
ফাইল ছবি
মিসরে ১৫ লাখ টাকা মওকুফ করিয়ে অগ্নিদগ্ধ দুই প্রবাসীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। বৃহস্পতিবার মিসরে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে তাদের ছাড়িয়ে আনা হয়।
ভাগ্যের পরিবর্তন আর পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে মিসরে যান চাঁদপুরের ফাইজুল ইসলাম (৩৫), কিশোরগঞ্জের মো. হান্নান মিয়া (৪২) এবং ফরিদপুরের লুৎফর রহমান (২৬)।
জানা যায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এয়াহিয়া তানভির এই তিন বাংলাদেশিকে মিসরে ভালো বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে চার লাখ টাকা করে নিয়ে অকে-টু-বোর্ড অন-অ্যারাইভ্যাল ভিসায় মিসরে নিয়ে যান।
কায়রো বিমানবন্দরে নামার পর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ইসমাইলিয়া শহরে। সেখানে কান্তা এলাকায় একটি ছোট পোশাক কারখানায় শিক্ষানবিশ হিসেবে মাত্র ১০০ ডলার বেতনে চাকরি দেয় এয়াহিয়া। তিনজন মিলে এক রুমের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে দিন কাটছিল তাদের।
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে একদিন কাজ থেকে বাসায় ফিরে রাতের খাবার রান্না করতে গিয়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
এ সময় তিন বাংলাদেশি অগ্নিদগ্ধ হন। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সহায়তায় প্রথমে তাদের ইসমাইলিয়া আবু-খালিফা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ফাইজুল ইসলামের অবস্থার অবনতি হওয়ায় মিসরের পুলিশ তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে নিয়ে যায় জাগজিগ হাসপাতালে। সেখানে তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ফাইজুল।পরিবারের ইচ্ছায় কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ফাইজুলের লাশ কফিনবন্দি করে পাঠায় দেশে।
এদিকে কিশোরগঞ্জের মো. হান্নান মিয়া ও ফরিদপুরের লুৎফর রহমান এক মাস চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করতে চাইলে চিকিৎসার খরচ পরিশোধ না করায় হাসপাতালেই আটকিয়ে রাখা হয় তাদের।
খবর পেয়ে কায়রোস্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজেরের নির্দেশে আবু খালিফা হাসপাতালে ছুটে যান দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) মো. ইসমাইল হোসেন। তিনি জানতে পারেন, দুজনের হাসপাতালের বিল এসেছে ১১ হাজার ইউএস ডলার। হান্নান ও লুৎফর জানান, তাদের কাছে কোনো টাকা-পয়সা, এমনকি পাসপোর্ট ও জামা-কাপড় কিছুই নেই।
সব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দুই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও বিশাল অঙ্কের এই বিল দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলে জানান দূতাবাসের কাউন্সিলর।
এ নিয়ে দূতাবাস, হাসপাতাল, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চিঠি চালাচালি করেও সমস্যার সমাধান না করতে পেরে আবু খালিফা হাসপাতালকে বিল মৌকুফ করার জন্য অনুরোধপত্র পাঠায় দূতাবাস। এরই মধ্যে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, এই দুই বাংলাদেশির থাকা-খাওয়াসহ বিল এসেছে প্রায় ১৪ হাজার ডলার।
হাসপাতাল ও দূতাবাসের মধ্যে দীর্ঘ ছয় মাস দর-কষাকষির পর অবশেষে দুই হাজার ডলার পরিশোধ শেষে ২২ মে দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর মো. ইসমাইল হোসেন তাদের মুক্ত করে আনেন।
কাজের প্রলোভন আর মিথ্যা আশ্বাসে ওকে-টু-বোর্ড অন-অ্যারাইভ্যাল ভিসায় মিসরে লোক আনার কারিগর এয়াহিয়া তানভির ঘটনার পরপরই গাঢাকা দেন। তাকে বহুবার ফোন করে তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।
দীর্ঘ আট মাস হাসপাতালের বন্দি দশা থেকে বেরিয়ে হান্নান ও লুৎফর জানান, ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় মিসরে এসেছিলাম। আসার আগে আমাদের বলা হয়েছিল মিসরে থাকা খাওয়াসহ ভালো বেতনের চাকরি দেবে। আসার পর দেখলাম সবই ছিল মিথ্যা আশ্বাস। দুর্ঘটনার পরপরই বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর আমাদের দেখতে আসেন ও কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেন। আমাদের চিকিৎসা বিল নিয়ে হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলতে বেশ কয়েকবার উনি এখানে এসেছেন। যেহেতু আমাদের ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে আনা হয়নি, সেহেতু দূতাবাস কারো বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নিতে পারেনি।
দীর্ঘ আট মাস পর মিসরের মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ম্যাডাম সামিনা নাজ ও কাউন্সিলর ইসমাইল স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তাদের সহযোগিতা না পেলে হাসপাতালের এই বিশাল অঙ্কের চিকিৎসা বিল না দেওয়ার কারণে আমাদের জেলে যেতে হতো। আশা করি, আমাদের পুড়ে যাওয়া পাসপোর্টটি রি-ইস্যু করতে দূতাবাস সাহায্য করবে।