Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

আশ্বিন ২ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মধু চাষে স্বাবলম্বী আক্কেলপুরের আনোয়ার হোসেন

মওদুদ আহম্মেদ,আক্কেলপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:০৭, ৪ নভেম্বর ২০১৯

প্রিন্ট:

মধু চাষে স্বাবলম্বী আক্কেলপুরের আনোয়ার হোসেন

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

জয়পুরহাট : জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর সদরের বেকার যুবক আনোয়ার হোসেন ছোট ছোট বাক্সের মধ্যে করে বাণিজ্যিক ভাবে মৌচাষ করছেন। বছরে মধু থেকে আয় আসে ৩ লক্ষ টাকা। অসচ্ছল সংসার থেকে সে এখন স্বাবলম্বী যুবক।

আক্কেলপুর পৌর সদরের পুর্ব হাস্তাবসন্তপুর গ্রামের আব্দুল হামিদের ২য় ছেলে আনোয়ার হোসেন। অর্থাভাবে লেখাপড়া করাতে পারেন নাই অস্বচ্ছল বাবা। ছোট কাল থেকে সংসারের হাল ধরতে আনোয়ার হোসেনকে কাঠমিস্ত্রি সহ বিভিন্ন কাজ করতে হয়।

আনোয়ার হোসেন জানান, ২০০৭ সালে তার মাথায় আসে মৌমাছি চাষ করে মধু আহরণ করার। সে নিজে কাঠমিস্ত্রির কাজ জানতেন। সে সুবাদে প্রথমে তৈরী করেন ১০টি মৌ-মাছিদের থাকার আবাস (বাক্স)। রানী মৌমাছি সংগ্রহ করার অভিজ্ঞতা তার ছিল না। তিনি এক বন্ধুর সহযোগিতায় রাণী মৌমাছি সংগ্রহের কলা কৌশল শিখেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেন রাণী মৌমাছি। এর পর তার মৌমাছি পালন ও মধু সংগ্রহ করতে কোন অসুবিধায় পড়তে হয়নি।

এখন দেড়শতাধিক মৌমাছি পালনের বাক্স তৈরী করেছেন। তিনি এখন মৌমাছি পালনকারী ও মধু আনোয়ার হিসেবে এ অঞ্চলে পরিচিতি লাভ করেছেন। মাসিক ৭ হাজার টাকা বেতনে ৪ জন শ্রমিক রেখেছেন। রবিশষ্য মৌসুমে সরিষা ও ফাল্গুন মাসে আমের মুকল থেকে বেশি মধু সংগৃহীত হয়। সে জন্য তিনি যে অঞ্চলে ফুলের ফসল বেশি হয় সে সকল জায়গায় মৌমাছির বাক্সগুলো নিয়ে গিয়ে স্থাপন করেন। এতে মধুও বেড়ে যায়। অপর দিকে ফসলের পরাগায়ন ও ভাল হয়। পরাগায়ন ভাল হলে কৃষকদের ফসলের উৎপাদন বেশি হয়।

বছরে তার উৎপাদিত মুধুর পরিমাণ প্রায় ২টন। প্রতি বাক্স থেকে মাসে ৪ বার মধু সংগ্রহ হয়। প্রতি বারে ২ থেকে ৪ কেজি মধু পাওয়া যায়। পাইকারী বাজারে তিনি প্রতি কেজি মধু ৩শত টাকা কেজি দরে বিক্রয় করে থাকেন। মৌমাছি পালন ও মুধ সংগহ করে তিনি এখন স্বাবলম্বী। এখন তিনি সংগৃহীত মধু বিক্রী করে প্রায় ৭/৮ লক্ষটাকার একটি ফার্নিচারের দোকান করেছেন। তার পিতা মাতা স্ত্রী সন্তানের ভরন পোষন সহ সন্তানকে লেখাপড়ার জন্য স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। মধু বিক্রি থেকে আনোয়ার হোসেনের বাৎসরিক আয় এখন ৩ লক্ষাধিক টাকা।

আনোয়ার হোসেন আরো দুঃখ করে জানালেন এখন কৃষকরা তাদের জমিতে অতিরিক্ত কিটনাশক প্রয়োগ করায় মৌমাছির দল ফুলের রেণু সংগ্রহ করতে গিয়ে বিষের কারণে মরে যায়। এ জন্য দিন দিন মৌমাছির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এতে পরিবেশ সহ প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিপর্যয় ঘটছে। শীতকালে মধু উৎপাদন কিছুটা হ্রাস পায়। এ সময় শীতের তীব্রতায় ও অনেক মৌমাছি মারা যায়। মানব কুল একটু সচেতন হলে সংগৃহীত মধু থেকে জটিল রোগবালাই নাশক ঔষধ সহ উপাদেয় এবং পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার যোগানের ব্যবস্থা আরো বেশি হতো। প্রচন্ড শীত হলে বাক্সগুলো নিরাপদে রাখতে হয়। এখন তার মুধু উৎপাদন দিন দিন কমতে শুরু করেছে।

এর পরও তার মধু উৎপাদন দেখে এলাকার অনেক আগ্রহী যুবক ও সৌখিন ব্যক্তি তার কাছ থেকে মুধু চাষের বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে থাকেন বলে তিনি তার মধু চাষের বিষয়গুলো নিশ্চিত করেন।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator cables
Walton Refrigerator cables