Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৪ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

পৃথিবীর একাকী এক তিমি ‘ফিফটি টু’

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৪৬, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

প্রিন্ট:

পৃথিবীর একাকী এক তিমি ‘ফিফটি টু’

সমুদ্রের তলদেশে নানা রকমের প্রাণীর আনাগোনা। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে চর্চা হয় যে প্রাণীটি নিয়ে সেটা হলো তিমি। পৃথিবীতে কয়েকশ’ রকমের তিমির বসবাস। একেক তিমির ধরন একেক রকম। তবে পানির নিচে নিস্তব্ধতার মাঝেও তিমিদের শব্দ ধারণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।


তিমিরা মূলত ১০-৪০ হার্জ সীমার শব্দ উৎপাদন করে থাকে। কিন্তু এমন এক তিমির শব্দ পাওয়া গিয়েছিল যার কম্পাংক ছিল ৫২ হার্জ। বলতে গেলে, অনেক অনেক বেশি। কিন্তু এটা আসলেই কোনো তিমি, তা নিয়ে তৈরি হয় সংশয় নাকি আসলেই কোনো তিমিই না, এ রকম নানা প্রশ্নের সমাধান আজও মেলেনি।

১৯৮৯ সালের ডিসেম্বর। সে সময় সোভিয়েতের কিছু সাবমেরিন পর্যবেক্ষণে কিছু স্থাপনা তৈরি করা হয়, আর এসব স্থাপনায় বসানো ছিলো হাইড্রোফোন যন্ত্র, যা দিয়ে সমুদ্রের গভীরে সূক্ষ্মতম শব্দ শনাক্ত করা যেত। সেই যন্ত্রগুলো সাধারণ তিমির শব্দ ট্র্যাক করতেও সক্ষম হয়েছিল, যাদের কম্পন ১০-৪০ হার্জ। সে সময় একজন গবেষক বিল ওয়াটকিনসন যিনি প্রথম ৫২ হার্জের কম্পন শুনতে পান, এবং পরবর্তীতে সেই শব্দের খোঁজে নামেন।

দীর্ঘদিন ওয়াটকিনসন এই শব্দের উৎসের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন। পরে তিনি বুঝতে পারলেন নীল ও ফিন তিমি ছাড়াও অন্য কোনো তিমি অথবা কিছু একটা আছে যার শব্দ হচ্ছে। হতে পারে সেই তিমি একাকী কোনো তিমি।

এভাবে গবেষণার এক যুগ পার হয়ে যায়। ২০০৪ সালে তার মৃত্যুর পর তার সহগবেষক ম্যারি অ্যান ডাহের ScienceDirect জার্নালে প্রকাশ করেন এ সম্পর্কিত একটি গবেষণাপত্র। প্রকাশের পর তা আলোড়ন তোলে মেরিন লাইফে। সবাই ধরে নেয় এটি এমন একটি তিমি যে সমুদ্রে একা ভ্রমণ করছে। শব্দ-সীমার ভিন্নতার কারণে তার ডাক শুনতে পারবে এমন কোনো তিমি সমুদ্রে নেই।

ফলে এই ব্যাপারটি পরিচিত হয়ে যায় পৃথিবীর নিঃসঙ্গতম তিমির ডাক হিসেবে। শব্দের কম্পাংক ৫২ হার্জ হওয়ায় কেউ কেউ এটিকে 52-hertz whale হিসেবেও আখ্যায়িত করেন। যদি ধরে নেওয়া হয়, শব্দের উৎসটি প্রকৃতপক্ষেই তিমির ছিল, তবে বলা যায় সেটি কোনো বিশেষ প্রজাতির তিমি। এ প্রজাতি ওই অঞ্চলে আর নেই। কারণ কেবলমাত্র একটি উৎস হতেই ৫২ হার্জের শব্দটি আসছিল।

বিল ওয়াটকিনসনের মৃত্যুর পর এই গবেষণা খানিকটা ধীর হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ক্যালিফোর্নিয়ার Scripps Institution of Oceanograph-র প্রফেসর জন হিলডেব্র্যান্ড ২০১০ সালে পুনরায় এটি নিয়ে গবেষণা করেন। তার একজন সহকারী শব্দের উৎসটিকে পুনরায় ট্র্যাক করেন। তিনি দেখেন এই শব্দ আরো অন্য এক অঞ্চল থেকেও আসছে।

তার মানে এটা তিমি তা যে প্রজাতিই হোক না কেনো, সে একা নয়, আরো আছে। কিন্তু গবেষণার তো শেষ নেই। ৫২ হার্জের তিমিটিকে নিয়ে সম্প্রতি The Loneliest Whale নামে একটি ডকুমেন্টারি মুক্তি পেয়েছে। তবে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি, আসলেই ৫২ হার্জের শব্দটি কোনো তিমি থেকে এসেছে কিনা।

যদি আসেও, সমুদ্রে এই প্রজাতির তিমি একটিই কিনা সে প্রশ্নের উত্তরও মেলেনি। কোনো একসময় হয়তো ভেদ হতে পারে ফিফটি টু রহস্য। তবে যত দিন আমরা ৫২ রহস্যের সমাধান না পাই তত দিন এই তিমি আমাদের কাছে একাকী তিমি হয়েই বেঁচে থাকুক।

 

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer