Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

আষাঢ় ২৭ ১৪৩২, শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫

জনপ্রিয় হয়ে উঠা দেশে ভ্রমণের ছয় নতুন গন্তব্য 

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১০:৫০, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

প্রিন্ট:

জনপ্রিয় হয়ে উঠা দেশে ভ্রমণের ছয় নতুন গন্তব্য 

ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি নতুন স্থান ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব জায়গায় আগে মানুষের যাতায়াত থাকলেও শুধুমাত্র ভ্রমণের উদ্দেশ্যে মানুষের তেমন যাতায়াত ছিল না। কিন্তু কিছুদিন ধরে পর্যটকদের কাছে আগ্রহের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে এসব স্থান।

মাওয়া ঘাট

দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগের একটি কেন্দ্র হিসাবে বরাবরই মাওয়া ঘাট দিয়ে যাত্রীরা চলাফেরা করতেন। দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল অবকাঠামো পদ্মা সেতুর কারণে কিছুদিন ধরে মাওয়া ঘাট পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

সোহানা ইয়াসমিন দুই সপ্তাহ আগেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মাওয়া ঘাট ঘুরে এসেছেন।
তিনি বলছিলেন, ‘পদ্মা ব্রিজটা দেখতে গিয়েছিলাম। সেই সঙ্গে নদীর পাড়ের হোটেলে বসে তাজা ইলিশ মাছ ভাজি, ভর্তা দিয়ে ভাত খেলাম। বাসার সবাই ঘুরে খুব মজা পেয়েছে। আর রাস্তাটাও এতো চমৎকার হয়েছে যে, যাতায়াত করে খুব আরাম।’

তিনি জানালেন, সেদিন বিকালে তার মতো কয়েকশো পর্যটককে দেখতে পেয়েছেন, যারা শুধুমাত্র বেড়ানোর জন্য পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে ওই স্পটে এসেছেন। নিজস্ব পরিবহণের বাইরে ঢাকা থেকে বাসযোগে মাওয়ায় যাওয়া যায়।

নিকলি হাওর

হাওরগুলো বরাবরই পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের জন্য অন্যতম প্রিয় স্থান। সেই তালিকায় সম্প্রতি জায়গা করে নিয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলি হাওর। এর একটি বড় কারণ, হাওরের মাঝ দিয়ে চমৎকার একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। সেই রাস্তার দুই পাশে হাওর। কিছুদূর পর পর বসার ব্যবস্থা রয়েছে।

ঢাকার একটি পত্রিকার সাংবাদিক জিয়াউর রহমান প্রায়ই পরিবার-পরিজন নিয়ে নিকলি হাওরে বেড়াতে যান। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, নিকলি হাওর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এখানে ঢাকা থেকে একদিনে গিয়ে একদিনেই ফিরে আসা যায়। টাঙ্গুয়ার হাওরও আমি পছন্দ করি, কিন্তু সেটা তো একদিনে ভ্রমণ সম্ভব না।

``আরেকটা ব্যাপার হলো, নিকলি হাওরে সাবমার্জিবল রোড আছে। অর্থাৎ বর্ষার সময় রাস্তাটা অনেক সময় পানির নীচে থাকে। তখন রাস্তাটা ধরে অনেকদূর চলে যাওয়া যায়। কাছেই রাতারগুলের মতো একটা জলাবন আছে। ফলে সেখানে গেলে সব ধরনের আমেজ পাওয়া যায়।`` তিনি বলছিলেন। নিকলি হাওরে নৌকা নিতে ঘোরার সুযোগ আছে।

বরিশালের শাপলা বিল

এক পলকে মনে হবে, লাল শাপলার কোনো চাদর। পুরো বিল জুড়ে বিছানো শাপলা। তাই গ্রামটির নামই হয়ে গেছে `শাপলা বিল`। সবাই এই নামে ডাকে উত্তর সাতলা গ্রামটিকে। এভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে বরিশাল জেলার সরকারি ওয়েবসাইটে।

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের কালবিলা গ্রামে প্রাকৃতিকভাবে শাপলার এই বিলটি তৈরি হয়েছে। সাধারণত সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে এই বিলে লাল শাপলা ফোটে। তখন সেই সৌন্দর্য দেখতে আশেপাশের অনেক জেলা থেকে মানুষ এসে ভিড় করেন।

