রকেট হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয় গুঁড়িয়ে দিয়েছে রুশ বাহিনী। পাশাপাশি ওডেসা বন্দরনগরীর কাছে জ্বালানিভান্ডারেও হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এ ছাড়া কিয়েভকে সহায়তায় পশ্চিমাদের পাঠানো বিশাল অস্ত্রের চালান ধ্বংসের দাবি করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় কূটনৈতিক সমঝোতাই হতে পারে যুদ্ধ বন্ধের একমাত্র পথ–এমনটাই দাবি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের। খবর রয়টার্স।
রুশ সেনাদের রকেট হামলায় বিধ্বস্ত পূর্বাঞ্চলীয় শহর দোনেৎস্ক। রাতভর বোমাবর্ষণের পর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে শহরটির একাধিক আবাসিক ভবন ও স্থাপনাসহ একটি বিশ্ববিদ্যালয়। বন্দরনগরী ওডেসার একটি জ্বালানিভান্ডারে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের মতে, রাশিয়া ২০ মে পূর্ব ইউক্রেনের ওপর আক্রমণ বাড়িয়েছে। কামান, রকেট লঞ্চার ও বিমান ব্যবহার করে দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে আঘাত হানছে, আবাসিক জেলাগুলোয় বাড়িঘর ধ্বংস করেছে এবং বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে।
এ ছাড়া কিয়েভে সহায়তায় পশ্চিমা দেশগুলোর পাঠানো বিশাল একটি অস্ত্রের চালান ধ্বংসের দাবি করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় দোনবাসে ইউক্রেনীয় সেনাদের জন্য এই অস্ত্র পাঠানোর কথা থাকলেও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুরো চালান ধ্বংস করে দেয় পুতিন বাহিনী। নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টায় লুহানস্কেও তীব্র লড়াই চলছে রুশ ও ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু বলেছেন, খুব শিগগিরই লুহানস্ক অঞ্চলটি ইউক্রেনের কবল থেকে পুরোপুরি মুক্ত হবে। তিনি শুক্রবার যুদ্ধের সবশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, লুহানস্ক অঞ্চলের ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ জোরদার হয়েছে। এর ফলে শিগগিরই এ অঞ্চলটি পুরোপুরি মুক্ত হতে যাচ্ছে। রুশ ভাষাভাষী অধ্যুষিত লুহানস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে মস্কো।
প্রসঙ্গত, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে বিশেষ অভিযান শুরু করে রাশিয়া। অবশ্য ২০১৪ সালেই কিয়েভের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল এই দুই অঞ্চলের মানুষ। এরপর থেকেই সেখানে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লড়াই চলছিল। এই দুই অঞ্চলকে একসঙ্গে দোনবাস বলা হয়। এটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ।
শুক্রবার (২০ মে) জি সেভেন গ্রুপের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গ্রুপ অব সেভেন দেশের অর্থমন্ত্রীরা রাশিয়ার সেনা অভিযানে ইউক্রেনকে আর্থিক সহায়তার জন্য প্রায় ২ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এ অবস্থায় সংকট সমাধানে কূটনৈতিক সমঝোতাই হতে পারে যুদ্ধ বন্ধের একমাত্র পথ বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে মস্কো বরাবরই পশ্চিমাদের ঐক্যকে ভয় পায় উল্লেখ করে চলমান পরিস্থিতি সামাল দিতে ইউক্রেনকে সহায়তার হাত বাড়াতে পশ্চিমাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘যে কারো জন্যই জয় খুবই কঠিন হবে। তাই আমরা মনে করি, কূটনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ করাই ভালো। কিয়েভ বরাবরই আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। আলোচনার টেবিলে না বসলে সামনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।’
জেলেনস্কির ডাকে সাড়া দিয়ে কিয়েভে আবারও সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সিনেট অন্তত চার হাজার কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজের অনুমোদন দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।