ঢাকা : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শিশুদের প্রতিভা বিকাশে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে অভিভাবক, সামর্থ্যবান ব্যক্তি এবং শিশু কল্যাণে নিবেদিত সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে আরো বেশি শিশুবান্ধব কর্মসূচি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা-২০১৭ এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, শিশুর ব্যক্তিত্ব ও আগ্রহের প্রতি আস্থা রাখতে হবে।
অহেতুক বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে শিশুদের ওপর কিছু চাপিয়ে দিলে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ বিঘ্নিত হতে পারে, তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে যেতে পারে। ইমারসনের ভাষায় ‘শিশুর ব্যক্তিত্বের প্রতি বিশ্বাসী হোন, তার ওপর মাত্রাতিরিক্ত অভিভাবকত্ব করবেন না, শিশুর রাজ্যে অনধিকার প্রবেশও তার মানসিকতার পক্ষে শুভ নয়।’ তাই শিশুর প্রতিভা বিকাশে শিশুবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।
রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ এবং আজকের শিশুরাই নেতৃত্ব দেবে আগামী বিশ্ব। জাতির পিতা বঙ্গন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদেরকে নিয়েই তাঁর স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে চেয়েছিলেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় শিশু আইন প্রণয়ন করেন। দেশের প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণের মধ্য দিয়ে সবার জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করেন তিনি।
দেশ, জাতি ও বিশ্ব পরিমন্ডলে শিশুর অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টি উপলব্ধি করে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ এ সনদের গর্বিত অংশীদার হিসেবে শিশুদের আলোকিত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সরকারের শিশু বিষয়ক কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি পালন করছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
তিনি বলেন, শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশে পুষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও বিনোদন অপরিহার্য। শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশের লক্ষ্যে মৌলিক অধিকার প্রদানের পাশাপাশি দেশপ্রেম ও মানবিক মূল্যবোধের উন্মেষ ঘটাতে হবে।
রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, আমরা চাই শিশুরাই হবে আমাদের স্বপ্নের সত্যিকার উত্তরাধিকার। সুবিধাবঞ্চিত ও স্বল্প সুবিধাপ্রাপ্ত শিশুদের দোরগোড়ায় উন্নত জীবনমানের সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিয়ে সৃষ্টি করতে হবে একটি কল্যাণমুখী সুষম শিশুবান্ধব পরিবেশ। সাম্প্রতিক সময়ে তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তার সবটুকু সুবিধা যাতে শিশুরাও ভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
পরে রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন বিভাগে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার ও পদক বিতরণ করেন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি জাতীয় পর্যায়ে এ প্রতিযোগিতা পরিচালনা করে। এতে ক্রীড়া, সৃজনশীল নৃত্য, সঙ্গীত, অভিনয়, চিত্রাঙ্কন, হামদ, নাত, কবিতা আবৃত্তি, ক্বিরাত, ছড়া গানসহ ৩২টি বিভাগে ২১২জন প্রতিযোগী অংশ নেয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান ও উপণ্যাসিক সেলিনা হোসেন এবং পরিচালক আনজির লিটন বক্তব্য রাখেন।
রাষ্ট্রপতি শিশুদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।