Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১৯ ১৪৩২, শনিবার ০৩ মে ২০২৫

গাজাবাসীর জন্য ত্রাণ নিয়ে যাওয়া জাহাজে ড্রোন হামলা

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:১২, ২ মে ২০২৫

প্রিন্ট:

গাজাবাসীর জন্য ত্রাণ নিয়ে যাওয়া জাহাজে ড্রোন হামলা

ছবি- সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের জন্য খাবার ও ত্রাণসামগ্রী বহনকারী ফ্রিডম ফ্লোটিলা জাহাজে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ইউরোপের দেশ মাল্টা উপকূলে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় থাকা জাহাজটিতে এই হামলা চালানো হয়।

জাহাজটির তত্ত্বাবধানে থাকা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) ড্রোন হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বেসামরিক জাহাজে বোমা হামলাসহ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য ইসরাইলের কাছে জবাব চেয়েছে সংগঠনটি।

শুক্রবার ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাহাজটি এখন গাজার পথে রয়েছে। এটি অবরুদ্ধ উপত্যকায় ইসরাইলি অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করছে। মাল্টা উপকূল থেকে ১৪ নটিক্যাল মাইল (২৫ কিমি) দূরে থাকার সময় এতে পরপর দুটি ড্রোন হামলা চালানো হয়। এতে জাহাজটির সামনের দিকে আগুন ধরে যায় এবং বড় গর্তের সৃষ্টি হয়।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় ফের হামলা শুরু করে ইসরাইল। এর সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই গাজায় সব ধরনের ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর গত প্রায় দুই মাস ধরে সেই অবরোধ অব্যাহত রয়েছে। ফলে গাজার খাদ্য মজুত শেষ হয়ে এখন দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। 

বিবৃতিতে হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘আমাদের জাহাজটি সম্পূর্ণ বেসামরিক ও নিরস্ত্র ছিল। গাজার অসহায় ফিলিস্তিনিদের জন্য খাবার ও ত্রাণসামগ্রী রয়েছে তাতে। কয়েকটি সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এ ধরনের হামলায় তাদের প্রাণহানি ঘটতে পারত।’ 

বিবৃতিতে হামলার জন্য ইসরাইলকে সরাসরি অভিযুক্ত করা না হলেও ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করে জবাবদিহি চাওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতদের তলব করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জবাব দিতে হবে, যার মধ্যে চলমান অবরোধ ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় আমাদের বেসামরিক জাহাজে বোমা হামলার বিষয়টিও রয়েছে।’

এ ঘটনায় মাল্টা সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাহাজের মূল ইঞ্জিন ও জেনারেটরে আঘাত লেগেছে। জাহাজটিতে আগুন ধরে গিয়েছিল, তবে মাল্টার নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড বাহিনীর সহায়তায় রাত ১টা ২৮ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

আরও বলা হয়, জাহাজটিতে মোট ১২ জন ক্রু ও ৪ জন বেসামরিক যাত্রী ছিলেন। তাদের সবাই অক্ষত রয়েছেন। রাত ২ টা ১৩ মিনিটে তাদের মাল্টার বন্দরে নিয়ে আসা হয়েছে। জাহাজটি এখনও আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় রয়েছে এবং এটাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। 

হামলার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে ইসরাইলের সেনাবাহিনী ও মন্ত্রিসভার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বলে খবরে বলা হয়েছে। 

গাজা সংঘাত শুরু হওয়ার পর গত বছরের এপ্রিলে তুরস্ক থেকে ত্রাণবাহী জাহাজের একটি বহর পাঠানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতি শেষে সম্প্রতি যাত্রা শুরু করে ফ্রিডম ফ্লোটিলা।

ফ্রিডম ফ্লোটিলার এই আয়োজেন নেতৃত্ব দিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন সেনা ও সাবেক কূটনীতিক অ্যান রাইট। ৩০টি দেশের মানুষের সমন্বয়ে গঠিত ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের স্টিয়ারিং কমিটিরও একজন সক্রিয় সদস্য অ্যান রাইট।

তিনি জানান, ফ্রিডম ফ্লোটিলা নিরস্ত্র বেসামরিক লোকদের নিয়ে গঠিত যারা গাজার ইসরাইলি অবরোধকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের অনুরোধ অনুযায়ী মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ মিশন পরিচালনা করছে। কিন্তু জাহাজটি যাতে গাজায় পৌঁছাতে না পারে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।

তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগে ২০১০ সালের মে মাসে তুর্কি জাহাজ এমভি মাভি মারমারার নেতৃত্বে ফ্রিডম ফ্লোটিলা জাহাজ বহর ইসরাইলের অবরোধ ভেঙে গাজায় প্রবেশের চেষ্টা করে। সেবার ৩০টিরও বেশি দেশ থেকে ৬০০ জনেরও বেশি সেচ্ছাসেবী ওই বহরে যোগ দেন।

কিন্তু দখলদার ইসরাইলি সেনাবাহিনী সমস্ত আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে আন্তর্জাতিক জলসীমায় থাকা অবস্থাতেই এমভি মাভি মারমারা জাহাজে হামলা চালায়। ন্যাক্কারজনক সেই হামলায় জাহাজটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিহত হয় ১০ জন সেচ্ছাসেবী। এ ঘটনায় তুরস্ক ও ইসরাইলের মধ্যকার সম্পর্কে ফাটল তৈরি হয়।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer