Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

মিয়ানমারে সেনাবিরোধী বিক্ষোভে গুলিতে নিহত বেড়ে ১৮

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:৪৮, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আপডেট: ০৯:৩২, ১ মার্চ ২০২১

প্রিন্ট:

মিয়ানমারে সেনাবিরোধী বিক্ষোভে গুলিতে নিহত বেড়ে ১৮

ছবি- সংগৃহীত

মিয়ানমারের সামরিক সরকারের পতন দাবিতে চলমান বিক্ষোভে গতকাল রোববার পুলিশের গুলি ও সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে। গুলি, কাঁদানে গ্যাস, স্টান গ্রেনেড ও রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন অনেকে। তবে বিক্ষোভকারীদের দাবি, নিহতের সংখ্যা আরও বেশি।

হতাহতের ঘটনার পর সেনাবিরোধী আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে মিয়ানমার। ফলে ব্যাপক মাত্রায় দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে জান্তা সরকার। দাঙ্গা পুলিশের পাশাপাশি গতকাল থেকে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। সশস্ত্র সেনা-পুলিশ ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়, দাউই, মায়িক, বাগো, পোকোক্কুসহ বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদকারীদের ওপর সরাসরি গুলি চালিয়েছে। এসব এলাকার রাজপথে দেখা গেছে ছোপ ছোপ রক্তের চিহ্ন। খবর এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্সের।

জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয়ের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, `মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে গুলি চালানো হয়েছে। নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৮ জন। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অব্যাহত সহিংসতার নিন্দা করছি এবং সেনাবাহিনীকে দ্রুত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে শক্তি প্রয়োগ বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।` তিনি আরও বলেন, রোববার মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও সেনাবাহিনী বিক্ষোভে হামলা চালিয়েছে। তারা সরাসরি গুলি চালিয়েছে। আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যমে তথ্য এসেছে, এসব হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। অহিংস বিক্ষোভে এ ধরনের শক্তি প্রয়োগ অগ্রহণযোগ্য।

গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিসহ শীর্ষ রাজনীতিকদের আটক ও গৃহবন্দি করে। এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দেন সেনাপ্রধান মিন অং হদ্মাইং। তবে তার এ প্রতিশ্রুতি প্রত্যাখ্যান করে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, সু চিসহ গণতান্ত্রিক নেতাদের মুক্তির দাবিতে তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে দেশটিতে। এ পরিস্থিতিতে বিক্ষোভ দমনে ক্রমেই চড়াও হচ্ছে জান্তা সরকার। এ পর্যন্ত সহস্রাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

চিকিৎসক, রাজনীতিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্ৃব্দত করে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, গতকালের বিক্ষোভ ও সংঘর্ষে অনেক মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গণমাধ্যমে পোস্ট করা ছবিতে দেখা গেছে, মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে ধরাধরি করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে; তাদের মধ্যে কয়েকজন রক্তাক্ত।

`মিয়ানমার নাও` নামে একটি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, বিক্ষোভকারীরা কীভাবে রক্তাক্ত হয়েছেন, তা পরিস্কার নয়। তবে লোকজনকে `গুলি করা` হচ্ছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যাচ্ছে না। ইয়াঙ্গুনের স্টান গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের দমনে ব্যর্থ হয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ছুড়ছে পুলিশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, বুকে গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনার পর মৃত ঘোষণা করা হয়। মিয়ানমারের স্থানীয় গণমাধ্যমে এই মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হয়েছে।

রোববার ইয়াঙ্গুনে শিক্ষকদের একটি বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে পুলিশ। তখন সেখানে তিন নিউ ই নামে একজন নারী শিক্ষক মারা যান। তবে তার মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি বলে ওই নারীর মেয়ে ও তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন। ইয়াঙ্গুনের মূল শহরে স্টান গ্রেনেড দিয়ে শিক্ষকদের একটি বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। এসময় এক নারী মারা গেছেন। যদিও তার মৃত্যুর কারণ নির্দিষ্ট করে এখনও জানা যায়নি। ওই নারীর মেয়ে এবং এক সহকর্মী এ তথ্য জানিয়েছেন। এছাড়া পরে আরও চারজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করতে স্টান গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে ব্যর্থ হওয়ার পর পুলিশ ইয়াঙ্গুনের বিভিন্ন এলাকায় গুলি চালাতে শুরু করে। এসময় ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি। প্রায় শুরু থেকেই জনসাধারণের বিক্ষোভ চলছে। শনিবার দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর অবস্থান নেয় বিক্ষোভের বিরুদ্ধে। এক নারী গুলিবিদ্ধ হন এবং বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর রোববারও বিক্ষোভ প্রতিহত করতে সহিংস পদক্ষেপ শুরু করে তারা।

রয়টার্স বলছে, তবে দেশজুড়ে বিক্ষোভে গুলি চালানো ও হতাহতদের ব্যাপারে পুলিশ বা ক্ষমতাসীন সামরিক কাউন্সিলের মুখপাত্রের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। জানতে চেয়ে ফোন করা হলে কোনো সাড়া দেয়নি।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer