Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৯ ১৪৩১, মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪

র‍্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু :রিটের শুনানি ৫ এপ্রিল পর্যন্ত মূলতবি

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:৪২, ২৮ মার্চ ২০২৩

প্রিন্ট:

র‍্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যু :রিটের শুনানি ৫ এপ্রিল পর্যন্ত মূলতবি

ফাইল ছবি

নওগাঁয় র‍্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে করা রিটের শুনানি আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত মূলতবি করেছেন হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার বেলা ২টায় এ সংক্রান্ত রিট আবেদন আমলে নেয়া হলেও শুনানি আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত মূলতবী করেন আদালত।

এর আগে সকালে সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্টের নথি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পৌঁছায়। ঘটনাটি আদালতের নজরে আনা আইনজীবী এ ঘটনা তদন্তের জন্য একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন।

তার আগে গত সোমবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তলব করেন। একই সঙ্গে সুলতানা জেসমিন র‍্যাবের কোন কোন কর্মকর্তার অধীন ছিলেন, তাদের নামের তালিকা আদালতে দাখিল করতে বলা হয়।

উল্লেখ্য, সুলতানা জেসমিন নামে ওই নারী নওগাঁ সদর ভূমি অফিসে অফিস সহকারী ছিলেন। গত ২২ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে তাকে আটক করে র‌্যাব। গত শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

জেসমিনের মামা এবং নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল জানান, বুধবার সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয় জেসমিন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র‍্যাবের লোকজন তাকে ধরে নিয়ে যায়। তবে তাকে র‍্যাবের কোন ক্যাম্পে নেয়া হয়, সে ব্যাপারে কিছুই জানতে পারেননি তারা। দুপুর ১২টার পর জানতে পারেন, জেসমিন সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে গিয়ে র‍্যাবের লোকজন দেখতে পান। কিন্তু জেসমিন কোনো কথা বলতে পারছিলেন না। কিছুক্ষণ পর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়। যদিও মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে শনিবার দুপুরের পর।

নাজমুল হক আরও জানান, ১৭ বছর আগে সুলতানার সঙ্গে তার স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর এক সন্তানকে অত্যন্ত কষ্ট করে বড় করছিলেন তিনি। শহরের জনকল্যাণ এলাকায় একটা ভাড়া বাড়িতে থেকে ছেলেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করাচ্ছিলেন। তিনি ভূমি কার্যালয়ের একজন সামান্য কর্মচারী। কোনো দিন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগ কেউ করেননি।

এদিকে এ বিষয়ে র‍্যাব-৫-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাজমুস সাকিব বলেন, জেসমিনের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার একটি অভিযোগ পায় র‍্যাব। তার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ ছিল। ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখে র‍্যাব অভিযোগের সত্যতা পায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুক্তির মোড় এলাকা থেকে র‍্যাবের হেফাজতে নেয়া হয়। কিন্তু আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহীতে নেয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রাজশাহীতে নেয়ার পর তার অবস্থা আরও খারাপ হয়। শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ট্রোক করে তিনি মারা যান।

নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মৌমিতা জলিল বলেন, বুধবার দুপুরে র‍্যাবের লোকজন অসুস্থ অবস্থায় এক নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। জরুরি বিভাগে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ওই রোগী হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহীতে পাঠানো হয়। ওই সময় তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, যতটুকু জানতে পেরেছি, র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই নারী পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। তারপর তাকে নওগাঁ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সিটি স্ক্যান করে জানা গেছে, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। তার মাথায় ছোট্ট একটি লাল দাগ ছিল। শরীরে অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

নিহত সুলতানার ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত সময় সংবাদকে জানান, ‘আমার মা চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। র‍্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। যার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।’

সুলতানার ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকতের অভিযোগের বিষয়ে র‍্যাবের কর্মকর্তা মেজর নাজমুস সাকিব বলেন, আটকের পর ওই নারীকে র‍্যাবের কোনো ক্যাম্পে নেয়া হয়নি। আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পর থেকেই তার পরিবারের লোকজন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার সঙ্গেই ছিলেন। নির্যাতনের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটা সঠিক নয়।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer