আগামী সেপ্টেম্বরে চালু হতে যাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত ৬ লেনের দৃষ্টিনন্দন কালনা সেতু। সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, নড়াইলের কালনাঘাট ও গোপালগঞ্জের শংকরপাশার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদী। এ নদীর ওপরই নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম ছয় লেনের কালনা সেতু। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যানবাহন চালাচলের জন্য কালনা সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
পদ্মা সেতু চালুর পর নড়াইল-যশোরসহ আশপাশের জেলার মানুষ কালনা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছেন। সেতু নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সেতুটির পশ্চিমপাড়ে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা এবং পূর্বপাড়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা।নড়াইল-যশোরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সহজ যোগাযোগের জন্য মধুমতী নদীতে নির্মাণাধীন দৃষ্টিনন্দন এ সেতুটি হবে ছয় লেনের।
কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, এ পর্যন্ত সেতুর ৯১ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতু নির্মিত হচ্ছে।
সওজ সূত্রে জানা যায়, কালনা দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু এটি। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৫০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার।সেতুর উভয় পাশে সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ কিলোমিটার। ছয় লেনের এ সেতুর চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। উভয় পাশে সংযোগ সড়ক হবে ৪ দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার, যার প্রস্থ ৩০ দশমিক ৫০ মিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৯৫৯ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা।সেতুর কাশিয়ানী পাশে ডিজিটাল টোল প্লাজা স্থাপিত হয়েছে। সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান।২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কালনা সেতু’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।২০১৮ সালের ২৪ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই সালের ৫ সেপ্টেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয় বলে সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান ।
কালনা সেতু চালু হলে স্থল বন্দর বেনাপোল, যশোর, খুলনা, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, ঢাকাসহ আশেপাশের জেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা সেতু দিয়ে এশিয়ান হাইওয়ের আওতায় ভারতের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সরাসরি সড়ক যোগাযোগে দূরত্ব কমিয়ে আনতে কালনা সেতু প্রধান ভূমিকা পালন করবে বলে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে আরো জানা গেছে, কালনাঘাট থেকে ঢাকার দুরত্ব মাত্র ১০৮ কিলোমিটার।নড়াইল থেকে কালনা সেতু ও পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকার দূরত্ব ১২৭ কিলোমিটার। যশোর থেকে নড়াইল হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকার দূরত্ব হবে ১৫৭ কিলোমিটার এবং বেনাপোল থেকে যশোর-নড়াইল হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকার দূরত্ব হবে ১৯২ কিলোমিটার। ফলে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনাসহ আশেপাশের সড়ক যোগাযোগে ঢাকার দূরত্ব কোথাও ১০০ কিলোমিটার, কোথাও আবার দেড়শ কিলোমিটার কমে যাবে। এছাড়া শিল্প শহর যশোরের নওয়াপাড়া এবং মোংলা বন্দর ও সাতক্ষীরা স্থলবন্দরের যোগাযোগ সহজ হবে।