ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীতে তারিক সাঈদ মামুন ওরফে শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে (৫০) প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে সূত্রাপুরে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ঘটনার বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, দুজন ব্যক্তি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের প্রবেশমুখে এসে ওই ব্যক্তিকে পেছন থেকে গুলি করে। বেশ কয়েকটি গুলি করার পর ওই ব্যক্তি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর তারা মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। গুলি ছোড়া তাদের দুজনেরই মাথায় কালো টুপি ও মুখে মাস্ক ছিল।
নিহত মামুনের খালাতো ভাই হাফিজ বলেন, আমার ভাই তারিক সাঈদ মামুন একটি মামলায় হাজিরা দিতে সিএমএম কোর্টে আসছিল। মুখে মাস্ক ও মাথায় টুপি পরে আসা দুজন লোক মামুনকে গুলি করে পালিয়ে যায়। তবে তারা কারা, কী কারণে তাকে হত্যা করেছে তা আমার জানা নেই।
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলের ওয়ার্ড মাস্টার মহিবুল্লাহ বলেন, আনুমানিক বেলা ১১টার দিকে তাদের হাসপাতালের সামনের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। শব্দ শুনে দৌড়ে এসে দেখি হাসপাতালের মেইন গেটের সামনে ওই ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে অবস্থার অবনতি দেখে তাকে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসপিটালে নিয়ে আসি। পরে সেখানে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কারা গুলি করেছে সেটা তিনি দেখেননি বলেও জানান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিহত মামুনের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানা কাজ করছে।
ঘটনাস্থল থেকে ডিএমপির কোতোয়ালি থানার এসআই মো. ইয়াসিন বলেন, গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে ন্যাশনাল হাসপাতালের সামনে এসে দেখি অজ্ঞাত এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে আছেন। খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করা হয়েছে। আমরা পুরো বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।
এদিকে ফাইজুল হক অপু নামে মামুনের পরিচিত দাবি করা এক ব্যক্তি বলেন, আজ সকালে গুলি করে যাকে হত্যা করা হয়েছে, তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন। অপু বলেন, সকালে মামুনের ফোন থেকে তাকে কল করে ঘটনাটি জানানো হয়। এরপর তিনি কাকরাইল থেকে ঢাকা মেডিকেলে এসে মামুনের পরিচয় শনাক্ত করেন।
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ জোনের উপ- কমিশনার (ডিসি) মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি মানবজমিনকে বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি নিহত মামুন একজন তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার নামে একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে। সেসব মামলায় হাজিরা দিতেই হয়তো কোর্টে গিয়েছিল মামুন। সকাল ১১টার দিকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে মামুনের বুকে গুলি করে অজ্ঞাত কিছু ব্যক্তি। খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করা হয়েছে। যারা গুলি চালিয়েছে আমরা তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।
নিহত মামুনের স্ত্রী বিলকিস আক্তার বলেন, আমাদের ধারণা, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের লোকজন এই হত্যার সঙ্গে জড়িত। এর আগেও ইমনের লোকজন মামুনকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় মামুনকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় একদল সন্ত্রাসী। সেই গুলি লেগেছিল মোটরসাইকেল আরোহী ভুবন চন্দ্র শীলের মাথায়। ২৫ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভুবন চন্দ্র শীল মারা যান। পরে জানা যায় মামুনকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়েছিলেন কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমনের লোকজন। সেই গুলি লেগেছিল ভুবনের মাথায়।




