Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১৬ ১৪৩১, মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪

রহস্যময় এই ধাতব বৌদ্ধ মূর্তি স্ক্যান করে চমকে গেলেন বিজ্ঞানীরা

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৪৩, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

প্রিন্ট:

রহস্যময় এই ধাতব বৌদ্ধ মূর্তি স্ক্যান করে চমকে গেলেন বিজ্ঞানীরা

ছবি- সংগৃহীত

ঢাকা : নেদারল্যান্ডের দ্য মিয়েন্ডার মেডিক্যাল সেন্টারে অনেক বয়স্ক রোগীর চিকিৎসা হয়। কিন্তু তাই বলে এক হাজার বছর বয়সের ‘রোগী’! কয়েক বছর আগে হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষার জন্য নিয়ে আসা হয় ওই প্রবীণ ‘রোগী’কে।

রোগী অবশ্য কোনও সাড়া দেন না, হাঁটাচলা করতে পারেন না এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসও নেন না। ‘রোগী’ এক হাজার বছর বয়সি এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর মূর্তি। এতদিন তার ঠিকানা ছিল নেদারল্যান্ডেরই একটি মিউজিয়াম।

ওই বৌদ্ধ মূর্তির মধ্যে যে এক মানবদেহ আছে, তা মুখে মুখে প্রচলিত থাকলেও, বিজ্ঞানীরা এতদিন তার সত্যতা জানতেন না। প্রাচীন এই রহস্যের উপর আলোকপাত করার জন্যই মিউজিয়াম থেকে ওই বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর মূর্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

সোনালি রঙের ওই ধাতব বৌদ্ধ মূর্তির সিটি স্ক্যান করার পরই তাজ্জব হয়ে যান উপস্থিত চিকিৎসক এবং গবেষকরা। দেখা যায়, বাইরে দেখে যা নেহাতই মূর্তি, তার ভিতরে পদ্মাসনে ধ্যানে মগ্ন এক সন্ন্যাসী! যার নাম লিউকুয়ান।

ওই সন্ন্যাসীর দেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশ্য কিছুই ছিল না। পরিবর্তে তার দেহের ভিতরে বৌদ্ধ ভাষায় লেখা কাপড় ভরা ছিল। কীভাবে তার দেহ থেকে সমস্ত অঙ্গ বের করে নেওয়া হল, কীভাবে তার মমি তৈরি হল তা এখনও রহস্যই রয়েছে। বিস্তর গবেষণাও চলছে এ নিয়ে।

নিজেই নিজের দেহের মমিফিকেশন জাপানে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মধ্যে খুবই প্রচলিত প্রথা। এশিয়াজুড়েই এমন রীতির চল ছিল বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মধ্যে। চীনেও এ রকম দেখা গেছে।

কীভাবে ধীরে ধীরে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা নিজেদের দেহ মমি বানাতেন? জেরেমিয়া কেন নামে এক লেখকের ‘লিভিং বুদ্ধা’ নামে বইয়ে এর উল্লেখ রয়েছে। ওই বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে এর পদ্ধতি। ইচ্ছুক সন্ন্যাসীরা খুব কঠিন ডায়েট চার্ট অনুসরণ করেই নাকি এমন করতেন।

বইতে দাবি করা হয়েছে, এটা খুব ধীর গতির প্রক্রিয়া। তারা বাদাম, বেরি, গাছের ছাল খেতেন। এতে নাকি ক্রমে তাদের শরীরের চর্বি গলে যেত এবং শরীর আর্দ্রতা হারিয়ে ক্রমশ শুষ্ক হয়ে উঠত।

মৃত্যুর পর শরীরে ব্যাকটিরিয়ার বৃদ্ধি আটকাতে জীবিতাবস্থায় বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ খেতেন তারা। আর খেতেন বিশেষ এক ধরনের চা, যা বিষাক্ত হার্ব দিয়ে বানানো হত। এই চা পান করার ফলে তাদের শরীরও বিষাক্ত হয়ে উঠত এবং মৃত শরীরে ম্যাগট তৈরি হতে পারত না।এইভাবে দীর্ঘদিন ধরে কড়া ডায়েটের ফলে ওই সন্ন্যাসী যখন একেবারেই মৃতপ্রায়, তখন তাকে মাটির নীচে একটি কক্ষে স্থানান্তর করা হত। তিনি সেই কক্ষের ভিতরেই ধ্যানে বসতেন। আর বাঁশের তৈরি একটি ফানেলের মধ্যে দিয়ে শ্বাস নিতেন।

এই ভাবেই তিনি মাটির নীচে ওই কক্ষে পড়ে থাকতেন। তিন বছর পর অন্য সন্ন্যাসীরা তাকে কক্ষ থেকে বার করে মন্দিরে নিয়ে গিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতেন। কোনও সন্ন্যাসীর যদি মমিফিকেশন না হয়ে থাকে, তা হলে তাকে কবর দেওয়া হত।

বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের কাছে মমিফায়েড সন্ন্যাসীরা মৃত নন। তারা অমরত্ব লাভ করেছেন এবং এভাবেই ধ্যানে মগ্ন। তবে যারা নিজেদের মমি করার চেষ্টা করেছেন, তাদের মধ্যে খুব কমই সফল হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে যেমন পদ্মাসনে ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে থাকা প্রায় দুশো বছরের পুরনো এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর মমি উদ্ধার হয়েছে। পূর্ব এশিয়ার মঙ্গোলিয়ায় ওই মমির খোঁজ মেলে। তাঁর সারা দেহ পশুর চামড়া দিয়ে আবৃত ছিল।

তবে বৌদ্ধ মূর্তির মধ্যে সন্ন্যাসীর মমির খোঁজ এই প্রথম মিলল বলে জানাচ্ছেন ইতিহাসবিদেরা। হাঙ্গেরির ন্যাশনাল মিউজিয়ামে বহুদিন ধরেই ওই মূর্তি প্রদর্শিত হয়েছে। তারপর ইউরোপের লুক্সেমবার্গ মিউজিয়ামেও কিছুদিন রাখা ছিল মূর্তিটি। তারপর থেকে নেদারল্যান্ডের ড্রেন্টস মিউজিয়ামই তার ঠিকানা। সূত্র: আনন্দবাজার

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer