Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

আষাঢ় ২৪ ১৪৩২, বুধবার ০৯ জুলাই ২০২৫

বিশ্ব পানি দিবস : বিলীন হচ্ছে প্রাকৃতিক পানির উৎসস্থল 

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:০৪, ২২ মার্চ ২০১৯

প্রিন্ট:

বিশ্ব পানি দিবস : বিলীন হচ্ছে প্রাকৃতিক পানির উৎসস্থল 

শুক্রবার বিশ্ব পানি দিবস। বিশ্বব্যাপী অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয় হচ্ছে পানি। জীবন ধারণের জন্য পানির কোন বিকল্প নেই। কৃষি, শিল্প, খাদ্য, শক্তি সম্পদ, জনস্বাস্থ্য ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে পানির কোন বিকল্প নেই।

বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পানির উৎসস্থলও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তাদের নানাবিধ কর্মকান্ডে দুষিত হয়ে পড়ছে সুপেয় পানি। তাই নিরাপদ পানির সংস্থানের বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ দিয়েই ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ২২ মার্চকে বিশ্ব পানি দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

১৯৯৩ সালে প্রথম বিশ্ব পানি দবিস পালিত হয়। তারপর থেকে এই দিবস পালনের গুরুত্ব বাড়তে শুরু করে।

তবে কৃষি, হাওর, বনাঞ্চল ও চা বাগান অধ্যূষিত মৌলভীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় বিলীন হচ্ছে প্রাকৃতিক পানির উৎস স্থল। তৃণমূল অঞ্চলেও পানির উৎস পুকুর, কূয়া, নদী, ছড়া, জলাশয় বিলীন হয়ে পড়ছে। দেখা দিচ্ছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। মাটির উপরিস্তরের পানি দিয়ে বোরো চাষাবাদ হলেও এখন বোরো চাষাবাদে মাটির নিচের পানি ব্যবহারে নলকূপ স্থাপন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন এলাকায় গ্রামীণ পরিবেশে শোভা বর্ধনকারী পুকুর সমুহ ভরাট হয়ে পড়ছে। সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে হোক পুকুর, কূয়া, জলাশয়, বিল, নদী, ছড়া ভরাট ও বিলীন হয়ে পড়ছে। মানুষের ব্যবহার্য ছাড়াও পশুপাখির খাবারের জন্য প্রাকৃতিক ও কৃত্রিমভাবে তৈরি পানির উৎস স্থল হারিয়ে যাচ্ছে। এখন কৃষিকাজেও মনোনিবেশ হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি। ইচ্ছেমতো বাড়িঘর, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট তৈরি হচ্ছে। এসব বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠান স্থাপনে অনেক ক্ষেত্রে জলাশয়, পুকুর ভরাট হয়ে পড়ছে। ভবিষ্যৎ ও সময়োপযোগি পরিকল্পনার অভাবে তা নষ্ট হচ্ছে। ফলে প্রকৃতি, পরিবেশের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অপরিকল্পিত পানি সেচের আওতায় বোরো ধান চাষাবাদে বিভিন্ন স্থানে ব্যবহৃত হচ্ছে ভূগর্ভস্থ মাটির পানি। বর্তমানে বাসাবাড়িতে গভীর নলকূপ স্থাপনে জনসাধারণ আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বোরোসহ কৃষি চাষাবাদেও ব্যাপকহারে নলকূপ স্থাপন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে শুধুমাত্র সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলায় ২০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।

২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ৩৫৭টি গভীর নলকূপ বরাদ্ধ করা হয়েছে। অগভীর দু’টি রয়েছে। এরমধ্যে ১৫০টি নলকূপ স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, সরকারিভাবে উপজেলায় প্রতি ৫০ জনে একটি গভীর নলকূপ স্থাপনে আরও একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

সমাজকর্মী তোয়াবুর রহমান, কলেজ শিক্ষক জমশেদ আলী, আহমদ সিরাজ বলেন, মনুষ্যসৃষ্ট কর্মকান্ডে পানির উৎস স্থল ধ্বংস প্রাপ্ত হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য অশনি সংকেত দেখা দেবে। কমলগঞ্জ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা আসাদ উল্ল্যা বলেন, নদী, খাল-বিল ও জলাশয় সমুহ ভরাট হওয়ায় মাটির উপরিস্থ পানির উৎসস্থল কমে যাচ্ছে। তবে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণে সরকারিভাবে উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এর মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী সোহরাব উদ্দীন বলেন, পানির স্তর নিচে নামার জন্য বেশি দায়ী হচ্ছে ইরিগেশনের জন্য ব্যবহৃত নলকূপ। এসব নলকূপ সমূহে এক ঘন্টায় যে পরিমাণ পানি উত্তোলিত হয় সাধারণত বাসা বাড়িতে সেভাবে পানি ব্যবহৃত হয় না। তবে বাসা বাড়িতে আর্সেনিক ও আয়রনের প্রবণতা না থাকলে সচরাচর ব্যবহৃত নলকূপ ব্যবহার করাই শ্রেয়। তিনি আরও বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এজন্য সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।

বহুমাত্রিক.কম