ঢাকা : দেশ বরেণ্য ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকরা খেলাধুলার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ‘বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী’ ব্যক্তি হিসেবে শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের অবদানের কথা স্মরণ করেন।-বাসস
শেখ কামালের ৬৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তারা বলে, স্বাধীনতার পর তিনি (শেখ কামাল) দেশের ক্রীড়াঙ্গন ও সংস্কৃতিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি বেঁচে থাকলে এ সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক বেশি উপকৃত হতো বলেও জানান তারা।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সঙ্গে আলাপকালে শেখ কামালের স্কুল জীবনের বন্ধু ও বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের (বিওএ) মহাসচিব শাহেদ রেজা বলেন, ‘এটা ছিল অত্যন্ত দু:খের বিষয় যে তার জীবনের সেরা সময়েই আমরা তাকে হারিয়েছি। তিনি ছিলেন একজন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। তার আধুনিক চিন্তা-ভাবনায় বাংলাদেশ অনেক উপকৃত হতে পারত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এক দল কাপুরুষের হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি নির্মমভাবে নিহত হন।
একাধারে ঢাকা ক্লাবের সভাপতি রেজা বলেন, কামাল অত্যন্ত আবেগ দিয়ে খেলাধুলা উপভোগ করতেন এবং বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে সাহায্যার্থে এগিয়ে আসতেন।
এক সময় কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা এ ক্রীড়া সংগঠক বলেন, ‘অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে আমি আমার বন্ধুকে স্মরণ এবং তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বিএফএফ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ দেশের ক্রীড়াঙ্গনে শেখ কামালকে একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, ‘একটি বনেদি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে শেখ কামাল রাজনীতিতেও জড়িত ছিলেন। তবে ক্রীড়াঙ্গনে যুক্ত হয়ে দেশের যুব সমাজের সামনে তিনি নিজেকে উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।’
হারুন বলেন, বহু মাত্রিক প্রতিভার অধিকারী শেখ কামাল আবাহনী ক্রীড়া চক্র (বর্তমানে আবাহনী লিমিটেড) ও স্পন্দন শিল্প গোষ্ঠির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
সাবেক এ সংসদ সদস্য আরো বলেন, ‘তিনি ক্রীড়া, খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সম-প্রতিভার অধিকারী ছিলেন এবং খেলাধুলার মাধ্যমে দেশের যুব সমাজকে সু-নাগরিক হতে আকৃষ্ট করেছিলেন।
জীবন্ত ফুটবল কিংবদন্তী ও বাফুফে সভাপতি কাজি সালাউদ্দিন বলেন সব কিছু মিলিয়ে শেখ কামাল ছিলেন একজন সর্বোত্তম মানুষ।
তিনি বলেন, ‘দু:খের বিষয় তার সোনালী ক্যারিয়ার পরিস্ফুটিত হওয়ার আগেই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে হত্যা করা হয়। বেঁচে থাকলে শেখ কামাল আজ দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হতেন।’
শেখ কামালের ৬৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ হাসানুজ্জামান বাবলু ফেসবুকে শেখ কামালের সঙ্গে নিজের একটি ছবি পোস্ট করেছেন। যা কামালের হত্যার এক মাস আগে তোলা হয়েছিল।
বাসস’র সঙ্গে আলাপকালে আজ বাবলু বলেন, ‘যথার্থ সম্মানের সঙ্গে আমি কামাল ভাইকে স্মরণ করতে চাই যিনি ছিলেন সত্যিকারের একজন ক্রীড়ানুরাগী, এই ছবিটি তার মৃত্যুর এক মাস আগে তোলা।’
বাবলু জানান, মালয়েশিয়ায় মারদেকা কাপ ফুটবলে অংশগ্রহণের জন্য অনুশীলনে থাকা জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাম্পে প্রতিদিন আসতেন তিনি (শেখ কামাল)।
তিনি বলেন, ‘তার দৃষ্টি ভঙ্গি ফুটবলের ধারণাকেই পরিবর্তন করে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তন শুরু করে। আমি ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের একজন বিশিষ্ঠ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও পরবর্তী মৌসুমে তিনি আমাকে আবাহনীতে যোগ দিতে বলেছিলেন এবং আমি প্রতিশ্রতি দিয়েছিলাম। কিন্তু এক দল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তাদের হাতে নিহত হওয়ায় তার বর্ণাঢ্য জীবনের ইতি ঘটে।’
যুক্তরাষ্ট্রের লস এ্যাঞ্জেলস ক্লাবের চেয়ারম্যান এম জামান টেলিফোনে বাসস’কে বলেন, ‘এই মহান ব্যাক্তিটিকে আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। যেহেতু জীবনের শুরু থেকেই আমি ব্রাদার্স ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত ছিলাম তাই ক্রীড়াঙ্গনে কামাল ভাইয়ের সান্নিধ্য পাওয়ার অনেক সুযোগ আমি পেয়েছি।’
জামান বলেন, মহান নেতা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছেলে হওয়া সত্ত্বেও শেখ কামালের অতি সাধারণ চলাফেরা দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন। ‘কামাল ভাইয়ের মধ্যে কোন প্রকার অহমিকা ছিল না এবং সব সময় খোলা মনে মিশতেন বলে স্মরণ করেন জামান।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামাল ১৯৪৯ সালের ৫ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার হাতে গড়া ক্লাব আবাহনী লিমিটেড এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন শেখ কামালের ৪৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসুচি গ্রহণ করেছে।
যার মধ্যে রয়েছে-দিবসটি উপলক্ষে সকালে আবাহনী ক্লাবে প্রতিষ্ঠিত তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও কোরআন খানি এবং বিকেলে কাঙ্গালি ভোজ ও ক্লাব প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা।
বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবল প্রবর্তনের জন্য চিরদিন বেঁচে থাকবেন শেখ কামাল। এ ছাড়া তিনি আজাদ বয়েজের হয়ে প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট এবং স্পার্সের হয়ে প্রথম শ্রেনীর বাস্কেটবলও খেলতেন। একজন ক্রীড়া সংগঠক ছাড়া কামাল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
কামাল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানির এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও ছিলেন তিনি।