
ছবি- সংগৃহীত
বিজ্ঞানচর্চাসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নারীদের মেধার সর্বোচ্চ বিকাশে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করে আরও উপযোগী পরিবেশ তৈরির তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা। আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজিস্ট (বিএসএম) এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি প্রোগ্রামের যৌথ আয়োজনে ‘বিজ্ঞানচর্চায় নারী’ শীর্ষক সেমিনারে এই তাগিদ দেন তারা।
গতকাল (১২ মার্চ ২০২৩) রোববার রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে দেশের প্রতিথযশা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন নবীন বিজ্ঞান গবেষকরাও। আলোচনায় দেশের বিজ্ঞানচর্চায় নারীদের অংশগ্রহণ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাদের ঈর্ষণীয় সাফল্যের গল্প, কর্মক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাসহ উঠে আসে বিজ্ঞান গবেষণায় অর্জিত ফলাফল সমাজ ও রাষ্ট্রে কল্যাণে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিভঙ্গিগত বৈপরিত্যের নানা দিক।
সেমিনারে নির্বাচিত বিষয়ের ওপর বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মালবিকা সরকার ও ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বিশ্বাস করবী ফারহানা। একজন নারী গবেষক হিসেবে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বিশ্বাস করবী ফারহানা বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে নিজেকে নারী না ভেবে গবেষক হিসেবে সবটুকু ঢেলে কাজ করার চেষ্টা করেছি। কর্মক্ষেত্র যতো দুর্গম কিংবা ভীতিকরই হোক না কেন-অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে নিজের আত্মপ্রত্যয়ের কাছে তা বাধা হয়নি।’
‘আটলান্টিক মহাসাগরের সুদীর্ঘ যাত্রা করে সমুদ্র গবেষণায় কিংবা বরফ আচ্ছাদিত এন্টারর্টিকার মৃত্যু উপত্যকাতেও কাজ করতে গিয়ে সাহস হারাইনি। দৃঢ় মনোবল আর একাগ্রতার কাছে বাধা-বিপত্তি কাউকে দমাতে পারে না-আমি এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিজেকে দাঁড় করিয়েছি। এবং আমাদের দেশের নারীদের সেই আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হওয়ার আহ্বান জানাই-তারা যেন হাল না ছাড়েন’-যোগ করেন করবী ফারহানা।
বিজ্ঞান চর্চা কিংবা অন্য যেকোনো ক্ষেত্রেই হোক না কেন, আমাদের সমাজ বাস্তবতায় নারীদের পেশাগত জীবনে বড় সাফল্য আনতে অনুপযোগী কর্মপরিবেশ এক বাধা বাধা উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. মালবিকা সরকার বলেন, ‘বৈশিষ্টগত কারণে এবং একইসঙ্গে পরিবার ও পেশাগত দায়িত্ব একসঙ্গে সামলাতে গিয়ে আমরা বিদ্যমান অনুপযোগী কর্মপরিবেশে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতায় পড়ি। কিছু দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান উপযোগী পরিকাঠামো সৃষ্টি করলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে নারীদের কর্ম উপযোগী পরিবেশ নেই। এটি একটি বাস্তবতা। এক্ষেত্রে আমি দাবি করব, পরিবারের দায়িত্ব সামলে নারীদের কর্মক্ষেত্রটা অন্ততঃ ১১টায় শুরু হয়ে ৫টায় শেষ হওয়া উচিত। সেইসঙ্গে নারীদের মানসিক ও শারীরিক বাস্তবতার পুরুষ সহকর্মীদের সহনশীল আচরণও খুব জরুরি।’
দেশের বিজ্ঞান গবেষণাকে সাধারণের কল্যাণে পরিপূর্ণরূপে কাজে লাগাতে না পারার ব্যর্থতা হিসেবে নীতিনির্ধারকদের সত্যিকারের গবেষণা মনস্কতার অভাব কিংবা গবেষকদের সঙ্গে চিন্তার দুরত্ব হিসেবে চিত্রিত করে মালবিকা সরকার আরও বলেন, ‘আমাদের বিজ্ঞান গবেষণা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বিজ্ঞান গবেষকদের বিশ্বের সঙ্গে আন্তঃযোগাযোগ এখন অনেক এগিয়েছি। কিন্তু এটি স্বীকার করতেই হবে যে, এখানকার গবেষকদের সঙ্গে নীতিনির্ধারকদের নিবিড় সংযোগ কিংবা গবেষণায় অর্জিত ফলাফল প্রান্তিক মানুষের কাছে নিয়ে যেতে অনেক পদ্ধতিগত জটিলতা এখানো দূর করা যায়নি। এটি আমাদের অগ্রসরমান বিজ্ঞান গবেষণায় বড় বাধা হিসেবে মনে করি।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি প্রোগ্রামের পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক ড. নাদিয়া দীনের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলজিস্ট এর সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগম।
অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি প্রোগ্রামের প্রভাষক আফরোজা খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত বক্তব্যের ওপর আলোচনা করেন- ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথমেটিক্স ও ন্যাচারাল সাইন্সেস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ এফ এম ইউসুফ হায়দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম মঞ্জুরুল করিম ও ব্র্যাক বিশ্বববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি প্রোগ্রামের অধ্যাপক ড. মাহবুব হোসেন। আয়োজনে গণমাধ্যম সহযোগী ছিল বিশেষায়িত অনলাইন নিউজ পোর্টাল বহুমাত্রিক.কম (bahumatrik.com)।