Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সরেজমিন ঝিকরগাছা : শিউরে উঠা আজাদ হিন্দের রক্তাক্ত ইতিহাস

আশরাফুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০১:৩৭, ২১ অক্টোবর ২০১৮

আপডেট: ১৩:২২, ১৭ মার্চ ২০২১

প্রিন্ট:

সরেজমিন ঝিকরগাছা : শিউরে উঠা আজাদ হিন্দের রক্তাক্ত ইতিহাস

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

অনেক অপেক্ষার পর সম্প্রতি যশোহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা। গন্তব্য জেলার ঝিকরগাছা উপজেলা। ব্রিটিশ আর্মির নির্মম নির্যাতন ও বুলেটের আঘাতে যেখানে জীবনপ্রদীপ নিভেছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বাধীন আজাদ হিন্দ ফৌজের বহু সেনানির। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের দুশো বছরের শৃঙ্খল ভেঙে যাঁরা অখন্ড ভারতবর্ষকে স্বাধীন করতে অকাতর আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। ভারতের অনেক নেতাজি গবেষক-ঐতিহাসিকদের মুখে শুনেছি এই ঝিকরগাছার নাম।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পনে যখন অনিশ্চিত হয়ে যায় স্বাধীনতার জন্য আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জয়ী হয়ে অধিকৃত ২৬৫ কিলোমিটারের ভারতভূমি ছেড়ে সৈন্যদল ভেঙে দিয়ে যুদ্ধের নতুন কৌশলে নেতাজি চলে গেলেন অন্তরালে। দুর্ভাগ্যজনক পরিণতিতে ব্রিটিশের যুদ্ধবন্দি হন হাজার হাজার আজাদ হিন্দের সেনানি। দেশজুড়ে অগ্নিগর্ভ আন্দোলনে অনেক বন্দীর মুক্তি মিললেও নেতাজির ভাবাদর্শে উজ্জীবিত ‘বিপজ্জনক’ সেনানিদের ভাগ্যে অপেক্ষা করে করুণ পরিণতি।

পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুরের নীলগঞ্জে ব্রিটিশ আর্মির ট্রানজিট ক্যাম্পে বহু আজাদ হিন্দ সেনাদের ‘নেতাজি জিন্দাবাদ’ ‘আজাদহিন্দ জিন্দাবাদ’ ধ্বনি দেওয়ার অপরাধে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়। ট্রাক ভরে সেই সব সেনাদের মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হয় স্থানীয় নোয়াই খালে-এই ইতিহাসও চাপা পড়ে ছিল বহুকাল। তবে স্থানীয়দের সরব তৎপরতা ও নেতাজিপ্রেমী-গবেষকদের প্রয়াসে নীলগঞ্জ ট্রাজেডির অনেক কিছুই এখন উদঘাটিত। কিন্তু দেশভাগের পরিণতিতে চাপা পড়ে যায় ঝিকরগাছার বর্বরতার ইতিহাস।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত সরকার নেতাজি ও আজাদ হিন্দ ফৌজ সংক্রান্ত বেশকিছু সরকারি নথি সর্বসাধারণের জন্য উন্মূক্ত করলে সেখানেও মিলে ব্রিটিশ আর্মির ট্রানজিট ক্যাম্পগুলোতে বন্দী সেনানিদের ওপর বর্বরতার প্রমাণ। ব্যারাকপুরের নীলগঞ্জের সঙ্গে যশোহরের ঝিকরগাছার নাম পাওয়া যাচ্ছে অসংখ্য ডকুমেন্টে। কানাইলাল বসুর ‘নেতাজি : রিডিসকভার্ড’ গ্রন্থেও স্পষ্ট করে রয়েছে ঝিকরগাছার নাম। লেখক সেখানে সংখ্যা উল্লেখ করতে না করলেও বহু আজাদ হিন্দের সেনাদের এখানে অন্তরীন রাখার কথা তিনি জানাচ্ছেন। এসব সেনাদের ভাগ্যে কী পরিণতি ঘটেছিল তা তিনি জানাতে পারেননি। জানতে না পারা সেসব তথ্যের খোঁজে ঝিকরগাছা উদ্দেশ্যে যাত্রা।

কপোতাক্ষ নদের অববাহিকায় নয়নাভিরাম জনপদ ঝিকরগাছা সাম্প্রতিক দশকে পরিচিত অন্য এক কারণে। এখানে উৎপাদিত গোলাপ-জারবেরাসহ বিভিন্ন ফুলের সম্ভার দেশের চাহিদা মিটিয়ে সৌরভ ছড়ায় দূরদেশেও। রাজধানী থেকে বহু ভ্রমণপিপাসু প্রায়শই ‘ফুল পর্যটনে’ পাড়ি জমান ঝিকরগাছা ফুলেল জনপদে। সাত দশক আগে যে জনপদ রঞ্জিত হয়েছিল আজাদ হিন্দের বীর শহিদদের পবিত্র রক্তে, কপোতাক্ষ নদে যাঁদের অন্তিম ঠাঁই হয়েছিল-তাদের কথা হয়ত এই পর্যটকদের অনেকেরই অজানা। দেশমাতৃকার জন্য জীবন উৎসর্গ করা সেইসব শহিদদের অতৃপ্ত আত্মা কী তাহলে ফুলের অবয়বে পুনর্জন্ম লাভ করছে? আবেগ-অশ্রুতে এমন ভাবনা ভিড় করে।

রাজধানী ঢাকা থেকে রেলপথে যশোহর পৌছে সেখান থেকে সড়কপথে রওনা হয়েছি ঝিকরগাছা। যশোহর থেকে সঙ্গী হলেন সাংবাদিক কাজী রাকিবুল ইসলাম। ঝিকরগাছা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানতে তারই শরণাপন্ন ছিলাম গত কয়েক মাস। এবার তিনি সেই স্থানগুলোতে নিয়ে চললেন। যশোহর শহরের চাঁচড়া মোড় থেকে লোকাল বাসে চেপে আমরা চলছি ঝিকরগাছার পথে। চোখে ভাসছে সাত দশক পূর্বের কোহিমা-ইম্ফল যুদ্ধের ময়দানে আজাদ হিন্দ ফৌজের অকুতোভয় সেনানিদের মুখচ্ছবি। যেন ভেসে আসছে নেতাজির ‘দিল্লি চলো’ আহ্বান, সেনানিদের সমস্বরে ‘জয় হিন্দ’ ধ্বনি।

পথে যেতে প্রকান্ড বৃক্ষের সারি নজর কাড়ছে। বহু যুগের সাক্ষী হয়ে এসব বৃক্ষরা আজও টিকে রয়েছে। আজাদ হিন্দ ফৌজের বীর শহিদদের হত্যাযজ্ঞের নীরব সাক্ষীও তারা। কালের আবর্তে সেই সময়ের অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও এসব বৃক্ষরাজি রক্তাক্ত ও বেদনাবিদূর সেই ঘটনার স্মৃতি আজও বয়ে চলছে। অবাক বিস্ময়ে সেসব বৃক্ষরাজির অপার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এক সময় পৌছে গেছি শহিদভূমি ঝিকরগাছায়।

শ্রদ্ধায়-আবেগে দেশপ্রেমিকদের রক্তস্নাত সেই পূণ্যভূমি স্পর্শ করে শুরু করেছি চাপা পড়ে থাকা ইতিহাসের খোঁজ। তরুণ লেখক মুস্তাক আহমেদ নিয়ে চললেন ঝিকরগাছার কিছু স্থানে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে ঝিকরগাছা বাসস্টপেজ থেকে প্রথমে পৌছাই কৃষ্ণনগরে। একাধিক স্থানীয় প্রবীণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল কাটাখালের পাশে সম্মিলনী কলেজ ও সংলগ্ন এলাকাটিতেই ছিল ব্রিটিশ আর্মির ট্রানজিট ক্যাম্প। এবার অনুসন্ধান চলে স্থানীয় প্রবীণদের খোঁজে বের করার।

