Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

খাদ্যে বিষ : সুস্থ প্রজন্ম গড়ায় নজর দিন

মাহমুদা পারভীন নূপুর, ইউকে করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ১ জানুয়ারি ২০১৭

আপডেট: ০০:৫৬, ৪ জানুয়ারি ২০১৭

প্রিন্ট:

খাদ্যে বিষ : সুস্থ প্রজন্ম গড়ায় নজর দিন

ছবি-সংগৃহীত

লন্ডন : কিছু দিন আগে একজন সন্তানসম্ভবা নারীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, যিনি খুবই অসুস্থ। যেহেতু এই দূরদেশে স্বামী ছাড়া তাকে দেখাশুনা করার কেউ নাই তাই আমি উনাকে বললাম আপনি কেন বাংলাদেশে চলে যাচ্ছেন না?

চট্টগ্রামের বাসিন্দা ওই নারীর বললেন, ‘আমি যেতে চেয়াছিলাম কিন্তু আমার স্বামী দেশে যেতে দিতে চান না-উনি বলেন দেশে খাবারে এত ভেজাল। এই খাবার খেলে গর্ভের শিশুর উপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।’

এই কথা শুনে অনেকেই হয়তো মুখ ভেচকি দিতে পারেন-আমাদের দেশে মানুষের কী বাচ্চা-কাচ্চা হচ্ছে না। অবশ্যই হচ্ছে কিন্ত একজন পিতা হিসেবে সবসময় সে তার সন্তানের ভালোটাই চিন্তা করবে। এই ক্ষেত্রে অপশন থাকলে তো ভালোটাই গ্রহণ করবে। একজন আদর্শ পিতার বৈশিষ্ট-পরিবারের অভিভাবক হিসাবে সকলের ভালমন্দ দেখার।

পিতার দায়িত্ব যেমন একটি পরিবারের ভালমন্দ দেখার তেমনি  দেশের জনগণের ভালমন্দ দেখার দায়িত্ব সেই দেশের সরকারের। কিন্ত আমাদের দেশের সরকার সেই দায়িত্ব কতটুকু পালন করছে-তা বিবেচনার বিষয়।

আমরা সবাই অবগত আছি-৫টি মৌলিক অধিকারের মধ্যে খাদ্য সবার আগে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে না পারলে জনগণের খাদ্য অধিকার লঙ্ঘিত হয়। কিন্তু আমাদের দেশের সরকারের সে দিকে নজর আছে বলে মনে হয় না। এমনকী সরকারের তরফ থেকে আমরা মাঝে মাঝে যে ভেজাল বিরোধী অভিযান দেখতে পাই তা প্রয়োজনের তুলনায় এতই অপ্রতুল যে সার্বিকভাবে তা বড় ধরণের কোনো প্রভাব ফেলে কিনা-সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। আমরা দেখছি, আমাদের দেশের বেশির ভাগ মন্ত্রীদের পরিবার-পরিজন থাকে বিদেশে। নাগরিক হিসাবে একথা বলতেই হয়, সেকারণেই কীে খাবারে ভেজাল নিয়ে নীতিনির্ধারকদের ততোটা মাথা ব্যাথা নেই?

ভেজাল নেই কোথায়? জমিতে বীজ ফেলা থেকে শুরু হয়ে যায় ভেজালের কার্যক্রম। ফ্যাক্টরিগুলোতে মেশানো হচ্ছে ভেজাল। ভেজালেরও ধরণ রয়েছে ভিন্ন। চাল ডাল, ডিম, লবণ, তেল ফল মাছ, মাংস, এমনকি শাকসবজি মানেই এখন ফরমালিন মিশ্রিত তথাকথিত তাজা জিনিস।

এমনকি বাজারে হরেক রকমের আকর্ষণীয় মোড়কে যে মিনারেল ওয়াটার পাওয়া যায়, তাতেও নাকি ভরে দেওয়া হয় ট্যাপের পানি। মাছে-ভাতে বাঙালি। সেই মাছ-ভাত এখন আর নিরাপদ নেই। কেমিক্যালমুক্ত তাজা মাছ এখন পাওয়া আসলেই দুষ্কর। ফলমূল পাকানোর জন্য রাসায়নিক তো আছেই। এর ওপর অধিকাংশ ফলের রস তৈরি হচ্ছে ফল ছাড়াই, একে ফলের রস না বলে কেমিক্যালের রস বলাই বোধ হয় যুক্তিযুক্ত।

বিদেশ থেকে মানসম্মত খাবার আনার নামে মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার এনে নতুন স্টিকার লাগিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে হরহামেশাই। এমনকী বেকারির পণ্যগুলোও ভেজালে ভরা। এসব খাবার খেয়ে মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। যে দেশে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে রোগ বালাই যেন গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতো।

২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩’ বিল পাস হয়। বিলে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। অনেকেই মনে করেন এ-ই যদি হয় শাস্তি, তাহলে খাদ্যে ভেজাল মেশানো কোনো দিনই বন্ধ হবে না।

এক অর্থে এক ধরণের অসাধু ব্যবসায়ীরা মানুষ খুন করছে। আর এ জন্যই অতিদ্রুত নতুন করে আইন প্রণয়ন করে কঠোরতম শাস্তির বিধান করা দরকার । যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনগন সচেতন হলে সেই অন্যায়কে রোধ করা যায় কিন্ত মানুষ এক্ষেত্রে নিরুপায় বাঁচতে হলে তাদেরকে খাবার খেতেই হবে। এখানে যা করণীয় তা সরকারকেই করতে হবে।

পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, এই বিষক্রিয়া প্রজন্মকেও বুদ্ধিহীন, পঙ্গু ও বিকলাঙ্গ হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে।

সবশেষে সরকারের কাছে এইটুকুই বলতে চাই, দেশটা ডিজিটাল হওয়ার থেকে অনেক বেশি জরুরি সুস্থ প্রজন্মের দিকে নজর দেয়া। আমাদের সন্তানেরা যেন সুস্থ ভাবে সুন্দর ভাবে গড়ে উঠতে পারে সে দিকে নজর দেয়া আর সে জন্য ভেজাল মুক্ত খাবার নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নাই।

[email protected] 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer