ইতিহাসের অধ্যাপক ওমর আহমেদের মনটা আজকাল ভালো ঠেকছে না। স্ত্রী ষষ্ঠবারের মতো সন্তানসম্ভবা। সারাদিনের সংসারের ধকল আর সন্তান ধারণে গিন্নির কষ্টক্লিষ্ট মুখখানা দেখতে তার ভালো লাগে না। প্রিয়তমার কোন কষ্টই যে তিনি ভাগ করে নিতে পারেন না!
দেশের পরিস্থিতি ও খুব একটা ভালো না। ৬ দফা দাবির কোনটাই তো পশ্চিম পাকিস্তান সরকার মানবে বলে মনে হচ্ছে না। অধ্যাপক সাহেবের কেন যেন মনে হচ্ছে, তাঁর এবারের সন্তানটি হবে কন্যাসন্তান। তিনি চমৎকার একটি নামও ঠিক করে রেখেছেন।
নানা দোলাচলের ১৯৭০ সাল। ২৩ মার্চ বিকেল ৪টায় ঘর আলো করে ওমর-রূপা দম্পতির ষষ্ঠ সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো। তাদের প্রথম তিনটি কন্যা, তারপর দুটি পুত্র এবং সর্ব কনিষ্ঠ এই কন্যা। পাড়া প্রতিবেশিরা নবজাতককে দেখতে এসে বলতে লাগলো, ‘আরেকটি ছেলে হলেই তো ভালো হতো’!
ওমর সাহেব বৈঠকখানায় বসে বই এর প্রুফ দেখার কাজ করেন। ’বাঙ্গালী যুগে যুগে’ বই এর কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। প্রেস মালিক নাসির সাহেব সারাক্ষণই তাগাদার মধ্যে রেখেছেন।
ভেতরবাড়ি থেকে অভ্যাগত নারীদের কথাবার্তা তাঁর কানে ভেসে আসে। মনে মনে হাসেন তিনি, মানুষ কি ভাবে কথা বলে! ওরা কি জানে আমার ছোট্ট মেয়েটাই বড় হয়ে বিশাল কিছু করবে না!
তিনি নিজের সন্তানদের নিয়ে খুবই আশাবাদী। রূপাকেও বলেছেন, তুমি দেখে নিও, এই মেয়েটাই তোমাকে সবচেয়ে বেশি খেয়াল করবে।
ওমর সাহেব ইতিহাসের অধ্যাপক হলেও ইংরেজি, আরবি ও ফারসি ভাষায় তাঁর বেশ দখল। তিনি কন্যার জন্য শ্রুতিমধুর এবং অর্থবহ একটি আরবি নাম ঠিক করে রেখেছিলেন । কন্যা ভূমিষ্ঠ হলে তিনি আজান দিয়ে পঞ্জিকা নিয়ে বসেন। ২৩ মার্চ, ৯ চৈত্র, ১৪ সফর-পূর্ণিমা তিথি। সেদিনের পঞ্জিকার পাতাটি ছিড়ে নিয়ে তাতে আরবি হরফে কন্যার নামটি লিখে ফাইলে রেখে দেন।
বহুমাত্রিক.কম