খোঁজে পাই একজন প্রবীণকে। তমিজ উদ্দিন মোড়ল। ১৯৪৫-এ কিশোর তমিজের স্মৃতিতে এখনও জ্বল জ্বল করছে সেইসব দিনের কথা। পেশায় কৃষক এই বয়োবৃদ্ধ জানালেন, বড় সাইজের সব পেরেকে ঘেরা ব্রিটিশের সেনা ছাউনীর কাছে স্থানীয়দের যাওয়ার সুযোগ ছিল না। কিছু সৈন্যদের এখানে এনে বন্দী করে রাখা হত, তাঁরা কারা চিনতেন না তমিজ মোড়ল। মাঝেমধ্যে তাদের চিৎকার ধ্বনিও শোনা যেত দূর থেকে। কাছে গিয়ে দেখার সুযোগ ছিল না। এই কৃষক স্মৃতি হাতড়ে জানালেন, ব্রিটিশ সেনাদের মাঝেমধ্যে দেখা যেত কাটাখালে গোসল সারতে। ব্রিটিশ সেনারা দিগম্বর হয়ে গোসল করায় লজ্জায় স্থানীয়রা ঘেঁষতো না সেখানে; তবে শিশু-কিশোররা দূর থেকে লুকিয়ে দেখতো। তাদেরই একজন তমিজ মোড়ল আরও জানালেন, একবার ট্রাকভর্তি বুটজুতা পুড়িয়েছিল আর্মিরা। ব্রিটিশ আর্মিরা ১৯৪৬-এর শেষের দিকে চলে যাওয়ারও কয়েক বছর পর্যন্ত সেখানে ঘাস জন্মায়নি-জানাচ্ছিলেন তমিজ মোড়ল।

অবসরপ্রাপ্ত স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মোশাররফ হোসেন। সত্তর পেরুনো এই স্কুল শিক্ষক সেইসব দিনের কথা মনে করতে না পারলেও বাবার কাছে শোনা গল্পে ব্রিটিশের বর্বরতার গল্প শোনাচ্ছিলেন। তিনি জানান, সেনা ছাউনি বা আর্মিদের কর্মকান্ডের গোপনীয়তা রক্ষায় কৃষ্ণনগরের জনবসতির সিংহভাগই খালি করে ফেলা হয়। অনেকের মত তাদের পরিবারকেও চলে আসতে হয় অনেকটা দূরে। তাঁরমতে, সেনা ছাউনীর অভ্যন্তরে বহু হত্যাযজ্ঞ হলেও ধামাচাপা দিতে ব্রিটিশরা নজিরবিহীন গোপনীয়তা রক্ষা করে। ফলে ঝিকরগাছায় আজাদ হিন্দের সেনাদের ভাগ্যে আসলে কী ঘটেছে তা স্থানীয়রা আদৌ আঁচ করতে পারেনি।

ঊনসত্তর বছরের মুদি দোকানি মোঃ রওশান আলীর বাস কাটাখাল ব্রিজের পাড়েই। জীবনের সবটুকু সময় এখানেই কাটিয়েছেন তিনি। কৈশোরে এই কাটাখালে ও কপোতাক্ষের মোহনায় বহু মানব কঙ্কাল দেখে থাকার দাবি করেন তিনি। বাবা-দাদার কাছে সেনা ছাইনীর গা শিউরে উঠা বহু গল্প শোনে বড় হয়ে উঠেছেন তিনি।

