ছবি: ফরিদুল আহমেদ রুবেল ও ইন্টারনেট
ঢাকা : বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বৈদেশিক কর্মসংস্থান অতি গুরুত্বপূর্ণ। কেবল বেকারত্বমোচনই নয়-প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স সচল রাখছে দেশের অর্থনীতির চাকাকে। স্বাধীন-সার্বভৌম জাতির আত্মপরিচয় তুলে ধরতেও অসামান্য অবদান রাখছেন প্রবাসীরা।
তবে দেশের কল্যাণে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েও নানা ক্ষেত্রে উপেক্ষার শিকার তারা। রিক্রুটিং এজেন্সির চাতুরতার কাছে হার মেনে বৈধ-অবৈধ আইনি ঘেরাটোপে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর জেলের ঘাঁনি টানতে হয় তাদের। কিংবা বিদেশ যাত্রায় সমুদ্রপথে সলিল সমাধিবরণ করতে হয় অনেককে। অচেনা-অজানা জায়গায় গিয়ে অনেক সময় নির্যাতনের শিকার যেমন তাদের হতে হয়, তেমনি রাষ্ট্রের তরফে যে দপ্তরসমূহে গিয়ে সহযোগিতা পাওয়ার কথা সেইসব দূতাবাস-কনস্যুলার অফিসে গিয়েও অনেকের ভাগ্যেই জুটে অবহেলা।
অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপসহ গোটা বিশ্বজুড়ে জঙ্গিবাদের কালো থাবার বিস্তারে অস্থিতিশীল বিশ্ব পরিস্থিতিও হুমকিতে ফেলছে শ্রমবাজারকে। সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া বহির্বিশ্বে বাংলাদেশি কর্মীদের গমনের পরিমাণ বর্তমানে এসে বেড়েছে বহুগুণে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে ১৬০টি দেশে প্রায় ৯০ লাখ বাংলাদেশি বিভন্ন কাজে নিয়োজিত।
সংখ্যা বাড়লেও তাদের চিরায়াত বৈরী অভিজ্ঞতার খুব একটা ব্যত্যয় হয়েছে বলে শোনা যায় না। বৈদেশিক কর্মসংস্থানে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পাড়ি জমাচ্ছেন বিদেশে। সংসার-স্বজনদের আরও সুখে রাখার আশায় বিদেশে পাড়ি জমালেও তাদের অনেকে নিগৃহীত হয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরছেন দেশে।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স নিয়ে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের উচ্চকণ্ঠ হতে দেখা গেলেও শত শত প্রবাসী ভাই-বোনের নিগৃহ-বঞ্চতার কথা থেকে যায় অন্তরালেই।
সাম্প্রতিককালে সরকারি নজরদারি-স্বল্পসংখ্যক প্রশিক্ষণ প্রদানের কার্যক্রম চালু থাকলেও বিপুল পরিমাণ কর্মীরা বিদেশ যাচ্ছেন কোনো রকম অভিজ্ঞতা ছাড়াই। যার ফলে একই পরিশ্রম করে বা তার চেয়েও বেশি করেও অন্য দেশের শ্রমিকরা বেশি মজুরি পাচ্ছেন। ভিটেমাটি বিক্রি করে সংসারে সুখ আনার স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমানো বহু প্রবাসীই কোনো রকম খরচের টাকা না উঠিয়েই হতাশা নিয়ে দেশে ফিরে আসছেন।
এমন বাস্তবাতায় বিশেষায়িত অনলাইন নিউজপোর্টাল বহুমাত্রিক.কম বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধানতম এই খাতের বিদ্যমান সংকট-সম্ভাবনার আদ্যোপন্ত তুলে ধরতে চায়। এ লক্ষ্যে প্রবাসপত্র নামে আমরা একটি নতুন বিভাগ চালু করতে যাচ্ছি। এই বিভাগে আমরা ভাগ্যবিড়ম্বিত প্রবাসীদের জীবনের অন্তরালে চাপা পড়া কষ্টকর অভিজ্ঞতার গল্প যেমন বলতে চাই, তেমনি প্রবাসে গিয়ে নিজের জীবনকে বদলে দেওয়ার সাফল্যের গল্পও জানাতে চাই।
বাংলাদেরে কোনো এক ট্যাক্সি ড্রাইভারের কোনো এক যাত্রীর ফেলে যাওয়া বিপুল মূল্যবান সামগ্রী ফিরিয়ে দেওয়ার মতো অহংকারের গল্প শোনাতে চাই। আবারও আফ্রিকা, ইউরোপ কিংবা আমেরিকার প্রত্যন্ত জনপদে কৃষি উৎপাদনের নতুন বিপ্লবের কথাও তুলে ধরতে চাই। বিশ্বজুড়ে সুনাম কুড়ানো বিজ্ঞানী-গবেষকদের সাফল্যগাঁথাও সবিস্তারে জানাতে চাই আমরা।
সর্বোপরি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোটি বাংলাদেশির মাঝে চমৎকার সেতুবন্ধন তৈরীতে অবদান রাখতে চাই আমরা। প্রবাসপত্র প্রবাসীদের সমস্যা-সম্ভাবনার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরে এনে তা সমাধানের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেও উদ্যোগী হতে চায়। প্রবাসপত্র হতে চায় প্রবাসীদের সত্যিকারের মুখপত্র।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে আহ্বান, দীর্ঘদিন ধরে মনের অন্তরালে চেপে রাখা প্রবাসজীবনের দুঃসহ বেদনার গল্প আমাদের লিখুন। একই সঙ্গে লিখুন আপনার ঘুরে দাঁড়ানো সাফল্যের গল্পও। সবারে জানাই আহ্বান।
বহুমাত্রিক.কম