আগামী ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে করে ক্ষুদ্র, মাঝারিসহ সব ধরনের শিল্প, গাড়ি, বাড়ি, আবাসনসহ কোনো ঋণে আর সিঙ্গেল ডিজিটের বেশি সুদ নিতে পারবে না ব্যাংকগুলো।
বিদ্যমান ঋণেও সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে হবে। এর মাধ্যমে দেশে আবার নিয়ন্ত্রিত সুদহার ব্যবস্থা চালু হলো। তবে আমানতের ওপর ব্যাংকগুলো নিজেদের মতো করে সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে।সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতে সুদহারের সীমা বেঁধে না দিলেও ব্যাংকগুলো নিজেরা বসে ৬ শতাংশের বেশি সুদ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সিদ্ধান্তের আলোকে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে যা কার্যকরের কথা। যদিও অনেক ব্যাংক এখনও মেয়াদি আমানতে ৯ শতাংশের বেশি সুদ দিচ্ছে। বিশেষ করে নতুন ও সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদে আমানত নিচ্ছে। এছাড়া ব্যাংকগুলো এসএমই খাতকে ৯ শতাংশ সুদের বাইরে রাখার দাবি জানালেও তা রাখা হয়নি। বরং কোনো ব্যাংক যেন এসএমই ও শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ কমাতে না পারে, সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এরপরও নানা কৌশলে ব্যাংকগুলোর এসএমই ঋণ কমানোর আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব খাতের ঋণের ওপর সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। আর প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণের বিদ্যমান ৭ শতাংশ সুদহার অপরিবর্তিত থাকবে। এভাবে সুদহার ধার্য করার পরও কোনো ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে যে সময়ের জন্য খেলাপি হবে অর্থাৎ মেয়াদি ঋণ বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খেলাপি কিস্তি এবং চলতি মূলধন ঋণের ক্ষেত্রে মোট খেলাপি ঋণের ওপর সর্বোচ্চ ২ শতাংশ হারে দন্ড সুদ আরোপ করা যাবে। এর বাইরে অন্য কোনো সুদ আরোপ করা যাবে না। আর চলতি বছর থেকে ব্যাংকের মোট ঋণের স্থিতির মধ্যে এসএমইর উৎপাদনশীল খাতসহ শিল্প খাতে প্রদত্ত ঋণ স্থিতি পূর্ববর্তী ৩ বছরের গড়হারের চেয়ে কোনোভাবেই কম হতে পারবে না। এর ফলে কোনো ব্যাংক এসএমই খাতে ঋণ কমাতে পারবে না।
সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংক ঋণে উচ্চ সুদ দেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি, বৃহৎ শিল্পসহ ব্যবসা ও সেবা খাতের বিকাশে প্রধান অন্তরায় হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদহার উচ্চমাত্রায় হলে সংশ্লিষ্ট শিল্প, ব্যবসা ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন উৎপাদকরা। ফলে শিল্প, ব্যবসা ও সেবা প্রতিষ্ঠান কখনও কখনও প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। এতে করে ঋণগ্রহীতা অনেক ক্ষেত্রে যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারেন না। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে ঋণ শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয় এবং সার্বিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এরকম প্রেক্ষাপটে শিল্প, ব্যবসা ও সেবা প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে অধিক সক্ষমতা অর্জনসহ শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, ঋণ পরিশোধে সক্ষমতা এবং কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।