ঢাকা : মিয়ানমারে চলমান রোহিঙ্গা সংকটের মাঝে দেশটি সফরে গেলেন প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতের পরারাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। দু’দিনের (১০-১১ মে) সফরকালে তিনি মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি ইউ উইন মিন্ট এবং স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী অং সান সুচির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মন্ত্রী রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত মানুষের নিরাপদ, দ্রুত এবং স্থায়ী প্রত্যাবাসনের প্রতি জোর দেন।
সুষমা স্বরাজের এই সফরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সীমানা ও সীমান্ত সম্পর্কিত সমস্যা, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়াদি, রাখাইন রাজ্যের উন্নয়ন, বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রত্যাবর্তনসহ, মিয়ানমারে ভারতের উন্নয়ন সহায়তা, চলমান প্রকল্পসমূহ এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।সফরকালে মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইয়াংয়ের সাথেও সাক্ষাৎ করেন বিদেশ মন্ত্রী।
ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশন গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছে। হাই কমিশন জানায়, সুষমা স্বরাজের এই সফরে সাতটি চুক্তি/সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে: (১) স্থল সীমান্ত পারাপার চুক্তি, (২) বাগান শহরে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত প্যাগোডা পুনর্নির্মাণ ও সংরক্ষণ, (৩) যৌথ যুদ্ধবিরতি মনিটরিং কমিটির সহায়তা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক, (৪) মিয়ানমারের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক, (৫) মনিয়ায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন (আইটিসি) বিষয়ক সমঝোতা স্মারক, (৬) থ্যাটন-এ আইটিসি বিষয়ক সমঝোতা স্মারক এবং (৭) আইটিসি মিংইয়ানের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি সম্প্রসারণপত্র বিনিময়।
সূত্র জানায়, স্থল সীমান্ত পারাপার বিষয়ক চুক্তিটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ অর্জন কারণ এর ফলে উভয় দেশের পাসপোর্ট ও ভিসাধারী নাগরিকগণ স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসেবা লাভ, তীর্থযাত্রা ও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে সীমান্ত অতিক্রম করতে সক্ষম হবে।
অপরদিকে, বাগানে প্যাগোডা পুনর্নির্মাণ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক উভয় দেশের মধ্যে স্থায়ী সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রতি গুরুত্বারোপ করে। প্রযুক্তিগত সহায়তা ও সক্ষমতা অর্জন বিষয়ক অন্যান্য সমঝোতা স্মারকগুলো তাদের নিজস্ব উন্নয়ন পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মিয়ানমারকে ভারতের অব্যাহত সহযোগিতা প্রদানের প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী রাখাইন রাজ্যের সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার সরকারকে সাহায্য করতে ভারতের প্রস্তুতি ও অঙ্গীকারের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি রাখাইন উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে রাখাইন সরকারের অব্যাহত প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানান এবং উল্লেখ করেন যে, দ্বিপক্ষীয় রাখাইন রাজ্য উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ভারত ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে যা রাখাইনের রাজ্যের বিভিন্ন বিভাগের জনগণের চাহিদা পূরণ করবে। প্রথম ও প্রধান প্রকল্পটি হচ্ছে রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত জনগণের চাহিদা পূরণে প্রাক-প্রণয়িত গৃহনির্মাণ। মন্ত্রী রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত মানুষের নিরাপদ, দ্রুত এবং স্থায়ী প্রত্যাবাসনের প্রতিও জোর দেন।