
ছবি- বহুমাত্রিক.কম
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ও ছত্রাকের আক্তমণে গেল দুই বছর সাভারের গোলাপ গ্রামের ফুল চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বিগত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে আশার বাণী হচ্ছে সাভার উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছেন সাভারে এবার ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা আশা করা যায়। ভাল ফলন হওয়ায় খুশি চাষীরা।
সাভার উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র সাভারের বিরুলিয়াইউনিয়নেই প্রায় ১৫শ’ কৃষক ফুল চাষের সাথে সম্পৃক্ত। এ ইউনিয়নে প্রায় ৩শ’ হেক্টর জমিতে সারা বছরজুড়েই বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল চাষ করে। গোলাপের পাশাপাশি ভিনদেশী ফুল চাষেও আগ্রহী হচ্ছে এখানকার চাষীরা। এরই মধ্যে এই ইউনিনে জারবেরা, মাম, জিপসি, গ্লাডিওলাস সহ বিভিন্ন প্রজাতির ভিনদেশী ফুলের চাষ করছে এখানকার চাষীরা। এসব ফুল চাষে লাভবান হচ্ছেন তারা।
সাভারের বিরুলিয়ার ফুল চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত দুই বছর করোনা মহামারীতে দেশে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ সকল ধরণের সামাজিক উৎসব বন্ধ থাকায় তারা ফুল বিক্রি করতে পারেনি। সেই সাথে ছত্রাকের আক্রমণ ছিল বেশি। যার ফলে তারা আর্থিকভাবে বিপুল পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে বিগত বছরের চেয়ে ইএবার বাগানে ভাল ফলন হওয়ায় সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
দুই বিঘা জমিতে গোলাপের চাষ করেছেন শাহ আলম নামের এক চাষী। তিনি জানান, গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভাল হয়েছে। গাছে গাছে ভালো ফুল ফুটেছে। বেচাকেনাও হচ্ছে ভাল। লুৎফর নামে এক চাষি বলেন, সামনে ১৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভালোবাসা দিবস,পহেলা ফাগুন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রয়েছে। এ তিনটি দিবসের জন্য অপেক্ষায় থাকি। আশা করা যায় এবছর ভাল বিক্রি করতে পারবো।
শামসুল নামে এক খুদ্র ফুল ব্যবসায়ী বলেন, আমরা এখন এক থুড়া (খাচি) ফুল বিক্রি করছি ৫০০ টাকা করে। আর একটি ফুল বিক্রি করছি ১০ থেকে ১৫ টাকায়। সামনের ১৪ ফেব্রুয়ারি। সেদিন উপলক্ষে দামও বেড়ে যাবে। চাহিদাও রয়েছে অনেকে। রফিকুল নামের আরেক ফুল চাষী জানান, দেশে চাহিদা অনুযায়ী তাজা ফুল উৎপাদন হওয়ায় সরকারের কাছে বিদেশ থেকে আমদানি করা কৃত্রিম ফুল নিষিদ্ধের দাবি জানান তিন।
সাভারে বিরুলিয়ায় গোলাপের পাশাপাশি বিদেশি ফুল জারবেরা ও চাষ হচ্ছে। প্রতিদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন। তাই ফুল দেখতে আসা পর্যটকদের ভিড়ে বিরুলিয়া এখন মুখরিত। রাজধানীর মীরপুর থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন মাহামুদা আক্তার। তিনি জানান, তারা মূলত প্রতি বছরই এখানে ঘুরতে আসেন। এখানকার সৌন্দর্য আর কাচা ফুলের সৌরভ আসলে সবারই উপভোগ করা উচিত। এখানে না এলে বোঝা যেত না কতটা সুন্দর এখানকার পরিবেশ।
আল ইমরান নামের একজন ঘুরতে এসেছেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে। তিনি জানান, বিভিন্ন মাধ্যমে জামতে পেরে তিনি এখানে ঘুরতে এসেছেন। এখানে না আসলে ফুলের তাজা মনোমুগ্ধকর গন্ধ যেন আন্দোলিত করে তাকে। সব মিলিয়ে এখানে এক অন্য্রকম অনুভূতি।
সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ 'বহুমাত্রিক.কম'কে বলেন, করোনার কারণে বিগত দুই বছরে বিরুলিয়ার ফুল চাষিরা যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন সামনের তিনটি দিবসে চাষিরা যাতে ফুলের ন্যায্যমূল্য পান সেই বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে চাষিরা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেই লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি অফিস তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে এবং বিগত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে এবার সাভারের ফুল চাষিরা প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।