Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১২ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রসঙ্গ : সুপেয় পানির জন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

ড. মোঃ হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ০০:২০, ৪ আগস্ট ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

প্রসঙ্গ : সুপেয় পানির জন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ

ছবি : সংগৃহীত

পানি একটি অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ। তবে অবহেলা করে এর অপব্যবহার করলে এ গুরুত্বপূর্ণ পানি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়, যা সহজে পূরণযোগ্য হয় না। পানির মৌলিক উৎসগুলোর মধ্যে বৃষ্টির পানি অন্যতম। অপরদিকে র্ভূ-গর্ভস্থ পানি হলো একটি গৌণ উৎস মাত্র। কিন্তু আমরা যেন গৌণ উৎসের পানি ইদানীং এতবেশি ব্যবহার শুরু করে দিয়েছি যে, সেটাকে এখন ব্যবহার না বলে অপব্যহার বলাই শ্রেয়। কাজেই ২০১০ সালের পর থেকে ভূ-গর্ভস্থ পানির পরিবর্তে বিকল্প পানির উৎস হিসেবে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। একে কেন্দ্র করে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা, চলছে গবেষণা।

এ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবনপূর্বক বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় এক আন্তর্জাতিক সেমিনারের। এতে দেশি-বিদেশি অনেক বিজ্ঞানী ও পানি বিশেষজ্ঞগণ উপস্থিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ‘রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং কনভেনশন’ সহ আরো অনেক নামে ও শিরোনামে যৌথভাবে আয়োজন করা হয় ইন্টারন্যাশনাল ট্রেনিং নেটওয়ার্ক (আইটিএন-বুয়েট), সেন্টার ফর সায়েন্স এন্ড এনভায়রনমেন্ট (সিইসি) এবং রেইন ফোরামের সহযোগিতায় ওয়াটার এইড বাংলাদেশসহ আরো অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের।

সেমিনারের আলোচনায় কিছু ভয়াবহ বিষয় উঠে আসে। এসব সেমিনারে প্রাপ্তব্য সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, বর্তমানে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে প্রতিবছর পানির স্তর কমপক্ষে তিন পর্যন্ত নিচে নেমে যাচ্ছে। ঢাকা শহরে ভূ-গর্ভে ১০০ মিটারের মধ্যে কোন পানির স্তর পাওয়া যায় না। তাছাড়া শহরের প্রয়োজনীয় অনেক পানি প্রায় আশেপাশে পাওয়া যায় না বলে ৩৩ কিলোমিটার দূর থেকে আনতে হয়। অপরদিকে সারাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪৫টি জেলাতেই নাকি ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে গেছে। এর মূল কারণ হলো সেচের পানির জন্য নিয়ম না মেনে যত্রতত্র ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন।

আমাদের স্মরণ থাকার কথা, বিগত কয়েক বছর আগে রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রাণকেন্দ্রখ্যাত সোনারগাঁও হোটেলের পাশে একটি দালানের পাইলিংয়ের সময় ভূমিধস হয়ে মারাত্মক ভবন ধসের কবলে পড়েছিল। সেটার কারণও ছিল ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন। কােেজই যদি প্রধান ও মুখ্য উৎস হিসেবে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া যায় তবে মারাত্মক ক্ষতিকর ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন অনেকাংশে কমে গিয়ে তার উপর চাপ কমে যাবে।

এখন প্রশ্ন হলো, এটি কীভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব? এর আগে বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবেলা করার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সকল স্থানের সকল নির্মিতব্য নতুন বিল্ডিংয়ে সোলার প্যানেল লাগানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। ঠিক তেমনিভাবে যেকোন স্থানে বিল্ডিং করার সময় তার পানি ব্যবস্থাপনার জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির উৎসের ব্যবস্থার সাথে বিকল্প হিসেবে রেইন ওয়াটার হারভেস্ট করার একটি ব্যবস্থা বাধ্যতামূলকভাবে রাখতে হবে। কিন্তু সোলার প্যানেল লাগানোর বিষয়টি প্রভিশন থাকলেও সেটা বাধ্য করার জন্য কোন মনিটরিং না থাকায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রেও এমনটি হলে আমরা নিজের পায়েই নিজে কুড়াল মারলাম বলে গণ্য করতে হবে।

কারণ আস্তে আস্তে যেভাবে আশঙ্কাজনকভাবে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের পানির জন্য হাহাকার ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। অথচ বাংলাদেশের কোন কোন পাহাড়ি এলাকাসহ বিশ্বের অনেক দেশ রয়েছে যেখানে বৃষ্টির ধরে রাখা পানিই একমাত্র তাদের সম্বল। উদাহরণস্বরূপ ভারতের পর্যটন নগরী দার্জিলিং এর কথা বলা যেতে পারে। সেখানে নিত্যব্যবহার্যসহ সবধরনের পানির একমাত্র উৎস হলো বৃষ্টির পানি। সেটা দিয়েই তো সব কাজ করছে তারা। তাহলে আমরা কেন পারবো না।

আর পানির সাথে পরিবেশের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথেও সম্পর্ক। সেজন্য এখন সময় এসেছে পুকুর, নালা, খাল, বিলসহ মুক্ত জলাশয়ে পানি ধরে রাখা এবং সেগুলো দিয়ে সেচের পানি সরবরাহ করা। অপরদিকে গৃহস্থালিসহ অন্য প্রয়োজনীয় পানির জন্য অবশ্যই বৃষ্টির পানির ব্যবহার বৃদ্ধি করা। কারণ ভূ-গর্ভস্থ পানিকে ইদানিং আর্সেনিক বিষ ছাড়াও আরো অনেক ক্ষতিকর রাসায়নিক মিলে জনজীবনে ক্ষতি বয়ে আনছে। তার একটিই সমাধান, আর তা হলো রেইন ওয়াটার হারভেস্ট ও ব্যবহার। আর বৃষ্টির মৌসুমে পানি সংরক্ষণ করে তা প্রয়োজনে সারাবছর ব্যবহার করা যাবে।

লেখক: ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
Email: [email protected] 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer