পাবনা: পাবনায় বিষাক্ত ইঞ্জেকশন দেয়া মোটাতাজা গরু বেচে অধিক হারে মুনাফা লাভের প্রতিযোগিতায় নেমেছে ব্যবসায়ী ও খামারি। তারা কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজাকরণে গরুকে ইঞ্জেকশন দেয়ার পাশাপাশি ট্যাবলেটও খাওয়াচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, বাঘাবাড়ী মিল্কভিটাকে কেন্দ্র করে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় ১২ সহস্রাধিক গো-খামার গড়ে উঠেছে। গ্রামগুলোর প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গবাদিপশু পালন করা হয়। এ অঞ্চলের ১২ সহস্রাধিক খামার ও পাঁচ সহস্রাধিক ব্যবসায়ী ও কৃষকের গোয়ালে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার এক লাখ থেকে সোয়া লাখ গরু কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা হচ্ছে।
ঈদ-উল-আজহা সামনে রেখে পাবনায় এক শ্রেণীর অসাধু খামারি ও ব্যবসায়ী গরুকে মোটাতাজা করতে অবাধে ব্যবহার করছে নানা ব্রান্ডের পাম ট্যাবলেট, ডেক্সামেথাথন ও স্টেরয়েডের মতো ভয়ানক ক্ষতিকর উপাদানের ওষুধ। এসব গরুর মাংস খেয়ে মানুষ লিভার, কিডনি, ক্যান্সার, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্তসহ মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞের মতে, পাম, ডেক্সামেথাথন ও স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর গরুর চামড়ার ভেতরে বাড়তি পানির স্তর জমে গরুকে বেশি মোটাতাজা ও সবল দেখায়। এতে কমে যায় গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। পাম বড়িতে ক্ষতিকর স্টেরয়েড থাকে। স্টেরয়েড গরুর দেহে মারাত্মক বিষ ছড়িয়ে দেয়। এতে গরুর লিভার নষ্ট হয়ে যায়।
স্টেরয়েড মিশ্রিত গরুর মাংস ও লিভার মানব শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটি এমন পদার্থ যা মাত্রাতিরিক্ত তাপেও ধ্বংস হয় না। এখন মোটাতাজা গরু মানেই মানুষের জন্য তাজা বিষ। পাবনার গরুর ব্যাপারি হাকিম মিয়া বলেন, বর্তমানে পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ গরুই ইঞ্জেকশন বা ওষুধ দিয়ে দ্রুত মোটাতাজা করা হয়। ফলে গায়ে শক্তি থাকে না। মাদকাসক্ত মানুষের মতো ঝিমায়।
তিনি জানান, খামারিরা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অল্প সময়ে গরুকে ইঞ্জেকশন বা ট্যাবলেট খাইয়ে মোটাতাজা করার কাজে ব্যস্ত রয়েছে। তারা সাধারণ মানুষকে খামারে ঢুকতে দেয় না। প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাজারে এ ধরনের মোটাতাজা গরুর মধ্যে রয়েছে পাবনা ব্রিড, অস্ট্রেলিয়ান-ফ্রিজিয়ান ব্রিড, ইন্ডিয়ান হরিয়ান ব্রিড, পাকিস্তানি সাহিয়াল ব্রিড।
পাশাপাশি রয়েছে স্থানীয় ব্রিডিং পদ্ধতি যা লোকাল ক্রস ব্রিড নামে পরিচিত। এসব ব্রান্ডের সব গরুই মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় বড় করে বাজারে তোলা হয়। বাঘাবাড়ী মিল্কভিাটার পশু চিকিৎসক ডা. মো. ইদ্রিস আলী বলেন, এই ডেক্সামেথাথন গরুকে খাওয়ালে আর সেই মাংস মানুষ খেলে লিভার, কিডনি, ক্যান্সার, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্তসহ ভয়ঙ্কর কিছু হতে পারে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ইফতেখার মাহমুদ বলেন, গরুকে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাওয়ালে তা যেমন গরুর জন্য ক্ষতিকর তেমনি ওই গরুর মাংসও বিষাক্ত হয়ে পড়ে।
বহুমাত্রিক.কম
