রোববার ৩১ ডিসেম্বর লেখক ও কলামিস্ট এস এম মুকুল এর জন্মদিন। নেত্রকোনার বারহাট্টা থানায় সিংধা-ভাটিপাড়া গ্রামের শাহ্ বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শৈশব কেটেছে কংশ নদীর তীরে। গ্রামের মাঠে, বন-জঙ্গলে দুরন্তপনায়।
লেখকের ভাষ্যে- ‘শিক্ষক বাবার স্কুল পালানো ছেলে আমি। স্কুলের নাম করে বই নিয়ে আম গাছের ডালে বসে মাস্টারি খেলা খেলতাম। স্কুল ছুটির পর ফিরতি সহপাঠীদের সাথে সোজা বাড়ি চলে যেতাম। গরু-বাছুর, ছাগল আর মুরগীর পরিচর্যা ছিলো প্রিয় কাজ। শৈশবে খেলার সাথীদের সাথে দলবেঁধে গাছের ডালে ডালে, ধান ক্ষেতের আলে আলে, জঙ্গলে আর খালে বিলে মাছ ধরে কেটেছে বেলা। সেই দুরন্ত ছেলেটি আজ আত্মসাধনায়ব্রত একজন লেখক- ভাবতে ভালোই লাগে।’
এস এম মুকুলের প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় রহস্য পত্রিকায়। প্রথম লেখার সম্মানি ১০০ টাকা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন- ‘ ১৯৯৬ সালে লেখার সম্মানি একশ টাকা আমার কাছে ছিলো লাখ টাকার সমান। টাকা পাওয়ার উত্তেজনায় ঘুম হয়নি এক রাত।’
স্বভাবজাত লেখকেরা বোধহয় এমনই হয়ে থাকেন। তিনি সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত হন ২০০০ সালে। শিক্ষা ও ক্যারিয়ার বিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন শিক্ষাবিচিত্রা’য় প্রথমে স্টাফ রিপোর্টার, একবছরান্তে চিফ রিপোর্টার এবং আরো একবছর পরে সহকারি সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০০৫ সাল পর্যন্ত। লেখক নতুন কাজের আনন্দে নিজেকে নিয়োজিত করতে অধিক উৎসাহী একারণে ২০০৫ সালের শেষে বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যাগাজিন সায়েন্স ওয়ার্ল্ড-এর সহযোগি সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০০৭ সালের কিছু সময় পর্যন্ত সে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে তিনি প্রবন্ধ লেখালেখি শুরু করেন দৈনিক যায়যায়দিনের উপসম্পাদকীয়তে। তৎকালীন যায়াযায়দিনের সম্পাদকের আগ্রহে মঙ্গলবারের পি ম্যাগাজিন (পলিটিক্স এন্ড সোসাইটি)-তে পাঠকপ্রিয় কলাম ‘আলোর পথযাত্রী’র পাঠক নন্দিত লেখক তিনি।
সেই থেকে শুরু। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশুনা করা এই লেখকের পেশা হতে পারত- ইট, সিমেন্ট, কক্রিট আর রডের হিসাব-নকশায় ইমারত, সেতু বা রাস্তা নির্মাণ করা। কিন্তু জাত লেখকের মন টানেনি সেদিকে। অর্থ-সাচ্ছন্দ্যতার মোহ ত্যাগ করে তিনি কলম আর কাগজে স্বপ্ন রচনার পথনকশা তৈরি করেছেন নিজেই। লেখকের ভাষায়- ‘আমি লেখনি জগতের দিনমজুর। আমার শাণিত মেধার সবটুকু উজার করে দিয়ে আমি যা রচিব- তার সব যেন এই দেশ-মা-মাটি আর মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হয়। অনেক কঠিন-কষ্টের জেনেও অধমি এই পথ বেছে নিয়েছি সৃজনের আনন্দে।’
লেখক এস এম মুকুল শুরুতে ছিলেন কবিতাপ্রেমী। তিনি শিক্ষাবিচিত্রায় সাংবাদিকতার পাশাপাশি কবিতা ও ছড়া লেখালেখির চর্চা করতেন। পত্রিকাটির সাহিত্য পাতা কবিকন্ঠ এবং ছোটদেও পাতা সবুজ ভুবন যত্নের সাথে সম্পাদনা করতেন। তারই প্রতিফলন হিসেবে তাঁর সম্পাদনায় সাহিত্য সংকলন- ‘রৌদ্রছায়া’ প্রকাশিত হয়। ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর কাব্যপ্রেমের প্রথম ফুল কাব্যগ্রন্থ ‘দিনবদলের হাওয়া’ এবং ছড়াগ্রন্থ ‘ছন্দছড়ার দেশে’। কয়েক বছরের ব্যবধানে লেখকের লেখালেখি ধরণ ভিন্ন পথে মোড় নেয়। তিনি অবিরাম লিখতে থাকেন পজিটিভ বাংলাদেশ বিষয়ক প্রবন্ধ ও কলাম।
এপ্রসঙ্গে লেখকের অভিমত- ‘পত্রিকার পাতা উল্টালেই নেতিবাচ লেখার ছড়াছড়ি আমাকে ইতিবাচক লেখালেখির বিষয়ে আগ্রহী করে তোলে। নেতিবাচক সংবাদে সব পত্রিকা কানায় কানায় টইটুম্বুর। অথচ একটি ভালো খবর- যা পড়লে মানুষের মনে আশা জাগবে সেই খবরটি পত্রিকার কোনো কোনায় কানায় ছোট করে জায়গা পায়! আমি ধারাটি ভাঙ্গতে চেয়েছি। তাই অবিরাম আমি লিখে যাচ্ছি সম্ভাবনার বাংলাদেশের কথা। কেউ মানুক অথবা না মানুক- শত জঞ্জাল পেরিয়ে আমার মাতৃভিুমি বাংলাদেশটি এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই- কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।’
অসম্ভব আশাবাদী লেখক তিনি। কোনো পান আর না পান- দেশকে ভালবেসে নিজের মেধা ও মননের সবটুকু তিনি উৎসর্গ করছেন দেশ ও মানুষের কল্যাণে। তিনি বাংলাদেশের সম্পদ-সম্ভাবনা-সমৃদ্ধি ও সমকালীন আর্থ-সামাজিক অবস্থা-অসঙ্গতি এবং মানবিক মূল্যবোধের জাগরণ সৃষ্টির প্রত্যয় নিয়ে লিখছেন প্রবন্ধ, কলাম ও ফিচার।
এস এম মুকুল কৃষি অর্থনীতি বিশ্লেষক, লেখক ও কলামিস্ট হিসেবেই সমধিক পরিচিত। তিনি সাপ্তাহিক শিক্ষাবিচিত্রার সহকারি সম্পাদক, মাসিক সায়েন্স ওয়ার্ল্ডের সহযোগি সম্পাদক, সাপ্তাহিক যুববার্তার নির্বাহী সম্পাদক, সাপ্তাহিক দেশপত্র পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি, জনতার নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম-এর ফিচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বর্তমানে তিনি বহুমাত্রিক ডটকম এর ফিচার এডিটর এবং এগ্রিলাইফ টুয়েন্টি ফোর এর কন্ট্রিবিউটর কলামিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। এয়াড়াও তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদে নিয়মিত কলাম ‘সমকালের কড়চা’র লেখক। এছাড়াও তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ, যুগান্তর, যায়যায়দিন, আলোকিত বাংলাদেশ, ভোরের কাগজ, বর্তমান, মানবকন্ঠ, ইনকিলাব, ইত্তেফাক, আজকালের খবর, খোলা কাগজসহ বিভিন্ন পত্রিকায় উপসম্পাদকীয়তে লিখছেন।
দৈনিক জনকন্ঠের অর্থনীতি পাতা এবং দৈনিক যায়যায়দিনের কৃষি ও সম্ভাবনা পাতায় নিয়মিতভাবে কৃষি অর্থনীতি এবং বাংলাদেশের শিল্প-সম্পদ-সম্ভাবনা বিষয়ে ফিচার লিখছেন। লেখক এস এম মুকুল-এর প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা-২৫টি। তিনি পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রির সার্বিক কল্যাণে বিস্তর লেখালেখির জন্য সম্প্রতি পোল্ট্রি মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০১৭-তে ভুষিত হয়েছেন। লেখকের সু-স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
ফয়জুন্নেসা মণি : কবি ও শিক্ষিকা
বহুমাত্রিক.কম