চা বাগানে কাজ করারও অনুমতি রয়েছে। তবে এসব কাজের জন্য ফসলের কিংবা বাড়িঘরে কোন ধরণের ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর সিলেট বিভাগীয় সমম্বয়ক এড. শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, বসতবাড়ির আশেপাশে এভাবে একের পর এক বিস্ফোরণ নি:সন্দেহে পরিবেশ, প্রতিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। পতনউষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, গ্যাস কোম্পানীর লোকজন আমাদেরকে বলেছে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারা ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দিন বলেন, সরকার থেকে অনুমতি নিয়ে তারা সার্ভে শুরু করেছে। তবে বসতবাড়ি থেকে কমপক্ষে তারা ৮০ মিটার দূরত্বে বিস্ফোরণ ঘটানোর কথা বলেছে। এতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারা ক্ষতিপূরণ প্রদান করার কথা রয়েছে।
বহুমাত্রিক.কম