
-লেখক
শেখ হাসিনা যেন নেতৃত্বের এক অপার বিস্ময়। পিতার মতোই চ্যালেঞ্জকে সম্ভাবনায় রূপান্তরের এক অসাধারণ রূপকার তিনি। তিনিই নেতা যিনি অন্যকে উৎসাহ দিতে পারেন। আরও বেশি স্বপ্ন দেখাতে পারেন। আর সেই স্বপ্নের সমান হওয়ার মতো প্রত্যয় সৃষ্টি করতে পারেন। সেই স্বপ্ন রূপায়ণে উদ্দীপ্ত করতে পারেন। সেই বিচারে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একজন রূপান্তরবাদী নেতা। তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ের জীবন শেষ করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশের আগে কী ছিল এই বাংলাদেশ? আর আজ কোথায় পৌঁছে গেছে সেই বাংলাদেশ? পাশাপাশি বিচার করলেই বোঝা যায় কী দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ।
নিঃসন্দেহে নেতৃত্বের পরম্পরায় বাংলাদেশ আজ উদ্ভাসিত। এ কথা ঠিক, পঁচাত্তরের আগস্টে আমাদের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রটি বিশ্বাসঘাতকদের আচমকা আঘাতে হঠাৎ খসে পড়েছিল। সেদিন আমাদের ‘স্বপ্নেরা পড়েছিল উদোম আকাশের নিচে’। সে কি কষ্ট! নির্দয়ভাবে আক্রান্ত হয়েছিল বাংলাদেশের হৃদয়। তাই তো আমাদের ‘দীঘল পুরুষ’ অভিমানে চলে গিয়েছিলেন অনেক অনেক দূরে। অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার পর বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে আরেকটি নক্ষত্র উদিত হয় ১৯৮১ সালের মে মাসে। যদিও তার চলার পথে ‘পাথর বিছানো ছিল’, তবু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় ঠিকই জয় করতে পেরেছেন। শত বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন সামনের দিকে নির্ভয়ে। নিঃশঙ্ক চিত্তে। সেদিন প্রকৃতিও তাকে স্বাগত জানিয়েছে গভীর আন্তরিকতায়। ঝড়বাদলের সেই দিনে কাকভেজা মানুষ বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বরণ করে নিয়েছিলেন আবেগে ও উচ্ছ্বাসে। ঠিক যেন বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারির পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল বাংলাদেশে। বাঙালির স্বপ্নসাধের এই পরম্পরা আসলেই ছিল দেখবার মতো। তাইতো কবি বাবলু জোয়ারদার ‘একখণ্ড বাংলাদেশ’ কবিতায় লিখেছেন :
‘গতকাল আকাশ থেকে একটি নক্ষত্র খসে পড়ল
আজ আকাশে একটি নক্ষত্র উদিত হয়ে
রোদের চাদর বিছিয়ে দিলো জমিনে
গ্রহণলাগা চাঁদ হৈ হৈ হেসে উঠল আকাশটা হয়ে গেল একখণ্ড বাংলাদেশ।’
এ আকাশ এখনও হাসে। এখনও কাঁদে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশের আকাশ ছিল দুঃখে মুহ্যমান। কিন্তু সেই কালো মেঘ বেশিদিন ঢেকে রাখতে পারেনি বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশ। ফের সাদা মেঘ জমাট বেঁধেছে। শরতের আকাশের মতো সাদা মেঘ ও কালো মেঘ মিলেই জড়াজড়ি করে রয়েছে বাঙালির মাথার ওপর। বঙ্গবন্ধুকন্যা নিরন্তর সংগ্রাম করে চলেছেন কালো মেঘ ঠেলে সরিয়ে দিয়ে সাদা মেঘের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য। তবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সম্ভাবনার পথরেখা নির্মাণ মোটেও সহজ নয়। তাই প্রায়ই ভয়ার্ত হয় বাংলাদেশের হৃদয়। তবু তিনি নিরন্তর বুনে চলেছেন আশার স্বপন। দেখিয়ে চলেছেন উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন।
এ প্রেক্ষাপটেই বঙ্গবন্ধুকন্যার এবারের জন্মদিনে বাঙালির দুই প্রিয় নান্দনিক নেতৃত্বের সেই পরম্পরার আলোকে কিছু কথা বলতে চাই। নিঃসন্দেহে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০০৯ সালে তিনি যখন দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসেন তখন বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ছিল ১০২.৩৭ বিলিয়ন ডলার। আর সেই অর্থনীতি ২০২২ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৪৬৫ বিলিয়ন ডলারে। ওই সময়ে বাজেটের আকার বেড়েছে ৭ গুণ। ১৩ বছরে ৪ গুণ বেড়ে যাওয়া এই অর্থনীতি আকাশ থেকে পড়েনি। সুচিন্তিত পরিকল্পনা এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সুদক্ষ নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ২০০৯ সালে যখন তিনি ক্ষমতাসীন হন তখন সারা বিশ্বই খাবি খাচ্ছিল আর্থিক মন্দায়। কিন্তু বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করে সেই সংকট সম্ভাবনায় রূপ দিতে পেরেছিল। নেতৃত্বের গুণেই এই অসাধ্য সাধন করা সম্ভব হয়েছিল। আজও বিশ্ব এক মহা অর্থনৈতিক সংকটে। করোনা সংকটের রেশ কাটতে না কাটতেই চেপে বসেছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নয়া ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা। চলছে স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন। এসবের প্রভাবে বিশ্ব সরবরাহ চেন আরও ভঙ্গুর হয়ে গেছে। জাহাজ ভাড়া কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। বিশ্বজুড়েই মূল্যস্ফীতির লু হাওয়া প্রবল বেগে বইছিল। কোনো কোনো দেশে এর প্রকোপ কমলেও অনেক দেশে এখনও তার প্রভাব প্রবল। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাতবারের বেশি তার সুদহার বাড়িয়েছে। এর ফলে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে গেছে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশকেই তাদের মুদ্রার মান কমাতে হয়েছে। ফলে আমদানি করা জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। বিশেষ করে শিল্পের কাঁচামাল, জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এর প্রভাবে দেশের ভেতরে তৈরি পণ্যের দামও বেড়েছে। তাই খাদ্য ও সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। মধ্যবিত্তসহ সাধারণ মানুষের প্রকৃত রোজগার কমে গেছে। তাই ভোগ ও বিনিয়োগ কমেছে। বিশেষ করে কম আয়ের মানুষের জীবন চলা বড়ই কঠিন হয়ে গেছে। মানুষের এ দুঃখকষ্ট দূর করার জন্য কম দামে কোটি পরিবারকে খাদ্যসহায়তাসহ নানা ধরনের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সচল রেখেছে সরকার। তা সত্ত্বেও আছে জনমনে অতৃপ্তি। আছে দুঃখ। বঙ্গবন্ধুকন্যা জনগণের এ কষ্টে সমব্যাথী। তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন নানাভাবে সাধারণ মানুষের জীবন চলার এ কষ্ট দূর করার জন্য। তবে সময়টা আসলেই চ্যালেঞ্জিং। জলবায়ু পরিবর্তন ও হঠাৎ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা ঠান্ডা যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব সত্ত্বেও তিনি অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলের।
একই সঙ্গে এ কথাটিও মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশ এরই মধ্যে দারুণ মুনশিয়ানার সঙ্গে কোভিড-১৯ মোকাবিলা করেছে। নিক্কেই কভিড-১৯ সূচকের ফল বলছে, মহামারি মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছে বাংলাদেশ। আর পুরো বিশ্বে এ বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। সেই একই রকম দক্ষতার সঙ্গে আমরা এখন লড়ে যাচ্ছি ইউক্রেন যুদ্ধের কুফল থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগেভাগেই কৃচ্ছ্রসাধন এবং কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করেছেন। খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারের জন্য যা যা দরকার তা করছেন। সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সারের দাম খুব একটা বাড়াতে দেননি। বিদ্যুতের লোডশেডিং সত্ত্বেও রাতভর কৃষকের সেচযন্ত্র চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে বৃষ্টিও হয়েছে। আমন ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। বোরোও ভালো হয়েছে। এখন চলছে নতুন করে এ সময়ের ফসল উৎপাদনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি। উপযুক্ত উদ্যোগ নিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ভালো বীজ, সেচ, কৃষিঋণ সরবরাহের জন্য নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে সরকার। মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে মানুষকে রেহাই দেওয়ার জন্য সামাজিক সুরক্ষা বলয় আরও সুসংহত করার চেষ্টা চলছে। হয়তো সামাজিক সুরক্ষা বিতরণ ব্যবস্থা শতভাগ নিরবচ্ছিন্ন নয়। তবু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বক্ষণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। তাদের স্বপ্নসাধ পূরণের জন্য।
নিজস্ব উদ্যোগে ৮ লাখের বেশি গৃহহীন পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। বাদবাকিদের জন্যও ঘর প্রদানের কাজ অব্যাহত রয়েছে। শিশুরা যাতে পড়তে পারে সেজন্য শিক্ষা উপবৃত্তি ও বিনামূল্যে বইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। অসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার এসব শিশু ও কিশোরের শিক্ষা, স্যানিটেশন এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসহায়তার ক্ষেত্র প্রসারিত করে চলেছে তার সরকার। ওপর থেকে তিনি নীতি নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। বাস্তবায়নের কাজ প্রশাসনের ও ব্যক্তি খাতের। সে কাজগুলো ঠিকমতো করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট জনের। আমাদের সাধ্যমতো উন্নয়ন কর্মসূচি যাতে ঠিকমতো বাস্তবায়ন হয় তার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সর্বশেষ তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নজাত অর্থনৈতিক মুক্তির পথরেখায় আরেকটি মাইলফলক যুক্ত করেছেন। সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও তিনি সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করেছেন। বিশেষ করে সামাজিক পাটাতনের সবচেয়ে নিচের অতিদরিদ্রদের জন্য ‘সমতা’, স্বনিয়োজিত খেটে খাওয়া মানুষের জন্য সুরক্ষা এবং প্রবাসে কর্মরত পরিশ্রমী মানুষের জন্য ‘প্রবাসী’র মতো সুদূরপ্রসারী পেনশন কর্মসূচি চালু করে আগামী দিনের প্রবীণদের জন্য জীবনের শেষবেলাকে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করার এক দুঃসাহসী নীতিকৌশল গ্রহণ করেছেন। অস্বীকার করার তো উপায় নেই যে, বিগত ১২-১৩ বছরে আড়াই কোটি গরিব মানুষ দারিদ্র্যরেখার নিচ থেকে ওপরে উঠে এসেছে। দারিদ্র্য নিরসনের এক রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং অন্তর্ভুক্তিকে যুগপৎ গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালকে ভিত্তি বছর ধরে যদি অর্থনীতির কয়েকটি সূচকের তুলনা করি তাহলেই বোঝা যাবে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ‘ল্যান্ডস্কেপ’-এর কী অভাবনীয় পরিবর্তন হয়েছে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের বার্ষিক বাজেটের আকার ছিল ৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩-এ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭.৫ বিলিয়ন ডলারে।
বেড়েছে ১২ গুণ। সার্বিক দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫১%। তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৮.৭%-এ। কমেছে প্রায় সাড়ে ৩ গুণ। সে সময় ৫৫% মানুষের উপযুক্ত খাবার পানি মিলত। এখন সে হার প্রায় ৯৯%। সে সময় প্রতি হাজারে ৮৪টি শিশুর মৃত্যু হতো। এখন তা কমে হয়েছে হাজারে ২১। ওই সময় সাক্ষরতার হার ছিল ৪৫%। এখন ৭৫.৬%। নারীর শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে ঘটে গেছে অসাধারণ উন্নয়ন। তখন প্রাথমিক স্কুলে বালিকাদের অংশগ্রহণ ছিল ৫৪%। এখন ৯৮.২৫%। কারিগরি শিক্ষার ওপরও ব্যাপক জোর দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তখন কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের হার ছিল মাত্র দশমিক ৮ শতাংশ। এখন ১৭.২৫%। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষকের অংশগ্রহণের হার ছিল ১.৫৩ লাখ। এখন তা ৪.০৩ লাখ। বেড়েছে ৩ গুণের মতো। মাধ্যমিক স্কুলে নারী শিক্ষকের সংখ্যা ছিল ৫৯ হাজার। এখন ৯০ হাজার। আনুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ২০০৬ সালে ছিল ২১.২%। এখন ৪৩.৪৪%। বেড়েছে দ্বীগুণের বেশি।
কৃষি ক্ষেত্রে অগ্রগতিও লক্ষ করবার মতো। ধানের উৎপাদন তো বেড়েই চলেছে। কৃষি গবেষণায় পর্যাপ্ত বাজেট সহায়তা দেওয়ার ফলে নতুন নতুন উচ্চফলনশীল এবং জলবায়ু পরিবর্তন-সহিষ্ণু নতুন ধানের জাত কৃষক পাচ্ছেন। তাই ফসল উৎপাদন বেড়েছে অভাবনীয় হারে। পাশাপাশি গবাদি পশু উৎপাদনের হারও বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। তখন এদের সংখ্যা ছিল ৪ কোটির মতো। এখন ৭ কোটির বেশি। মাছের উৎপাদন তখন ছিল ২১ লাখ টন। এখন ৫৩ লাখ টন। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে তখন উপকারভোগীর সংখ্যা ছিল ২১ লাখ। এখন ১ কোটি ৮ লাখ। তখন মোবাইলের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৯০ লাখ। এখন ১৮ কোটি ৩৫ লাখ। সংখ্যা দিয়ে আর ভারাক্রান্ত করতে চাই না পাঠকদের। খালি চোখেও আমরা দেখতে পাই অবকাঠামো ও সামাজিক উন্নয়নের পরিবর্তনগুলো। যদি কোভিড এবং ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু না হতো তাহলে এ পরিবর্তনের গতি আরও বাড়ত। তবু এডিবি বাংলাদেশের সর্বশেষ অর্থনৈতিক প্রক্ষেপণে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার বরং খানিকটা বাড়িয়ে ৬ শতাংশের বেশিই রেখেছে। প্রবৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই। কিন্তু ম্যাক্রো অর্থনীতির প্রধান দুই সূচক মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হার নিয়ে বেশ খানিকটা দুশ্চিন্তা তো আছেই। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার ক্ষয়ে যাওয়ার ঝুঁকি। তবে এসব ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য আগেভাগেই সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন, আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাড়তি সহায়তা লাভের উদ্যোগ, রপ্তানি ও প্রবাস আয় বাড়ানোর প্রচেষ্টা এবং কয়েকটি নিত্যপণ্যের মসৃণ আমদানির জন্য কোটাব্যবস্থা চালুর প্রচেষ্টাসহ ভারতের সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে ম্যাক্রো অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যার সরকার। তবে এ কথাও ঠিক দেশের সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা ও দুর্যোগ সৃষ্টির অপতৎপর মানুষেরও অভাব নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা এসব অপতৎপরতা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দেশি-বিদেশি শুভশক্তির সঙ্গে নিরন্তর আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সে কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক জরিপের মতে, এখনও দেশের ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছে। যদিও তাকে সহায়তা করছে যারা (প্রশাসন, স্থানীয় সরকার, দল ও নাগরিক সমাজ) তাদের আরও সক্রিয় হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে সে কথা অস্বীকারের সুযোগ নেই। তবু নির্দ্বিধায় বলা যায়, তিনিই আমাদের ভরসার বাতিঘর। বাঙালির ভাগ্যাকাশের উজ্জ্বল এক নক্ষত্র। এ নক্ষত্রের দ্যুতি আরও উজ্জ্বল হোক সে প্রত্যাশাই করছি তার এবারের জন্মদিনে।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর