ঢাকা : মাস্টারকার্ড সম্প্রতি তার ব্লকচেইন টেকনোলজি উন্মূক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। মাস্টারকার্ড ডেভেলপারসে প্রকাশিত মাস্টারকার্ডের এপিআইয়ে ভায়া হয়ে গ্রাহকেরা এই ব্লকচেইন টেকনোলজিতে প্রবেশাধিকার পাবেন।
মাস্টারকার্ডের নতুন ব্লকচেইন সলিউশন বা সমাধান গ্রাহক, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকের জন্য একটি নতুন লেনদেন সেবার উপায় নিয়ে এসেছে। এটি কোনো কোম্পানি তথা আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিজস্ব পেমেন্ট সলিউশন বা পরিশোধ সেবা সংক্রান্ত সব প্রয়োজন মেটাতে এবং তাদের প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রাহকদের চাহিদা পূরণের (end-customers) চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে। মাস্টারকার্ড ব্লকচেইন এপিআই আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসে অনুষ্ঠিতব্য মানি টোয়েন্টি/টোয়েন্টি হ্যাকাথনের (Money 20/20 hackathon) গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।
মাস্টারকার্ড ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তবেই তার ব্লকচেইন টেকনোলজি সেবা বাণিজ্যিকভাবে চালু করার সিদ্ধাšত নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে অবশ্য এই সেবা বিজনেস-টু-বিজনেস (বি-টু-বি) বা এক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে আরেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পেমেন্ট বা লেনদেন পরিশোধ সম্পন্ন করার মধ্যেই সীমিত রাখা হবে।
এই পর্যায়ে ক্রস-বর্ডার বা আšতঃসীমাšত অর্থাৎ এক দেশের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে আরেক দেশের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পেমেন্ট পরিশোধের ক্ষেত্রে কাজের গতি, স্বচ্ছতা ও খরচের চ্যালেঞ্জ কী রকম হতে পারে তা বুঝতেই প্রাথমিকভাবে বি-টু-বি পর্যায়ে সেবাটি চালু করা হবে। মাস্টারকার্ডের ব্লকচেইন টেকনোলজিতে কোনো কোম্পানির বিদ্যমান ভার্চুয়াল কার্ড, মাস্টারকার্ড সেন্ড ও ভোকালিংকের (virtual cards, Mastercard Send and Vocalink) মতো পণ্য বা সেবা উপকরণসমূহের পরিপূর্ণ সক্ষমতা থাকবে। ফলে এসব পণ্য বা সেবা উপকরণের মতো ব্লকচেইন টেকনোলজি ব্যবহারেও ক্রস-বর্ডার বা আন্তসীমান্ত অর্থাৎ এক দেশের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সাথে অন্য দেশের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের, বিজনেস-টু-বিজনেস (বি-টু-বি) বা এক কোম্পানির সাথে আরেক কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা হিসাবভিত্তিক, ব্লকচেইন ভিত্তিক ও কার্ডভিত্তিক পেমেন্ট বা লেনদেন পরিশোধ সংক্রাšত প্রয়োজন খুব সহজেই মেটানো সম্ভব হবে।
মাস্টারকার্ডের ব্লকচেইন টেকনোলজি সেবার চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্য বা স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- প্রাইভেসি বা একাšত গোপনীয়তার সুরক্ষা, ফ্লেক্সিবিলিটি বা নমনীয়তা, স্কেলেবিলিটি বা সামর্থ্য অর্থাৎ সেবার পদ্ধতিগত সক্ষমতা এবং রিচ্ অব দ্য কোম্পানি’জ সেটেলমেন্ট নেটওয়ার্ক ।
প্রাইভেসি (Privacy)- মাস্টারকার্ড ব্লকচেইন টেকনোলজি সেবা ব্যবহারকারীর প্রাইভেসি বা একাšত গোপনীয়তার সুরক্ষায় পূর্ণ নিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ ট্র্যানজেকশন বা লেনদেন সম্পন্নকারী সংশ্øিষ্ট পক্ষগুলোই কেবল তাদের মধ্যকার লেনদেনের তথ্য জানতে পারবেন। একই সাথে লেনদেনের সব তথ্যাবলী বা খতিয়ান যথোপযুক্ত উপায়ে বিস্তারিত ভাবে সংরক্ষিত থাকবে। ফলে কোম্পানির হিসাব অডিট বা নিরীক্ষার সময়ে কোনো সমস্যা হবে না।
ফ্লেক্সিবিলিটি(Flexibility)-মাস্টারকার্ড এপিআইয়ে ভায়া হয়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্লকচেইন টেকনোলজি ব্যবহার করে পরস্পরের সাথে বৃহৎ পরিসরে লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে আরো সহজভাবে, স্বচ্ছন্দে ও সুসমন্বিত উপায়ে কাজ করার জন্য ছয়টি ভাষায় সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কিটস রয়েছে।
স্কেলেবিলিটি(Scalability)- বাণিজ্যিক লেনদেন দ্রুত সম্পন্ন করার উপায় হিসেবে মাস্টারকার্ড ব্লকচেইন সেবার ডিজাইন তৈরি করা হয়েছে; যা সঞ্চালিত বা পরিচালিত হবে একটি বিশ্বস্ত নেটওয়ার্ক মডারেটরের মাধ্যমে; যাতে নেটওয়ার্ক পার্টিসিপেন্ট বা নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীরা স্বস্তি পান।
রিচ্ (Reach)-মাস্টারকার্ডের নতুন এই ব্লকচেইন টেকনোলজি হচ্ছে একটি সুসমন্বিত লেনদেন পরিশোধ সেবা। এই নেটওয়ার্কে ২২,০০০ আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভূক্ত রয়েছে, যারা ব্লকচেইন টেকনোলজির মাধ্যমে তহবিল স্থানান্তর তথা লেনদেন সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মাস্টারকার্ড ল্যাবসের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট কেন মূর এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মাস্টারকার্ডের সেটেলমেন্ট নেটওয়ার্ক বা লেনদেন নিষ্পত্তি-বিষয়ক সেবা ও অ্যাসোসিয়েটেড নেটওয়ার্ক রুলসের সাথে সমন্বয় ঘটিয়ে আমাদের গ্রাহকদের জন্য নতুন ব্লকচেইন টেকনোলজি সেবাটি নিয়ে এসেছি আমরা। এটি একটি অত্যন্ত নিরাপদ, সুরক্ষিত, অডিটেবল বা নিরীক্ষাযোগ্য ও সহজে পরিচালনা করা যায় এমন ধরনের সেবা।’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের অংশীদারদের জন্য বিকল্প ও সহজতর উপায়ে পেমেন্ট বা লেনদেন নিষ্পত্তির সুযোগ করে দিতে চাই; যাতে তারা আমাদের বিদ্যমান সেবার পাশাপাশি নতুন সেবাও ব্যবহার করে দ্রুত নিজস্ব গ্রাহকদের প্রয়োজন মেটাতে পারে।’’
মাস্টারকার্ডের ব্লকচেইন নামের এই নিরাপদ ও সুরক্ষিত সলিউশন বা সেবাটি বিজনেস-টু-বিজনেস (বি-টু-বি) পেমেন্ট বা পরিশোধ এবং বাণিজ্য অর্থায়ন সংক্রাšত লেনদেন নিষ্পত্তিতে কার্ডবহির্ভূত সেবা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা রাখি। গোটা সাপ্লাইচেইন প্রক্রিয়ায় এই সেবা নন-পেমেন্ট সলিউশনকে আরো জোরদার করবে।
মাস্টারকার্ড আশা করে, এই প্রোপ্রাইটারি সলিউশন বা স্বত্বাধিকারযুক্ত সমাধান চালুর ফলে মাস্টাকার্ডের অংশীদাররা নতুন নতুন সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি কমার্স ইকোসিস্টেম সহজ, দ্রুততর ও নিরাপদ হবে। এ ছাড়া নতুন একটি সলিউশন তৈরির লক্ষ্যে মাস্টারকার্ড বল্কচেইনের বিষয়ে ৩৫টির বেশি প্যাটেন্টের জন্য আবেদন দাখিল করেছে। বিনিয়োগ করেছে ডিজিটাল কারেন্সি গ্রুপে।
এ ছাড়া বিটকয়েন ও ব্লকচেইন টেকনোলজি-সংক্রান্ত কোম্পানিগুলোতেও যৌথভাবে বিনিয়োগ করেছে। যারা এখনো মাস্টারকার্ডের ট্র্যাডিশনাল পেমেন্টস বা সনাতনী লেনদেন পরিশোধ সেবার বাইরে রয়ে গেছে তাদের জন্য এনদেরিয়াম টেকনোলজির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে মাস্টারকার্ড সম্প্রতি এন্টারপ্রাইজ এনদেরিয়াম অ্যালায়েন্সে যোগ দিয়েছে। এ ছাড়াও মাস্টারকার্ড তার স্টার্ট পাথ গ্লোবাল প্রোগ্রামের (Start Path Global program) আওতায় নতুন কিছু উদ্ভাবনের লক্ষ্যে স্টার্টআপ বা নবীন উদ্যোক্তাদের সাথেও কাজ করতে শুরু করেছে।