Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সিলেট-আখাউড়া রেলপথে উধাও ক্লিপ, হুক ও পাথর: ঝুঁকিপূর্ণ লাইন

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:২৪, ১৭ অক্টোবর ২০২১

প্রিন্ট:

সিলেট-আখাউড়া রেলপথে উধাও ক্লিপ, হুক ও পাথর: ঝুঁকিপূর্ণ লাইন

ছবি- বহুমাত্রিক.কম

মৌলভীবাজার: বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট-আখাউড়া রেলপথ ও কালভার্ট ব্রিজ সমুহ থেকে ক্লিপ-হুক চুরি ও সিটকে পড়ার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে রেললাইন। মাঝে মধ্যে রেলপথের পাথর সরে ও ঝোপজঙ্গলে ভরপুর হচ্ছে রেলপথ। ব্রিটিশ আমলের তৈরি রেলপথে যথারীতি সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। বর্তমানেও রেলপথের অসংখ্য স্থানে এ চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট-আখাউড়া রেলপথের শ্রীমঙ্গল থেকে কুলাউড়া পর্যন্ত স্থানে স্থানে ক্লিপ, হুক চুরি ও পাথর কমে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে রেলপথ। দুই লাইনের স্লিপার সমূহে নাট-বল্টু দিয়ে রেল লাইন আটকানো থাকার কথা থাকলেও বিভিন্ন স্থানে ক্লিপ, নাট-বল্টু নেই। চোর দলের কারনে রেলপথ থেকে এসব যন্ত্রাংশ চুরি হওয়ায় অনেকটা ফাঁকা হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন স্থানে রেলপথের পাথর সিটকে খালি হয়ে যাচ্ছে। সেকশনের ভানুগাছ, শমশেরনগর, মনু, টিলাগাঁও, লংলা স্টেশনের মাঝখানে অজস্র স্থানে ক্লিপ-হুক নেই। দু’লাইনের জোড়া দেয়া স্থানেও ক্লিপ চুরি হয়ে গেছে। দিনের পর দিন ক্লিপ-হুক, নাটবল্টু, ফিশপ্লেট চুরি হয়ে যাওয়ায় সেকশনটি অধিকতর ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তবে মনু, টিলাগাঁও, লংলা এলাকায় অধিক পরিমাণে ক্লিপ, হুক, ফিশপ্লেট সহ লোহার যন্ত্রাংশ ব্যাপক হারে চুরি হচ্ছে বলে কর্মরত শ্রমিকরা জানান।

চুরি যাওয়া এসব যন্ত্রাংশ দ্রুত লাগানোর নিয়ম থাকলেও মাঝে মধ্যে দু’একটি স্থানে লাগানো হয়। তবে যথারীতি পুন:স্থাপন হচ্ছে না। ফলে এই সেকশন দিয়ে ঘন্টায় প্রায় ৬০ কি.মি. বেগে প্রতিদিন যাত্রীবাহী আন্ত:নগর, লোকাল ও মালবাহী মিলিয়ে গড়ে ১৬টি ট্রেন ঝুঁকি নিয়েই আপডাউন করছে। দুবছর আগেও এই সেকশনের লাউয়াছড়া এলাকায় ব্রিজ কালভার্ট ধ্বসে পড়ার ঘটনা ঘটে।

একই সময়ে রেল লাইনের সাথে সংযুক্ত ক্লিপ-হুক চুরি ও সেতু-কালভার্ট সমুহে স্লিপারের সাথে বাঁশের ফালি পেরেক দিয়ে সংযুক্ত থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথ বিষয়ে গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর কিছুটা সংস্কার কাজ হয়। রেলপথের ত্রুুটিপূর্ণ কারনে বিগত বছর সমুহে লাউয়াছড়া উদ্যানের পাহাড়ি এলাকায় একাধিকবার ট্রেন আটকা পড়ে। দু’বছর আগে প্রবল বর্ষনে ও ঢলে লাউয়াছড়া এলাকায় ১৫৭ নম্বর ব্রিজে মাটি ধ্বসে রেল ব্রীজে ক্ষতিগ্রস্থ হলে ট্রেন যোগাযোগ ১৩ ঘন্টা বন্ধ হয়ে পড়ে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ভানুগাছ ও শ্রীমঙ্গল স্টেশনের মাঝামাঝি লাউয়াছড়া উদ্যানের পাহাড়ি এলাকায় চারটি স্থানের উঁচু টিলার উপর দিয়ে রেলপথ স্থাপিত। নিয়মিত রেলপথ সংস্কার না করা, রেলব্রিজ ও পাহাড়ি এলাকায় দেয়াল না থাকা, ভারী বর্ষন, টিলা ধ্বস এসব কারনে লাউয়াছড়া উদ্যান এলাকায় বার বার ট্রেন আটকা পড়ছে। তাছাড়া ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হওয়া, ট্রেনের যাত্রা বাতিল এসব কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা উভয় পাশে ট্রেন আটকা পড়ে।

স্থানীয় রেলপথ শ্রমিক, গেটম্যানসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মচারীরা জানান, দীর্ঘ সময় ধরে রেলপথে ক্লিপ, হুক, নাটবল্টু চুরি হচ্ছে। শমশেরনগর, মনু, টিলাগাঁও, লংলা এলাকার একটি চক্র নিয়মিত এসব চুরি করে নিয়ে যায়। তাছাড়া স্লিপারের সাথে যুক্ত এসব ক্লিপ ট্রেন আসা যাওয়ার সময়ও খুলে পড়ে। পাথর সিটকে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে রেলপথ। তারা আরও বলেন, ব্রিজ-কালভার্ট সমুহেও জীর্নশীর্ণ দশা। এসব বিষয়ে নিয়মিত সংস্কার, পাথর ফেলা, ক্লিপ ও হুক লাগানো প্রয়োজন। ট্রেন আসা যাওয়ার সময় বাস্তবতা বুঝা যায়। তাছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ স্থান ও বাঁক সমুহে ট্রেন ধীরে ধীরে চলতে দেখা যায়।

কমলগঞ্জের শিক্ষক জমশেদ আলী, সমাজকর্মী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অতীতে ট্রলিযোগে প্রকৌশলী বিভাগের লোকদের নিয়মিত রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার করা হলেও বর্তমানে এচিত্র হরহামেশা চোখে পড়ে না। রেলপথে ঝোপজঙ্গল, পাথর সিটকে পড়া, ক্লিপ, হুক ও ব্রিজ-কালভার্ট সমুহে লোহার পাত চুরি হয়ে যাওয়ায় অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

এ ব্যাপারে ভানুগাছ স্টেশন মাস্টার কবির আহমদ বলেন, আমাদের দায়িত্ব স্টেশনে। রেলপথ দেখাশুনার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী কর্তৃপক্ষ রয়েছে। তবে স্টেশন এলাকা বা রেলপথে পাথর কমে যাওয়া, ক্লিপ, হুক চুরির কথা মাঝে মধ্যে শুনা যায়। এ বিষয়ে আমাদের করনীয় নেই।

শ্রীমঙ্গলস্থ রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) গুলজার আহমদ বলেন, আমরা রেলপথে হুক, ক্লিপ নিয়মিত লাগিয়ে থাকি। সেগুলো আবার চুরি করে নেয়। যেখানে এগুলো সর্ট হচ্ছে সেখানে পূরণ করে দিচ্ছি। রেলপথে মাঝে মাঝে হুক, ক্লিপ চুরি হয়ে যায়। তবে ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তাছাড়া রেলপথে যেসব স্থানে পাথর কমে গেছে সেসব স্থানে পাথর ফেলা হবে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে তিনি দাবি করেন, পাহাড়ি এলাকায় গাছ ভেঙ্গে পড়ে। এটি ঝুঁকির কারণ।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer