
ফাইল ছবি
মিয়ানমারের একটি বন্দর প্রকল্প থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে জাপানের তিনটি কোম্পানি। তারা মানবাধিকার সম্মুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মিয়ানমার এবং জাপানের নাগরিক সমাজের তদন্তের জবাবে কামিগুমি, সামিতোমো করপোরেশন ও টয়োটা তসুশো নামের এই তিন কোম্পানি বলেছে, তারা এরই মধ্যে ‘লিকুইডেশন’ প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং ইয়াঙ্গুনের থানলিইনে অবস্থিত থিলাওয়া মাল্টিপারপোজ ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনাল থেকে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নাগরিক সমাজের গ্রুপগুলো বলেছে, কর্মীরা এর ফলে যে কর্মহীনতার শিকার হবে এ সময়ে তাদের নিরাপত্তা ও স্থানান্তরকে সমর্থন করার ব্যবস্থা নিচ্ছে তারা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য ইরাবতী।
উল্লেখ্য, এই টার্মিনালটির উন্নয়ন কাজ করছিল জাপানের অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্স এবং এভার ফ্লো রিভার। উল্লেখ্য, এভার রিভার গ্রুপটি মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন মিয়ানমা ইকোনমিক হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আছে। ১৯শে মার্চ জাস্টিস ফর মিয়ানমার (জেএফএম) সহ সাতটি এনজিও চিঠি লিখেছে কামিগুমি, সুমিতোমো করপোরেশন, টয়োটা তসুশো, সরকার সমর্থিত জাপান ওভারসিজ ইনফ্রাস্ট্রাকটার ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন ফর ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট, নিপ্পন এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন্স্যুরেন্সকে।
তাতে জানতে চাওয়া হয়েছে, ২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে কিনা, মিয়ানমার পোর্ট অথরিটি যখন টার্মিনালটির দীর্ঘমেয়াদে পরিচালনা করবে তারপর কাজ হারানো শ্রমিকদের নিষয়ে কোম্পানির পরিকল্পনা কি? চিঠিতে এ প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু কিভাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সুরক্ষিত রাখা হবে এ বিষয়ে তিনটি কোম্পানির কেউই বিস্তারিত তথ্য দেয়নি। কিভাবে প্রকল্পের সম্পদ হ্যান্ডেল করা হবে, তারও কোনো জবাব দেয়নি। এসব খাতে সুবিধা জান্তা সরকারকে দেয়া হবে কিনা, কিভাবে এ খাতের রাজস্ব সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত এনটিটিগুলোতে যাওয়া বন্ধ করা হবে, তারও কোনো উত্তর দেয়া হয়নি।
বুধবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাপান সরকারের তহবিল ব্যবহার নিয়ে সরকারি পর্যায়ে জবাবদিহিতার অভাব আছে জাপান ওভারসিজ ইনফ্রাস্ট্রাকটার ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন ফর ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্টের। নিপ্পন এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন্স্যুরেন্স বলেছে, এ প্রকল্পের নিম্নতম পরিবেশগত প্রভাব আছে। তবে এতে মানবাধিকারের উদ্বেগের বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। সাতটি এনজিওর একটি মেকং ওয়াচের ইউকা কিগুচি বলেন, এই দুটি সংগঠন যে জবাব দিয়েছে তাতে ব্যবসা ক্ষেত্রে দায়িত্বের ঘাটতি আছে। এসব এনজিও জাপান ওভারসিজ ইনফ্রাস্ট্রাকটার ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন ফর ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট এবং তিনটি কোম্পানিকে এই প্রকল্পে কাজ হারানো ব্যক্তিদের বিষয়ে স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানায়। বলা হয়, মানবাধিকার রক্ষায় এটা তাদের দায়িত্ব। একই সঙ্গে তাতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা যাতে কোনো আর্থিক সুবিধা না পায় তা প্রতিরোধ করা।
জাস্টিস ফর মিয়ানমারের মুখপাত্র ইয়াদানার মুয়াং বলেন, সেনাবাহিনী অব্যাহতভাবে নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। ২৮শে মার্চের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পরেও তীব্রভাবে আকাশ থেকে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। মানবাধিকারকে সম্মান করে না এমন ব্যক্তিরা নৃশংসতা আরও বাড়িয়ে তোলার জন্য ঝুঁকি। কোম্পানিগুলো এবং জাপান সরকারকে অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে যে, তারা মানবাধিকারের মানদণ্ডের অধীনে কিভাবে একটি জান্তার অপরাধ এড়াচ্ছে।