Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১৭ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪

জিহাদের বাবাকে পুলিশ কর্মকর্তা

‘না বললে র‍্যাবের কাছে দেব’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৩০, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪

আপডেট: ১০:৩২, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪

প্রিন্ট:

‘না বললে র‍্যাবের কাছে দেব’

ঢাকা: গভীর গর্তে শিশুপুত্র পড়ে যাওয়ার পর বাবার কাছ থেকে ‘ভিন্ন’ স্বীকারোক্তি আদায় করতে তাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। সেই শিশুকে ওই গর্ত থেকেই উদ্ধারের পর ছাড়া পান বাবা। সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করে স্বীকারোক্তি আদায়ের বিস্তারিত।  

রাজধানীর শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনীর পরিত্যাক্ত ওয়াসার পানির পাইপে পড়ে যাওয়া শিশু জিহাদ উদ্ধারের কয়েক ঘন্টা পর শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জিহাদের বাবা নাসির উদ্দিন ফকির সরকারি সংস্থার অবহেলার তীব্র ক্ষোভ জানান।

তিনি জানান, শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে ছেলের তথ্য জানতে তাকে ‘ধরে’ নিয়ে যায় পুলিশ। জিহাদকে উদ্ধারে সরকারের সংস্থাগুলোর সমাপ্তির ঘোষণার পর শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে ওই পাইপ থেকেই সাধারণের চেষ্টায় তাকে ওঠানোর পরই পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পান তিনি।

প্রায় ১২ ঘণ্টা পুলিশের হেফাজতে থাকার সময়ের কথা বিস্তারিত তুলে ধরে সাংবাদিকদের নাসির ফকির বলেন, ‘রাত আড়াইটার দিকে আমি যখন জিহাদকে উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন মানুষের কাছে ছোটাছুটি করছিলাম, তখন দুজন পুলিশ আমাকে ওই এলাকায় একটি বাসার নিচতলায় নিয়ে আটকে রাখে। পরে ‘ওসি সাহেব ডাকছেন’ বলে রেলওয়ে কলোনির মাঠের এক পাশে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে তারা আমাকে থানায় নিতে চায়। কিন্তু আমি যেতে চাইনি। আমি ছেলেকে উদ্ধারের স্থানে যেতে চাই। কিন্তু তারা জোর করে গাড়িতে তুলে আমাকে থানায় নিয়ে যায়।’

জিহাদের বাবা জানান, সারা রাত তাঁকে শাহজাহানপুর থানায় ডিউটি অফিসারের কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়।

তিনি অভিযোগ করেন, ‘আজ সকালে এসআইদের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে একজন দারোগা বলেন, “তোমার ছেলে পাইপের মধ্যে পড়েনি। তাকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছ, বলো। না বললে র‍্যাবের কাছে দেব। সেখানে সব সত্য কথা বলবা।” একের পর এক জেরা করতে থাকে পুলিশ। কিন্তু আমি বারবার ছেলেকে উদ্ধারের স্থানে যেতে চাচ্ছিলাম।

নাসির ফকির বলেন, ‘শনিবার বেলা তিনটার দিকে তারা জানায়, আমার ছেলে উদ্ধার হয়েছে। তখন আমি থানা থেকে বেরিয়ে দৌড়ে সেখানে যাই। পরে পুলিশের একটি গাড়িতে করে আমাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পর আবারও পুলিশের গাড়িতে করে কিছু দূর নিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে আমি শাহজাহানপুরে শ্যালকের বাসায় যাই।’

রাতে শ্যালকের বাসায় নাসির ফকির  ছাড়াও জিহাদের মা খাদিজা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ তাঁর স্বামীকে মারধর করেছে। রাতে কোনো খাবার দেয়নি।

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, নাসির ফকিরকে মারধর করা হয়নি। অসুস্থতা ও নিরাপত্তার জন্য এবং তাঁর ছেলের বিষয়ে তথ্যের জন্য থানায় নেওয়া হয়।

২৩ ঘণ্টা পর আজ বেলা তিনটার দিকে সাধারণ মানুষের চেষ্টায় রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির পানির পাম্পের পাইপের ভেতর থেকে শিশু জিহাদকে উদ্ধার করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকাজ স্থগিত ঘোষণা করার পাঁচ মিনিট পরই নাটকীয়ভাবে উদ্ধার হয় জিহাদ। শিশু জিহাদকে মৃত ঘোষণা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক কে এম নিয়াজ মোর্শেদ।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer