
মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের ভ্রান্ত নীতির কারণে আজকে দেশের সবচেয়ে করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, সরকারের যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তা একেবারে ভেঙে পড়েছে, একেবারেই লেজে গোবরে অবস্থা হয়ে গেছে। এখানে কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকারের তরফ থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতর আছে। তারা একেক সময় একেক রকম কথা বলছে।রোববার (২৮ জনু) রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী হোমিওপ্যাথিক দলের উদ্যোগে করোনা ভাইরাস প্রতিষেধক ওষুধ বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হোন।
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে একটা গাইড লাইন দেবে, সেই গাইড লাইনও তারা দিতে পারে নাই। কয়েকদিন আগে চীনা বিশেষজ্ঞরা এসেছিলেন। তারা এসে ঠিক একই কথা বলেছেন যে, বাংলাদেশে সবকিছু এলোমেলো। এখানে কোথায় রোগ আছে সেটাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ তারা (সরকার) চিহ্নিত করতে পারছেন না এবং সেটাকে চিহ্নিত করবার জন্য কোনো ব্যবস্থা তাদের নেই।
তিনি বলেন, অনেকদিন আগেই বলা হয়েছে দেশে রেড জোন, ইয়োলো জোন গ্রিন জোন করা হবে। ঢাকা শহরকে কতগুলো অঞ্চল ভাগ করে রেড জোন চিহ্ন করে তারা কঠোরভাবে লকডাউন করবেন। একমাত্র পূর্ব রাজাবাজার ছাড়া আর কোথাও এটা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আসলে আমার মনে হয় সরকার জানেও না যে একজ্যাক্টলি তারা কি করবেন? কি করতে চাচ্ছেন? এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি গাইডলাইন দিবে সেটিও তারা দিতে পারেনি।
বিএনপির এ নেতা আরো বলেন, পুরো বাংলাদেশের কোভিড-১৯ মোকাবেলা করার জন্য যে একটা ম্যাপ, একটা রোড ম্যাপ, একটা পরিকল্পনা, একটা প্রতিরোধ পরিকল্পনা তার সবটাই অনুপস্থিত এখানে। আজকের দুর্ভাগ্যের কথা আমাদের সরকার প্রথম থেকেই এই বৈশ্বিক মহামারিকে উপেক্ষা করেছে, অবহেলা করেছে। এটার পিছনে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। পরবর্তীতে এটা যখন একটি মহামারি আকারে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া শুরু করেছে তখন বাংলাদেশে এটা নিয়ে কিছুটা কথা বলা শুরু করেছে, কাজ করেছে।
করোনা মোকাবিলায় সরকারের দেওয়া প্যাকেজ প্রণোদনার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সেটা মূলত ছিলো ব্যাংক ঋণ। এই মুহুর্তে সরকারের বড় যে বিষয়টা গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিলো সেটা হলো মানবিক দিকটা। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে, লকডাউনের কারণে, সাধারণ ছুটির কারণে যারা কর্মহীন হয়ে পড়ছে অথবা যারা কাজ পাচ্ছে না তাদের ন্যুনতম বেঁচে থাকার জন্য যে প্রয়োজন, সেই প্রয়োজনের টাকাও সরকার তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি।
২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ সবচেয়ে কম। কি দুর্ভাগ্য এই জাতির। আজকে রাস্তায় মানুষ মারা যাচ্ছে। টেস্ট করতে পারছে না, কোনো টেস্ট হচ্ছে না। এরপরেও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাহেবের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের যে কিট উদ্ভাবন করলেন সেই কিটকে তারা (সরকার) নাকচ করে দিয়েছেন। এই চরম দুঃসময়ে আজকে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। দুর্ভাগ্য এই জাতির এমন একটি সরকার দেশ শাসন করছে যারা নির্বাচিত সরকার নয়, যাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক দলকে করোনা মোকাবিলায় এগিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, হোমিওপ্যাথিক নিঃসন্দেহে একটি কার্য্করী চিকিৎসা ব্যবস্থা। ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথ দীর্ঘদিন ধরে বেঁচে আছেন। তিনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করেন। বহুদিন আগে বাংলাদেশে উনি যখন এসেছিলেন তখন সঙ্গে তার হোমিওপ্যাথিক বাক্সটি ছিলো। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথম মীরপুরে হোমিওপ্যাথিক কলেজ স্থাপন করেছিলেন। তিনি দিনাজপুরে হোমিওপ্যাথিক শিক্ষার প্রসারে জায়গাও বরাদ্দ দিয়েছিলেন।
চিকিৎসক দলের সভাপতি ডা. আরিফুর রহমান মোল্লার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ডা. শফিকুল আলম নাদিমের পরিচালনায় সহ-সভাপতি মশিউজ্জামান পান্নু, মজিবুল্লাহ মুজিব, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম জাকির হোসেন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী নিজাম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।