বরিশাল জেলার ওয়েবসাইটে বর্ণনা করা হয়েছে, ঠিক কত বছর ধরে বিলে এভাবে শাপলা জন্মাতে শুরু করেছে সঠিকভাবে সে তথ্য কেউ দিতে না পারলেও স্থানীয় ষাটোর্ধ কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, তাদের জন্মের পর থেকেই এ বিলে এভাবে শাপলা ফুটতে দেখছেন তারা। বছরের অধিকাংশ সময় জলমগ্ন এ বিলে লাল, সাদা ও বেগুনি রঙয়ের তিন ধরনের শাপলা জন্মালেও লাল শাপলার আধিক্য বেশি।

মৈনট ঘাট

ঢাকার কাছেই দোহার উপজেলায় পদ্মা নদীর তীরের এই জায়গাটি পরিচিত পেয়েছে `মিনি কক্সবাজার` হিসাবে। কারণ নদী তীরে বালুকাবেলা আর পদ্মা নদীর ঢেউ মিলে অনেকটা সমুদ্র তীরের আদল আসে।পর্যটকদের আনাগোনার কারণে এখানে নদী তীরে সমুদ্র সৈকতের মতোই ছাতাসহ বসার ব্যবস্থাও তৈরি হয়েছে। আশেপাশে রয়েছে অনেক খাবারের দোকান।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী শাহনাজ চৌধুরী কিছুদিন আগে মৈনট ঘাট ঘুরে এসেছেন। তিনি বলছিলেন, ``ঢাকার কাছে মাত্র দুই ঘণ্টায় যাওয়া যায়। নদীর তীরে বিকালে বসে থাকলে খুব ভালো লাগে। বাচ্চারা যেন কক্সবাজারের একটা স্বাদ পেয়েছে।`` ঢাকা থেকে বাস বা সিএনজি যোগে মৈনট ঘাট যাওয়া যায়।

চাঁদপুর ও চাঁদপুরের চর

ভ্রমণের আরেকটি পছন্দের জায়গা হিসাবে গড়ে উঠেছে চাঁদপুর। ঢাকা থেকে আরামদায়ক লঞ্চে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সুযোগ থাকায় অনেকের কাছে ভ্রমণের আরেকটি পছন্দের জায়গা হিসাবে গড়ে উঠেছে চাঁদপুর।

ইলিশ মাছের মোকাম হিসাবে বিখ্যাত চাঁদপুরে যাওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য থাকে তাজা মেঘনা নদীর ইলিশ খাওয়া ও কিনে আনা। সেই সঙ্গে মেঘনা নদীর মাঝে গড়ে ওঠা একটি চর পিকনিক পার্টির কাছে আরেকটি মিনি কক্সবাজার হিসাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে অনেকে লঞ্চ নিয়ে এই চরে পিকনিক করতে যান।

দেবতাখুম

বান্দরবানের অনেক জায়গা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হলেও নতুন একটি আকর্ষণের নাম দেবতাখুম এলাকা। দুই পাশে উঁচু পাহাড়ের মাঝ দিয়ে স্বচ্ছ পানি প্রবাহিত হতে থাকে। সেখানে বাঁশের ভেলা নিয়ে যেতে হয়। দুই পাহাড়ের মাঝে হওয়ায় জায়গাটি খুব শীতল আর রোমাঞ্চকর। এর কাছেই শীলবাধাঁ ঝর্ণা।

জানুয়ারি মাসে এই জায়গাটি ঘুরে এসেছে তৈরি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। তিনি বলছিলেন, ``বেশ অনেকটা পথ ট্র্যাকিং করে এখানে যেতে হয়। এরপর পানির ওপর বাঁশের ভেলায় করে শীতল পরিবেশে যাওয়া বেশ রোমাঞ্চকর। সেই সাথে পাহাড়ি গ্রামে থাকা ও খাওয়ার আলাদা অভিজ্ঞতা হয়েছে।``

বান্দরবান শহর থেকে রোয়াংছড়ি হয়ে লিরাগাঁও সেনানিবাসের অনুমতি নিয়ে দেবতাখুম যেতে হয়। সঙ্গে গাইড থাকতে হবে। তবে বর্ষাকালে এই জায়গায় যাওয়া বিপজ্জনক।

বিবিসি বাংলা