
গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার গিলারচালা গ্রামে ধর্ষণের পর মা হওয়া কিশোরী ও তার শিশু সন্তানের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। প্রথমবার ধর্ষণে কিশোরীর শিশু জন্ম হওয়ার পর ফের যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে কিশোরী মা। ধর্ষণের পাশাপাশি শিশু সন্তানটির উপরও করা হয়েছে শারীরিক নির্যাতন। এঘটনায় মঙ্গলবার (৭ মে) কিশোরী মা ও তার শিশু শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন।
কিশোরী ও তার স্বজনদের ভাষ্যমতে, শ্রীপুর পৌরসভার গিলারচালা গ্রামের হাজী আব্দুল মান্নানের বাড়িতে তারা কিশোরীকে নিয়ে সপরিবারে ভাড়া থাকতেন। কিশোরীটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। গত বছর কিশোরীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌণ নিপিড়ন করেন বাড়ির মালিকের ছেলে জহিরুল ইসলাম। এতে সে অন্ত:সত্বা হয়ে পরে। এ ঘটনা স্থানীয়ভাবে প্রকাশ পেলে কিশোরীর পিতা বাদী হয়ে জহিরুলকে অভিযুক্ত করে গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। গ্রেপ্তার হন অভিযুক্ত জহিরুল। এক পর্যায়ে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে অন্ত:সত্বা কিশোরী এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
অপরদিকে, জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে আসেন জহিরুল। সামাজিকভাবে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে থাকা এই পরিবারের অসহায়ত্বকে কেন্দ্র করে আবারও শুরু হয় নানা ধরনের নির্যাতন। এবার মামলা প্রত্যাহারের চাপ, সাথে আসামীদের হয়ে শ্রীপুর পৌরসভার স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিলান উদ্দিন দুলালের আপোষের প্রস্তাব। কিন্তু সবকিছু নাকচ করে কিশোরী যখন তার সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দাবীতে অনড় তখনই আবার নেমে আসে তার ওপর অত্যাচার। গত মঙ্গলবার (৭ মে) সকালে কিশোরীর বাবা ও মা কাজের জন্য চলে গেলে ফের যৌন হয়রানীর শিকার হন কিশোরী এই মা। এবার অভিযুক্ত সেজান (১৯) নামের এক কিশোর। পরে কিশোরীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান।
কিশোরীর পিতা অভিযোগ করেন, তাদের সামাজিক অবস্থান নেই। তাদের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানায়। একটু স্বচ্ছল থাকার আশায় তারা শ্রীপুরে এসে কাজ নিয়েছিলেন। গত প্রায় ১বছর ধরে আমাদের ওপর যে ধরনের নির্যাতন হচ্ছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রতিবাদ স্বরুপ আমরা জন্ম নেওয়া শিশুটির নাম রেখেছি অত্যাচার। বিচার পাই আর না পাই শিশুটির নামের মাধ্যমে আমরা অত্যাচারের কাহিনী শোনাতে চাই সবাইকে। সবাইকে বুঝাতে চাই গরীবের জন্য আইনের ভাষা অন্যরকম। তার দাবি সন্তানের পিতৃ পরিচয় আড়াল করতে নানা ধরনের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সাদি জানান, যৌন নিপীড়নের শিকার কিশোরীর পিতা বাদি হয়ে প্রথমবার বাড়ীর মালিক হাজী আব্দুল মান্নানের ছেলে জহিরুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করে। পরে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। তবে জহিরুলের ডিএনএ টেস্ট করে আমরা অভিযোগের কোনো সত্যতা পাইনি।
তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার সকালে (৭ মে) কিশোরীর বাবা-মা কাজে চলে গেলে সেজান নামে এক কিশোর ঘরে প্রবেশ করে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। সেজান নেত্রকোনা সদর উপজেলার গাজারকান্দি গ্রামের হাবুলের ছেলে। ওইদিন রাতে কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে সেজানকে অভিযুক্ত করে শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করে। সেজানেরও ডিএনএ টেস্ট করার প্রক্রিয়া চলছে। সে হাজী আব্দুল মান্নানের বাড়ির ভাড়াটিয়া।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঈনুল হক খান জানান, গত মঙ্গলবার (৭ মে) কিশোরী ও তার শিশু সন্তানকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলে রাতেই তারা বাড়ি ফিরে যায়।
শ্রীপুর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিলান উদ্দিন দুলাল জানান, এমন ঘটনা সামাজিকভাবে আপোষ মিমাংসার যে অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তা সঠিক নয়। এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি নিজেও এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করছি।
বহুমাত্রিক.কম