ফাইল ছবি
ভারতের চন্দ্রযান-৩ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন চীনের এক শীর্ষ বিজ্ঞানী। ওই বিজ্ঞানীর দাবি, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে আদৌ অবতরণ করেনি। তার এমন মন্তব্যে শোরগোল পড়ে গেছে। শুরু হয়েছে সমালোচনা ও বিতর্ক।
গত ১৪ জুলাই চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে চন্দ্রযান-৩। এরপর ৩৯ দিনে প্রায় ৩ লাখ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এটি চাঁদে পৌঁছায়। গত ২৩ আগস্ট স্থানীয় সময় ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণ করে চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম। তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে রোভার প্রজ্ঞান।
চাঁদে চন্দ্রযান-৩-এর সফল অবতরণ ভারতের জন্য নিশ্চিতভাবেই একটা বড় সাফল্য। ভারত ও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর এই কৃতিত্বকে অভিনন্দন জানায় মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা থেকে শুরু করে ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ চীন এখনও দেশটির এই সাফল্যের স্বীকৃতি দেয়নি। উল্টো এখন বলছে, চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতেই নামেনি।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদন মতে, চীনের প্রথম মুন মিশন প্রোগ্রামের প্রধান বিজ্ঞানী কসমোকেমিস্ট ওইয়াং জিয়ান বলেছেন, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ভারতের চন্দ্রযান-৩-এর অবতরণের দাবি মিথ্যা।
গত ২৩ আগস্ট চন্দ্রযান-৩ চাঁদে অবতরণের পর উল্লাসে ফেটে পড়ে ১৪০ কোটি ভারতীয়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তখন দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে ছিলেন। সেখান থেকেই তিনি বলেন, আমাদের বিজ্ঞানীদের কঠোর পরিশ্রম ও প্রতিভার মাধ্যমে ভারত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছেছে। যেখানে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর আর কোনো দেশ পৌঁছাতে পারেনি।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোও অবতরণের পর বলেছে, তাদের চন্দ্রাভিযান সফল হয়েছে। চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণ করেছে। কিন্তু চীনা বিজ্ঞানীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। তারা বলেন, ভারতের চন্দ্র মিশনটি চাঁদের দক্ষিণ গোলার্ধে অবতরণ করেছে, দক্ষিণ মেরুতে নয়।
কিন্তু এখন সেই সত্য একেবারেই অস্বীকার করছেন বিজ্ঞানী ওইয়াং জিয়ান। চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের সদস্য ও ওইয়াং একাডেমির এ কর্মকর্তা বুধবার সায়েন্স টাইম পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, চন্দ্রযান-৩-এর অবতরণ স্থানটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ছিল না। এটি চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে বা আর্কটিক মেরু অঞ্চলেও অবতরণ করেনি।’
চীনের চন্দ্র মিশন কর্মসূচির জনক হিসেবে পরিচিত ওইয়াং জিয়ান ভারতের চন্দ্রজয়ের বিষয়টি স্বীকার করছেন। তবে তিনি বলেছেন, ‘চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নয়, ৬৯ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশে অবতরণ করেছে। জায়গাটি দক্ষিণ মেরুটির কাছাকাছি কোথাও নয়।’
পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব অনুযায়ী, ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি অক্ষাংশে ঝুঁকে প্রদক্ষিণ করে। ফলে সেই অবস্থান অনুযায়ী পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের অক্ষাংশ হয় ৬৬ দশমিক ৫ থেকে ৯০ ডিগ্রির মধ্যে। চাঁদ কেবলমাত্র ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি ঝুঁকে রয়েছে। ফলে চাঁদের দক্ষিণ মেরু ৮৮ দশমিক ৫ থেকে ৯০ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ।
ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণার সংস্থার বক্তব্য, চন্দ্রযান-৩ যেখানে অবতরণ করেছে, তা দক্ষিণী ধ্রুব কেন্দ্র নয়। চাঁদের এই অংশে অনেক গভীর গর্ত রয়েছে। ফলে সেখানে ‘সফট ল্যান্ডিং’ করা অসম্ভব।
আবার মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বক্তব্য, ৮০ থেকে ৯০ ডিগ্রি দক্ষিণ অংশটিকে চাঁদের দক্ষিণ ধ্রুব কেন্দ্র বলা হয়। দক্ষিণ ধ্রুব কেন্দ্র থেকে বাইরে হলেও তা অন্যান্য মুন মিশনের তুলনায় অনেকটাই অজানা-অচেনা জায়গায় অবতরণ করেছে চন্দ্রযান-৩। নাসার বিজ্ঞানী নেলসন বলেন, 'চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান ৩-এর সফল সফট ল্যান্ডিংয়ের জন্য ইসরোকে অসংখ্য ধন্যবাদ।'