
ছবি: বহুমাত্রিক.কম
গ্যাস অনুসন্ধানে বিস্ফোরণে বেশ কয়েকটি বসতবাড়ির পাকা দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (সিএনপিসি) গত এক সপ্তাহ ধরে কমলগঞ্জের দু’টি ও কুলাউড়ার একটি ইউনিয়নে গ্রাম এলাকায় অনুসন্ধানে ড্রিলিং বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। মাটির ৬০ থেকে ৭০ ফুট গভীরে দিনভর একের পর এক বিস্ফোরণের ফলে পাকা, আধাপাকা বসতবাড়িতে ফাটল দেখা দেয়া ও টিউবওয়েলে পানি না উঠারও অভিযোগ রয়েছে। ভূগর্ভে বার বার কম্পনে শিশু ও অসুস্থ রোগীরা আতঙ্কিত হচ্ছেন। ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় উদ্বেগ উৎকন্ঠায় স্থানীয়রা ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন। তবে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এর প্রতিনিধি দল রোববার ধূপাটিলার কয়েকটি বাড়ি পরিদর্শন করেন।
রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের ধূপাটিলা ও নোয়াগাও গ্রামের কয়েকটি বাড়ির সেমিপাকা দেয়ালে নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিস্ফোরণের পর থেকেই কয়েকটি টিউবওয়েলেও পানি উঠতে সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন। চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এর ড্রিলিং বিস্ফোরণে ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও এক সপ্তাহ ধরে বিস্ফোরণে বার বার কম্পনের কারণে শিশু ও রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
ধূপাটিলা গ্রামের আব্দুল মতিন ও সোহেল আহমদ বলেন, তিনদিন ধরে টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। একই গ্রামের জাহেদ মিয়া, জুবায়েল আহমদ, জুয়েল আহমদ, নূরুল মোত্তাকীন, নোয়াগাঁও গ্রামের আবুল মিয়া, কবির আহমদ ভূঁইয়া বলেন, তাদের পাকা দেয়ালে বিস্ফোরণের পরপরই ফাটল দেখা দিয়েছে। গ্যাস অনুসন্ধানকারী কোম্পানী এসব কাজ করলেও দেখার কেউ নেই। বিশাল ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠা দুরহ হবে বলে তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়ে কেউ কথা বলছেন না। ড্রিলিং এর কারণে আগামীতে দুর্যোগের সময়ে বড় ধরণের ক্ষতি বয়ে আনবে বলে তারা দাবি করেন।
কেছুলুটি গ্রামের আনসার মিয়া, শামসুল ইসলাম ও আবেদুর রহমান বলেন, পাকা ঘরের মাটি নিচে নামছে। তাছাড়া পূর্বে তাদের লোকজনের কারণে জমির যে পরিমাণ জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে তারও কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। এখন আবারো বাড়িঘরের ক্ষতি গুণতে হচ্ছে। ফটিকুল ইসলাম, আব্দুল লতিফসহ স্থানীয় সচেতন মহল বলেন, একই এলাকায় সপ্তাহ দিন যাবত শত শত বিস্ফোরণের কারণে পানি দূষণ দেখা দিতে পারে। বিশুদ্ধ পানির জন্য সমস্যা হলে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি হওয়ারও শঙ্কা প্রকাশ করেন। শমশেরনগর ইউনিয়নের আলমগীর হোসেন বলেন, বিস্ফোরণে গর্ভবতী মায়েরা বেশি আতঙ্কিত হচ্ছেন। এটি শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতি সৃষ্টি করছে।
এব্যাপারে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এর পাবলিক রিলেশন অফিসার ইমাম হোসেন বলেন, বাড়িঘরে ফাটলের অভিযোগ পেয়ে গত দু’দিন ধরে সরেজমিন পরিদর্শন করছি। কয়েকটি পাকা ঘরে পূর্বের ফাটলের সাথে নতুন করে কিছুটা কিছুটা ফাটল বেড়েছে বলে মনে হয়েছে। তাছাড়া ঘর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে শটিং হচ্ছে। তবে যারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সহ বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতি সাপেক্ষে সার্ভে ও ড্রিলিং কাজ চলছে। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দিন জানান, সরকার থেকে অনুমতি নিয়ে তারা সার্ভে শুরু করেছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদের কোম্পানীর পক্ষ থেকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।
উল্লেখ্য, কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার ৫শ’ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে সার্ভে, ড্রিলিং ও রেকর্ডিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছে বিজিপি, চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন। পেট্রোবাংলার তত্ত্বাবধানে ও সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লি: এর নির্দেশনায় এ্যাকরেজ ব্লক-১৩ ও ১৪ এর অবমুক্ত এলাকায় ৩-ডি সাইসমিক জরিপ প্রকল্প কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বহুমাত্রিক.কম