Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

১৪৩ প্রজাতির দেশীয় জীবিত মাছের জিন ব্যাংক স্থাপন, শনিবার উদ্বোধন

মোঃ নজরুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

প্রিন্ট:

১৪৩ প্রজাতির দেশীয় জীবিত মাছের জিন ব্যাংক স্থাপন, শনিবার উদ্বোধন

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

ময়মনসিংহ : বাংলাদেশে এই প্রথম বিলুপ্তপ্রায় সুস্বাদু পুষ্টিসমৃদ্ধ জীবিত দেশীয় মাছের জিনব্যাংক স্থাপন করেছে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। শনিবার সকাল ১০টায় বিএফআরআই ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশীয় মাছের লাইভ জিনব্যাংক উদ্বোধন করবেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম।

বিএফআরআই মহাপরিচালক ড. ইয়ািহয়া মাহমুদ জানান, দেশে মোট ২৬০টি মাছের জাত রয়েছে তন্মধ্যে এই জিনব্যাংকে জীবিত দেশীয় ১৪৩টি প্রজাতির মাছ স্থান পেয়েছে। জিন ব্যাংক স্থাপনের ফলে এই মাছগুলোর জাত এখন থেকে আর বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না । তিনি আরো দেশের মিঠাপানি ও সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের সার্বিক উন্নয়ন ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা পরিচালনা এবং সমন্বয় সাধনে নিয়োজিত জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি। গবেষণা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর একুশে পদক ২০২০ অর্জন করে।

দেশীয় মাছের লাইভ জিনব্যাংক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএফআরআই মহাপরিচালক ড. ইয়ািহয়া মাহমুদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ, মৎস্য অধিদপ্তরের মহপরিচালক কাজী শামস আফরোজ, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব তৌফিকুল আরিফ ও মোঃ লিয়াকত আলী প্রমূথ।

বিএফআরআই স্বাদুপানি কেন্দ্রের চলমান গবেষণা কার্যক্রম কৈ মাছ, মনোসেক্স তেলাপিয়া এবং সাদা পাঙ্গাস মাছের জার্মপ্লাজম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করবেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম।

এছাড়াও বিএফআরআই স্বাদুপানি কেন্দ্রের চলমান গবেষণা কার্যক্রম মাছের জাত উন্নয়ন, বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণ ও চাষ, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ, অপ্রচলিত মৎস্য সম্পদ কুচিয়া ও মুক্তা চাষ, মহাশোল ও পাঙ্গাস মাছের প্রজনন ও চাষ  ইত্যাদি পরিদর্শণ করবেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম।

শনিবার বিকেলে  বিএফআরআই গবেষণার অগ্রগতি পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপন পর্যবেক্ষণ করবেন। পে বন্যাউত্তর পুনর্বসন কার্যক্রমের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মাঝে মাছের পোনা বিতরণ করবেন মন্ত্রী।

বিএফআরআই মহাপরিচালক ড. ইয়ািহয়া মাহমুদ  জানান, ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। পরিবেশ এবং মৎস্য সম্পদের প্রকৃতি অনুযায়ী দেশের ১০টি এলাকায় ইনস্টিটিউটের ৫টি গবেষণা কেন্দ্র ও ৫টি উপকেন্দ্র রয়েছে। ইনস্টিটিউটের গবেষণা কার্যক্রম এসব কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়ে থাকে। মৎস্যসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও উৎপাদন বৃদ্ধির আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন ইনস্টিটিউটের গবেষণা কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য।

এছাড়াও বিএফআরআই এর অন্যান্য কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে স্বল্প ব্যয় ও স্বল্প শ্রমনির্ভর পরিবেশ উপযোগী উন্নত মৎস্যচাষ ও ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি উদ্ভাবন। মৎস্য বাণিজ্যিকীকরণ সহায়ক বহুমূখী মৎস্যজাত পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, মান নিয়ন্ত্রণ ও বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন বিষয়ক গবেষণা পরিচালনা। চিংড়িসহ অন্যান্য অর্থকরী জলজসম্পদের উন্নয়নে যথাযথ প্রযুক্তি উদ্ভাবন। গবেষণাভিত্তিক প্রযুক্তি হস্তান্তর, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি গঠন। মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন নীতি প্রণয়নে সরকারকে পরামর্শ প্রদান।

বিএফআরআই মহাপরিচালক আরো  জানান, ইনস্টিটিউট জাতীয় চাহিদার নিরিখে নিবিড় গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লগ্ন (১৯৮৪ ইং) হতে মৎস্য প্রজনন, চাষ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ৫০ টি প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সাফল্য লাভ করেছে। উদ্ভাবিত প্রযুক্তিসমূহের অধিকাংশই প্রশিক্ষণ ও প্রদশর্নী কার্যক্রমের মাধ্যমে সফলভাবে সারাদেশে চাষী ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠাকালীন বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন ছিল মাত্র ৮.০ লক্ষ মে. টন। ইনস্টিটিউট কর্তৃক লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের ফলে ২০১৪ ইং সালে দেশে মাছ উৎপাদন ৩৪ লক্ষ মে. টনে উন্নীত  হয়েছে।

ড. ইয়ািহয়া জানান, বিএফআরআই  এর ভবিষ্যৎ গবেষণা পরিকল্পনা গুলোর মধ্যে  রয়েছে- দেশের চাহিদা ও বাস্তবতার আলোকে গবেষণালব্ধ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং মৎস্যসম্পদের উন্নয়নে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ গবেষণা পরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে। তন্মধ্যে উন্নত জাত ও বিপন্ন প্রজাতির মাছের জিন পুল সংরক্ষণের লক্ষ্যে হিমায়িত পদ্ধতিতে সিমেন সংরক্ষণ, বাণিজ্যিক গুরুত্বসম্পন্ন লোনাপানি ও সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, চিংড়ির ভাইরাস রোগ সনাক্তকরণের জন্য PCR Based গবেষণা পরিচালনা, সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও মজুদ নির্ণয়ের গবেষণা, সামুদ্রিক জলজ উদ্ভিদের (Sea Weed) চাষ, স্বাদুপানি ও সামুদ্রিক মাছের জীব বৈচিত্র্য ও জেনেটিক রিসোর্স গবেষণা, জলজ পরিবেশে দূষণের কারণ, মাত্রা ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে গবেষণা, ফার্মিং সিষ্টেম মডেলিং এবং কাঁকড়া, কুচিয়া, শামুক, ঝিনুকসহ অপ্রচলিত জলজ প্রাণীর প্রাকৃতিক জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন। এসব পরিকল্পনাধীন গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে আরও উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন সম্ভব হলে দেশে আগামী ২০২১ সাল নাগাদ ৪৫ লক্ষ মে. টন মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে যুগান্তকারী অগ্রগতি সাধিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিএফআরআই মহাপরিচালক।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer