ড. আতিউর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহ, ব্যবহার এবং পরিশোধের রেকর্ড মন্দ না হলেও চলমান অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের আলোকে এই বিষয়টি নিয়ে আরো গভীরভাবে ভাবার সুযোগ রয়েছে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে সাম্প্রতিক সময় তো বটেই, সম্ভবত স্বাধীনতা-উত্তর পাঁচ দশকের মধ্যেই সবচেয়ে বড় সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকবেলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। বিশেষ করে বৈদেশিক অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থার কারণেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
প্রথমে করোনাজনিত সংকট, আর তারপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে এই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি তৈরি হয়। পাশাপাশি আমাদের অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত সংকটগুলোও এই সময়ে এসে প্রকটভাবে দৃশ্যমান হয়েছে। আর হালে রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে সমাজে যে তীব্র অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তার নেতিবাচক প্রভাব বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপর পড়ছে। অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি যেন এই চাপ আর বইতেই পারছে না।
অন্যদিকে আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিও খাবি খাচ্ছে। বিশেষ করে সরবরাহ চেইন বিপর্যস্ত হওয়ায় পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষই অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। দূরপাল্লার ট্রাক ও বাসের বড় অংশ রাস্তায় এখন অনিয়মিত। এর প্রভাব অর্থনীতিতে পড়তে বাধ্য। বিশেষ করে জিনিসপত্রের দামের ওপর এর কুপ্রভাব প্রকটভাবেই পড়তে শুরু করেছে। নিঃসন্দেহে মূ্ল্যস্ফীতিই এখন জনসাধারণকে সবেচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে। সেটিই স্বাভাবিক। তবে মূল্যস্ফীতির মতো সরাসরি দৃশ্যমান চ্যালেঞ্জের সঙ্গে সঙ্গে বৈদেশিক ঋণের প্রবাহ আর সেই দায় শোধের মতো দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েও ভাবছেন সচেতন ও সংবেদনশীল অংশীজনরা।
এটা সত্যি যে সাম্প্রতিক অর্থবছরগুলোতে আমাদের বৈদেশিক দায় শোধের পরিমাণ প্রতিবছরই উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়ছে। পাঁচ বছর আগে (অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে) আমরা বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল বাবদ বছরে ১.৫৯ বিলিয়ন ডলার শোধ করেছি। সেই পরিমাণ প্রতিবছর বেড়ে বেড়ে সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ২.৬৭ বিলিয়ন ডলারে (অর্থাৎ ৬৮ শতাংশ বেড়েছে)। সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ চলতি অর্থবছরে এই পরিমাণ ৩.৫৬ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে বলে প্রক্ষেপণ করেছে। পরের দুই বছরে বৈদেশিক ঋণের দায় বাবদ যথাক্রমে ৪.২১ বিলিয়ন ডলার এবং ৪.৭২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। বৈদেশিক ঋণের দায় বাবদ ব্যয় এভাবে বৃদ্ধি পাওয়াটা কি আসলেই দুর্ভাবনার বিষয়? সত্যি হলো আমাদের বৈদেশিক ঋণগুলোরই সহজ শর্তের অল্প সুদের এবং দীর্ঘ গ্রেস পিরিয়ডের হলেও এর মধ্যে অনেকগুলো প্রকল্পের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়েছে।
শিগগিরই আরো বেশ কয়েকটি ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হবে। ফলে দায় শোধ বাবদ ব্যয়ের এমন বৃদ্ধি আসলে অপ্রত্যাশিত নয়। মনে রাখা চাই গত ১০-১৫ বছরে আমাদের অর্থনীতি যে ‘কোয়ান্টাম জাম্প’ করেছে তার পেছনে এই ঋণগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। আর অর্থনীতির এই অগ্রযাত্রার সুবাদে আমাদের মাথাপিছু জিডিপিও বেড়েছে। আমরা নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। অচিরেই স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশও হতে যাচ্ছি। বিশেষ করে পরিবহন ও সংযোগ সম্পর্কিত অবকাঠামোর ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আগের চেয়ে অনেক বেশি সচল ও সহিষ্ণু হতে পেরেছে। ফলে আমাদের ঋণের দায় শোধের সক্ষমতাও তো বেড়েছে। আর এসব অবকাঠামোর সঙ্গে প্রয়োজনীয় ফরওয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড সংযোগগুলো স্থাপন করা গেলে বাংলাদেশে স্বদেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আরো বাড়বে। তখন ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আরো বাড়বে।
এক্ষেত্রে প্রশ্ন আসবে বার্ষিক ঋণের দায় শোধের যে টার্গেট আমাদের সামনে রয়েছে আমাদের আয় বৃদ্ধির হারটি তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না? এর উত্তর পাওয়া যাবে আমাদের বার্ষিক জিডিপির সঙ্গে ঋণের তুলনা থেকে। ২০১৯ সালে আমাদের জিডিপির তুলনায় ঋণের পরিমাণ (অর্থাৎ বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনাঋণ-জিডিপি অনুপাত) ছিল ৩৫.৮ শতাংশ। ২০২০ ও ২০২১-এ এই অনুপাত কমে ৩২ শতাংশের আশপাশে থাকলেও ২০২২-এ এসে ৩৩.৮ শতাংশে উঠেছে। আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ‘ফিচ রেটিং’-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনের প্রক্ষেপণ অনুসারে এ বছর শেষে এই অনুপাত ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে (৩৫.৬ শতাংশ হবে)। পরের দুই বছরে এই অনুপাত যথাক্রমে ৩৬.৪ এবং ৩৭.২ হবে বলে ফিচ প্রক্ষেপণ করছে। তাদের এই প্রক্ষেপণ আর বাংলাদেশ সরকারের প্রক্ষেপণ প্রায় কাছাকাছি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের ঋণ-জিডিপি অনুপাত যথাক্রমে ৩৫.৬ শতাংশ এবং ৩৭.৬ শতাংশ হবে বলা হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈদেশিক দায় শোধ বাবদ যেমন আমাদের ব্যয় বাড়াতে হয়েছে, অন্যদিকে জিডিপির তুলনায় ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। তবু একে এখনই বড় দুর্ভাবনার কারণ বলে মনে হয় না। কেননা এখন পর্যন্ত ঋণের দায় শোধের ক্ষেত্রে আমাদের প্রশংসনীয় ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। বাংলাদেশ কখনোই ঋণের দায় শোধে ব্যর্থ হয়নি। এমনকি কোনো ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় বাড়ানোর আবেদনও কখনো করেনি। সর্বোপরি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ৪০ শতাংশের নিচে যেকোনো ঋণ-জিডিপি অনুপাতই গ্রহণীয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের ঋণ-জিডিপি অনুপাতের বৃদ্ধি যে আসলেই খুব বেশি নয়, তা অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলেই বোঝা যায়। রেটিং এজেন্সি ফিচের উল্লিখিত প্রতিবেদনে এ বছর শেষে চীনের ঋণ-জিডিপি অনুপাত ৫৪.৩ শতাংশে এবং ভারতের ৮৩.৫ শতাংশে গিয়ে ঠেকবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের ঋণ-জিডিপি অনুপাত ৩৫.৬ শতাংশ হলে তা হবে পুরো এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে সর্বনিম্ন।
বলা চলে জিডিপির অংশ হিসেবে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ভূ-রাজনৈতিক ও নিজস্ব সামষ্টিক অর্থনৈতিক বাস্তবতার কারণে কিছুটা বাড়লেও আমাদের ঋণের পরিমাণ এখনো বিপৎসীমার বেশ খানিকটা নিচেই আছে। আর বিদেশি ঋণ-জিডিপির অনুপাত যেহেতু এখনো ২০ শতাংশের নিচেই আছে, তাই কম সুদে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি আরো ঋণ নেওয়ার সুযোগ এখনো অনেকটা রয়ে গেছে। তবে অস্থির বিনিময় হারের বাস্তবতায় বেশি করে ব্যক্তি খাতের জন্য বিদেশি ঋণ নেওয়ার প্রশ্নে সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন চলছে (এখন পর্যন্ত ২৫ শতাংশের মতো অবমূল্যায়ন করতে হয়েছে)। দুই বছর আগেও যেখানে ২-৩ শতাংশ হারে সুদ ছিল, এখন সেসব স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের জন্য ব্যক্তি খাতকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে হচ্ছে।
এর সঙ্গে অবমূল্যায়নের পরিমাণ যোগ করলে কার্যকরী সুদের হার কত হবে তা কল্পনারও অতীত। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে ২০২৩ সালের প্রথম ৯ মাসে দেশের ব্যক্তি খাত যে ১৯.৫৫ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ পেয়েছে তার বিপরীতে ব্যক্তি খাতকে সুদ-মূল মিলিয়ে ঋণ পরিশোধ বাবদ দিতে হয়েছে ২৩.৯৯ বিলিয়ন ডলার (অর্থাৎ প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি)। এ বাস্তবতার বিচারেই ব্যক্তি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ বিষয়ে আরো সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ কথা ঠিক, আগামী তিন থেকে পাঁচ বছর সময়কালে ঋণের পরিমাণ বা দায় শোধ নিয়ে বড় সংকটে আমাদের পড়তে হচ্ছে না। বিশ্বব্যাংকের স্ট্র্যাটেজি পেপারে তাই বাংলাদেশের জন্য আলাদা করে ঋণ বরাদ্দের কথা শোনা যাচ্ছে। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের তরফ থেকে ৪৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের এই সময়ে এই খবরগুলো নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক। তাই বলে এ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগও কিন্তু আমাদের নেই।
কেননা প্রথমত, পরিবর্তিত বিশ্ব বাস্তবতা এবং আমাদের নিজস্ব কাঠামোগত চ্যালেঞ্জগুলোকে বিবেচনায় রেখে বৈদেশিক উৎস থেকে পাওয়া ঋণগুলোর আরো দক্ষ ও সময়োপযোগী ব্যবহার নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করতেই হবে। পাশাপাশি নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় নীতি উদ্যোগও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। তবে আশার কথা যে আমরা বাজেট ঘাটতিকে বরাবরই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। আয় বুঝে ব্যয় করার এই বাজেট সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে পারলে আমাদের পক্ষে ম্যাক্রো অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা নিশ্চয়ই সম্ভব হবে।
তবে বৈদেশিক আর্থিক খাতের ব্যবস্থাপনায় আমরা যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখাতে পেরেছি বলে মনে হয় না। তা সত্ত্বেও বর্তমানে যে ডলার সংকটের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি, তা মোকাবেলায় বৈদেশিক ঋণ বিশেষ জরুরি। একই সঙ্গে এটাও সত্য যে বৈদেশিক ঋণ নিয়ে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়বেই। তার প্রভাব স্বভাবতই পড়বে মূল্যস্ফীতির ওপর। কিন্তু এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতির চাপে জনজীবন বেশ খানিকটা পর্যুদস্ত।
বিশেষ করে দুই অঙ্কের খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারের কারণে কম আয়ের নাগরিকরা চাপে আছেন (এই চাপ শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বেশি)। ফলে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি অনুসারে পাইপলাইনে থাকা বৈদেশিক ঋণের ছাড় আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাব। তবে একই সঙ্গে এই ঋণের অর্থ যথাসম্ভব গণমুখী উৎপাদনশীল খাতে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার নিশ্চিত করতেও আমরা উদ্যোগী হব। বড় প্রকল্প অর্থায়নের সময় লক্ষ রাখতে হবে, যাতে কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হয় এমন প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকার পায়। তা ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার কারণে সরকারি খরচ বেড়ে যায়। এর ফলে বাজেট কাঠামো সুস্থির রাখা বেশ কষ্টের হয়ে পড়ে। তাই সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে গভীরতর নীতি-মনোযোগ কাম্য।
দ্বিতীয়ত বলছি ঋণের দায় শোধের সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা। আরো আগে থেকেই এ জন্য আমাদের কর আহরণের দক্ষতা বাড়ানোর কথা আমরা বলে আসছি। আমাদের কর জিডিপির তুলনায় ১০ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে অনেক বছর ধরে। আমি সব সময়ই বলে আসছি যে বাংলাদেশের মতো বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির দেশে কর-জিডিপি অনুপাত অন্তত ১৫ শতাংশ হওয়া দরকার। দেশীয় অর্থনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরে যা বলে আসছেন ইদানীং উন্নয়ন সহযোগীরাও সেই একই পরামর্শ দিচ্ছেন। বিদ্যমান বাস্তবতার বিচারে মনে হয় এ বিষয়ে যথার্থ কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার এখনই শ্রেষ্ঠ সময়।
মানুষের মাথাপিছু আয় যে মাত্রায় বেড়েছে আমরা সে মাত্রায় কর আহরণ করতে পারছি না। এই না পারার দায়টি কিন্তু নাগরিকদের নয়, বরং কর আহরণের দায়িত্বে যাঁরা আছেন তাঁদেরই। কর আহরণ প্রক্রিয়াকে ডিজিটাইজেশন করার সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। আর্থিক সেবা খাত যেভাবে ডিজিটাইজেশনের সুফল ভোগ করছে, রাজস্ব বোর্ডের ক্ষেত্রে কেন তা করা যাবে না? সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর ক্ষেত্রেও ডিজিটাইজেশনের ছোঁয়া লেগেছে। এমনকি ভূমি ব্যবস্থাপনায়ও ডিজিটাইজেশনের সুফল নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’র অভিযাত্রায় সফলতার পর ‘স্মার্ট বাংলদেশে’র যে নতুন অভিযাত্রায় আমরা প্রবেশ করেছি তার সঙ্গে সংগতি রাখতেই কর আহরণ প্রক্রিয়া ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে সহজ করা উচিত স্বল্পতম সময়ের মধ্যে। কর আহরণের প্রক্রিয়া সহজীকরণ হলে নাগরিকদের কর দেওয়ার উৎসাহ বাড়বে।
পাশাপাশি কর প্রদানে তাদের উৎসাহী করতে সামাজিক আন্দোলনও জোরদার করা উচিত। এই সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কাজটিতে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের। সবার সম্মিলিত কার্যকর উদ্যোগ থাকলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর আহরণ সম্ভব হবে। তাতে সরকারের আয় বাড়লে আমাদের বৈদেশিক ঋণের দায় শোধ নিয়েও বড় দুর্ভাবনায় পড়তে হবে না। আর আমাদের প্রবাসী ও রপ্তানি আয় যতক্ষণ কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়তে থাকবে ততক্ষণ বৈদেশিক ঋণ শোধের দায় নিয়ে অতটা ভাবতে হবে না। তবে আবারও বলছি, হেজিং ব্যবস্থা ছাড়াই অস্থিতিশীল বিনিময় হার বজায় থাকার সময়ে ব্যক্তি খাতে বিদেশি ঋণ নেওয়ার বেলায় খুবই রক্ষণশীল থাকতে হবে। বাংলাদেশ অবশ্য এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন বলেই মনে হয়। তবু সাবধানের মার নেই।
লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর