Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১৬ ১৪৩১, মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪

ধারাবাহিক উপন্যাস: রোদেলা বিকেল (দ্বিতীয় পর্ব)

সৈয়দ মোকছেদুল আলম

প্রকাশিত: ০২:৪৪, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬

আপডেট: ০৪:৪২, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

প্রিন্ট:

ধারাবাহিক উপন্যাস: রোদেলা বিকেল (দ্বিতীয় পর্ব)

ছবি: মো. ফখরুল ইসলাম

(পূর্ব প্রকাশের পর)

দুই.

হঠাৎ দেখা হয়ে যায় একদিন আলতাফ সুবেদারের সাথে। বাসার অদূরে স্টেশনে বাবার টিকিট ঘরে। মন চাইলেই ঢেঁড়স দৌড়ে তিনটা রেল লাইন পার হয়ে বাবার কাছে ছুটে। টিকেট ঘরে কাঠের লম্বা টেবিলের উপর একটা এক টাকার মুদ্রা পেরেক দিয়ে গাঁথা। ঢেঁড়স মুদ্রাটা কুড়িয়ে নিতে অনেক চেষ্টা করেছে। যখনি আসে খোঁচাখুঁচি করে টাকাটা ওঠাতে চেষ্টা করে। কাজ হয় না। মাঝখানে ফুটো করে খুব শক্তপোক্তভাবে পেরেক মারা। কাজটা যে কে করেছে? ঢেঁড়স নিতে পারে এমনভাবে করতে কী অসুবিধা ছিল? চারআনা বা আটআনার বেশি কোনো দিন বাবা দেয় না। ইশ্! টেবিলে গোটা এক টাকা শুধু শুধু পড়ে আছে। পেলে অনেকগুলো লজেন্স আইসক্রিম-বিস্কুট খাওয়া যেতো।

বাবা খুব ব্যস্ত। টেলিফোনে গলা ফাটিয়ে ‘হ্যালো হ্যালো টঙ্গী’ বলছেন। কয়েকবার চেষ্টা করে খ-টা-স করে ফোন রাখেন। টেলিগ্রাফের সাহায্য নেন। টরেটক্কা টরেটক্কা। টক্কাটরে টক্কাটরে। টরেটরে টক্কা। টরেটরে টক্কা। এভাবে চলতে থাকে। নানাভাবে কেবল টরেটক্কা সংকেত দিয়ে ভাব বিনিময়। বাবা থামেন। উত্তর আসে। টিকি টিকি। টিকি টিকি। টিক টিকি টিকি। চলতে থাকে এভাবে। এবার বাবা পয়েন্টসম্যান মান্নান কাকাকে গলা ফাটিয়ে ডাকেন। মান্নান কাকা ছুটে এসে জিজ্ঞেস করেন, খবর হইছে ছোট বাবু?  বাবা বলেন, সেভেন আপ টঙ্গী ছাড়ছে?

মান্নান কাকা লোহার রড দিয়ে ঝুলন্ত রেল লাইনের বড় খণ্ড পিটিয়ে সবাইকে জানান দেন এ খবরটা। ঠং ঠং। টুন টুন টুন টুন টুন টুন। ঠং ঠং।

প্রথমে দুইবার ঠং। পরে ঘন ঘন টুনটুন অনেকবার। শেষে আবার দুইবার ঠং ঠং। মানে সেভেন আপ ট্রেন টঙ্গী স্টেশন ছেড়ে ধীরাশ্রমের দিকে।

রেলগাড়ি ঝমঝম, আইতে যাইতে কতক্ষণ। বাবা খসরু চৌধুরী আবার টেলিফোনে উচ্চস্বরে কথা বলেন। হ্যালো ধীরাশ্রম, এএসএম জয়দেবপুর স্পিকিং। ধীরাশ্রম ইনিং সেভেন থারটি সিক্স। ঢেঁড়স বুঝে না বাবা কেন ফোনে এত জোরে কথা বলেন। প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে বললেই হয়। ওইতো ধীরশ্রম ওইখানে।
ভাবনায় ছেদ পড়ে। মুছুয়া আলতাফ এসে বাবাকে বলেন, বাত চিত কেয়া হ্যায় মাস্টার সাব? ইয়ে লাড়কা কোন হ্যায়?

বাবা অর্থপূর্ণভাবে একটু হাসেন কেবল। উল্টো জিজ্ঞেস করেন, আপকা হাল আচ্ছা হ্যায় সুবেদার সাব? উত্তর দেন আলতাফ-উপর ওয়ালাকো মর্জিসে বহুৎ আচ্ছা মাস্টার সাব ! নাম ক্যায়া হ্যায় লাড়কা?

ঢেঁড়স ভীত আড় চোখে তাকায়। গোঁফের আগা দুই হাতের আঙুলে টিপে মোচড়ায় আলতাফ। মুচকি হেসে ঢেঁড়সকে অভয় দেওয়ার চেষ্টা করেন। ঘনিষ্ঠ হবার এ ইঙ্গিতে ঢেঁড়স বাবার পেছনে গিয়ে লুকায়। দুই টাকা দিয়ে আলতাফ একগাদা বিস্কুট ও চকলেট আনিয়ে জোর করে ঢেঁড়সের হাতে গুঁজে দেয়। ঢেঁড়স বুঝতে পারে না নেবে কি না। খারাপ লোকের জিনিস। বুঝতে পারে না এই খারাপ লোকটা মুচ্ছুর বাবার মত ভাল না হয়েও আদর করে তাকে এত মজার মজার খাবার দিচ্ছে কী মতলবে?

করম আলী সুবেদার এর উল্টো। ইয়া লম্বা, সুঠাম দেহ। ক্লিন সেভ। উজির মশাইয়ের মত বাঁকানো গোঁফ ঠেকেছে গিয়ে মোটা জুলফিতে। লোক ঠ্যাঙিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার দুর্নাম আছে। গোটা জয়দেবপুর চষে বেড়ায়। বাংলা মদের দোকানে যখন তখন হানা দেওয়া স্বভাব। কুৎসিত গালিগালাজ করেন। কেউ একবার করম আলীর বিরুদ্ধে উর্ধ্বতনের কাছে নালিশ করেছিল।

মেজর সাহেব করম আলীকে ডেকে উর্দুতে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি নাকি সোলজারদের অকারণে আজেবাজে গালাগাল করো। করম আলী প্রচণ্ড খেপে গিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেন, কোন মাদারচোদ আপনাকে একথা বলেছে স্যার? অফিসার বললেন, ঠিক আছে তুমি এখন যাও, বুঝতে পেরেছি। (চলবে)

প্রথম পর্ব

[email protected]  

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer