Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

আষাঢ় ২৭ ১৪৩২, শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫

কমলগঞ্জে অবৈধভাবে পাহাড়ি ছড়ায় বালু উত্তোলন : হুমকিতে পরিবেশ 

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:১০, ২৩ নভেম্বর ২০১৯

প্রিন্ট:

কমলগঞ্জে অবৈধভাবে পাহাড়ি ছড়ায় বালু উত্তোলন : হুমকিতে পরিবেশ 

মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি ছড়া ও নদী থেকে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। বালু ব্যবস্থাপনা আইন কানুন না মেনে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা দেদারসে বালু উত্তোলনের পর বিক্রি করছেন। ফলে এক দিকে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার, কবরস্থান, রাস্তাঘাট ও ছড়ার বাঁধ ধ্বসে পড়ছে অন্যদিকে মাটি ও বালি ব্যবস্থপনা আইন অমান্য করে ধ্বংস করা হচ্ছে পরিবেশ-প্রতিবেশসহ দেশের সম্ভাবনাময়ী সম্পদকে।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার সুনছড়া, কামারছড়া, লাউয়াছড়া, জপলাছড়া, লঙ্গুছড়া, ধামালিছড়া, দেওছড়া, লাঘাটা ও ধলাই নদীর ব্রিজের নিচসহ অসংখ্য স্থান থেকে অবৈধ আর অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলিত হচ্ছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল নির্দ্বিধায় ছড়া ও নদীর স্থানে স্থানে বালু উত্তোলন করে ট্রাকযোগে বালু পরিবহন ও বিক্রি করছে। প্রশাসনের কয়েকটি অভিযানের পরও থামানো যায়নি বালু উত্তোলন। মানা হচ্ছে না কোন আইন। ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে ছড়ার পাড়। ছড়া থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ছড়ার দু`পাশ ক্রমান্বয়ে প্রশস্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পার্শ্ববর্তী ও চা বাগানের রাস্তাঘাট। এছাড়া কামারছড়ায় চায়ের টিলাভূমি, ছড়ার বাঁধ কেটে প্রকাশ্য দিবালোকে ট্রাক ও ট্রাক্টরযোগে সিলিকা বালু লুটপাটের হিড়িক শুরু হয়েছে। ছোট্র ছড়া সমুহেও ব্যবহৃত হচ্ছে বোম মেশিন। ফলে পরিবেশ-প্রতিবেশ ছাড়াও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।

শমসেরনগর চা বাগানের শ্রমিক সর্দার হরিচাষা বলেন, ধামালিছড়ায় মেশিনযোগে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে ১৫ নাম্বার সেকশনের বাজারটিলা এলাকার রাস্তা ভেঙ্গে পড়ছে। কমলগঞ্জের সদর ইউনিয়নের আব্দুল মছব্বিরসহ স্থানীয়রা বলেন, লঙ্গুছড়া থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ছড়ার বাঁধ ও কবরস্তানটিও ভেঙ্গে পড়ছে। বালু উত্তোলনের বিষয়টি এমন পর্যায়ে গিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে ছড়ার বাঁধ ধ্বসে পড়ছে।

অথচ এসব পাহাড়ি ছড়া থেকে বালু উত্তোলনে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর সিলেট বিভাগীয় সমম্বয়ক এড. শাহ শাহেদা আক্তার বেলার দায়েরকৃত মামলায় আদালতের নির্দেশনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তিনদিন ধরে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন ছড়া ও নদী ঘুরে বালু উত্তোলনের যে চিত্র পাওয়া গেছে তা খুবই দু:খজনক। এটি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নিয়মিত ফলোআপ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দেরও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসা উচিত। তিনি আরও বলেন, যে ধরণের ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য বেলার পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করা হয়েছিল বাস্তবে সে ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, খবর পাওয়ার পরই আমাদের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে বালুভর্তি ট্রাক আটক করে জরিমানাও আদায় করা হয়েছে। তবে এসব বিষয়ে ভূমি ও তহসিল অফিসের কর্মকর্তাদেরও ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং আরো জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে জানান।

বহুমাত্রিক.কম