
ফাইল ছবি
মিরপুরের রূপনগরের শিয়ালবাড়ী এলাকার কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে থাকা ১৬ লাশের মধ্যে ১০ জনের লাশ শনাক্ত হয়েছে। মুখের অবয়ব, জামাকাপড় ও অন্যান্য আলামত দেখে লাশগুলো শনাক্ত করা হয়। আর এসব লাশ বুঝে পেতে মর্গের সামনে ভিড় করছেন নিহতদের স্বজনরা। কেউ আবার ছুটছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে।
সরজমিনে বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের মর্গের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বাবা, চাচা, বড় ভাই, নিকট আত্মীয় দাবি করে অনেকই স্বজনের লাশ খুঁজতে আসছেন। কেউ আবার লাশ শনাক্তে রাত থেকে অপেক্ষায় রয়েছেন। ঢাকা মেডিকেলে শনাক্ত হওয়া লাশের মধ্যে ২০ বছর বয়সি এক যুবকের লাশকে নিজের ভাতিজা দাবি করা মিরপুর আবাসিকের ১২ নম্বর রোডের বাসিন্দা মো. সুলতান একজনের লাশ দেখিয়ে মানবজমিনকে বলেন, ওটা আমার ভাইয়ের ছেলে জয়ের লাশ। সে আমার কাছেই থাকতো। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা। তারা ৪ ভাই-বোন। জয় আগে গাজীপুরের একটা গার্মেন্টসে কাজ করলেও গত ১০ দিন আগে আমার কাছে মিরপুরে আসে। গতকাল যেই গার্মেন্টসে আগুন লাগে সে ওখানেই বর্তমানে কাজ করতো। মঙ্গলবার আগুন লাগার সময়ও ওর সঙ্গে আমাদের কথা হয়। বলে, আমরা কেউ বের হতে পারছি না। তারপর আর খোঁজ পাইনি। পরে মেডিকেলে লাশের ভেতর ওর জামা-কাপড় দেখে টের পাই ওটা আমাদেরই জয়। অশ্রুশিক্ত হয়ে তিনি বলেন, আমার ছোট্ট ভাতিজা যাকে কোলে-পিঠে বড় করেছি। সংসারে হাল ধরার জন্য ওকে মিরপুর নিয়ে আসছিলাম, আমার কাছে রেখেছিলাম, আজ তার লাশ নিতে মর্গে ঘুরে বেড়ানো লাগছে আমার। আমি ওর বাবা-মাকে কী জবাব দেব!
বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে ফারজানা নামে আরেক লাশ শনাক্তকারি মো. রতন মানবজমিনকে বলেন, আমার মেয়ের বয়স অনেক কম। কত স্বপ্ন, কত আশা নিয়ে গত ছয় মাস আগে ফারজানা ওই গার্মেন্টসে চাকরিতে ঢোকে। আজ সব শেষ। ফারজানার লাশ আমার সামনে। নিজের মেয়ের লাশ শনাক্তের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার মেয়ে মারা গেলেও তার পুরো শরীর পুড়ে যায়নি। হাত, মুখমন্ডলসহ শরীরের আরো অনেক অঙ্গ এখনো ভালো আছে। তাকে খালি চোখে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে এটা আমার মেয়ে ফারজানার লাশ। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া প্রশাসন কোনোভাবেই লাশ হস্তান্তর করছে না। তাই গতরাত থেকে অপেক্ষায় আছি কখন মেয়ের লাশ সঙ্গে নিয়ে ফিরব।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিএমপির রূপনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. লস্কর বলেন, মঙ্গলবার মিরপুরের রূপনগরের শিয়ালবাড়ী এলাকার কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মেডিকেলে থাকা ১৬ লাশের মধ্যে ১০ জনের লাশ শনাক্ত হয়েছে। স্বজনদের দেয়া নিহতদের গায়ে থাকা জামা-কাপড় ও অন্যান্য আলামতের বিবরণে ওই লাশগুলো শনাক্ত করা হয়েছে। তবে প্রত্যেকটা লাশের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরেই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বর্তমানে মিরপুরের ক্যামিকেলের গোডাউনে লাগা আগুনে নিহত ১৬ লাশের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগের মর্গে ৭টি লাশ রয়েছে। বাকি ৯ টি লাশ রয়েছে ঢামেকের মূল মর্গে। এদিকে লাশগুলোর ডিএনএ টেস্ট করার জন্য স্যাম্পল নিতে সকালেই ঢাকা মেডিকেলে এসেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ৭ জনের একটি দল।