‘বর্তমানে যেটা ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদ, সেখানেও ব্রিটিশের মিলিটারিরা থাকতো। দেয়ালে-সীমানা প্রাচীরের চারদিকে তারকাটা-পেরেক পোতা থাকতো। শুনতাম ভয়ঙ্কর সেনাদের এখানে রাখা হতো। এদেরকে সামলাতো গোর্খা সৈন্যরা’-বলেন রওশন আলী। তিনিও আরও জানান, এই সামরিক ব্যারাক থেকে কিছু সেনাদের মুক্তি মিলেছিল। তবে বাকীদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা জানা যায়নি।
কাটাখালের তীরবর্তী জনপদে দিনভর ঘুরে প্রবীণদের খোঁজে পার করেও বেশি সংখ্যক প্রবীণের সন্ধান মিলেনি। তবে সংরক্ষণের অভাবে বিস্মৃতপ্রায় কৃষ্ণনগরের সেনা ছাউনীর কিছু ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।

মুদি দোকানি রওশান আলীর তথ্য অনুযায়ী ব্রিটিশ আর্মির সামরিক ব্যাংকারের অস্তিত্বও পাওয়া যায় কাটাখাল ব্রিজের পাশে কপোতাক্ষের মোহনায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন অবকাঠামো-বসতি গড়ে উঠায় অনেক সামরিক স্থাপনার এখন আর অস্তিত্ব নেই। তবুও কপোতাক্ষ নদের তীরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের সামরিক স্থাপনার বহু ধ্বংসাবশেষ।

নেতাজি বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণাগ্রন্থে ও প্রকাশিত গোপন নথিতে ঝিকরগাথা সংক্রান্ত যেসব তথ্য মিলছে এবার তার সত্যতা নিশ্চিতে স্মরণাপন্ন হলাম এই অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সাহিত্য চর্চার অন্যতম পুরোধা হোসেনউদ্দীন হোসেনের কাছে। জীবনভর ইতিহাস ও সাহিত্য অন্বেষণ করা এই গবেষক শৈশব এবং কৈশোরে প্রত্যক্ষ করেছেন কৃষ্ণনগরের সেই সামরিক ব্যারাকের অনেক কিছুই। নিজের গবেষণা ও অধ্যয়ন কক্ষে দীর্ঘ আলোচনার পর জ্যেষ্ঠ এই গবেষক নিয়ে চলেন সরেজমিন সেইসব স্থানগুলো দেখাতে, যা তিনি কৈশোরে দেখেছেন দূরথেকে। শৈশবে দেখা নির্মম নির্যাতন করে আজাদ হিন্দ সেনাদের হত্যার দৃশ্য মনে করে আজও শিউরে উঠেন তিনি। কৃষ্ণনগরে তাঁর বাসভবনের অদূরে রাস্তার পাশে একটি স্থান, যেখানে এখন একটি কুঁড়ে ঘর রয়েছে।

তিনি জানাচ্ছেন, কুঁড়ে ঘরের স্থানটিতে একটি প্রকান্ড বটগাছের অবস্থান ছিল। ব্রিটিশ আর্মি এই বটগাছে বেঁধে আজাদ হিন্দের জওয়ানদের নির্মম নির্যাতন করতো। একপর্যায়ে গুলি করতে হত্যা করতো। এমন একজনকে হত্যার নির্মম দৃশ্য চাক্ষুষ করেছেন হোসেনউদ্দীন হোসেন। মীর জাহান আলী নামে পেশোয়ারের ওই আজাদ হিন্দ সেনার হত্যার বিষয়টি তিনি আজও মনে করতে পারেন।

‘যোদ্ধা হিসেবে পাঠানরা ছিল সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও প্রতিবাদী। দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি বরণ করা সেনাদের মাঝে পাঠানরাই ছিল সংখ্যায় বেশি। কত সংখ্যক সেনাদের এখানে হত্যা করা হয়েছে-তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। কেননা সব কিছুই অতি গোপনীয়তায় ঘটেছে’-যোগ করেন ইতিহাসবিদ হোসেনউদ্দীন হোসেন।

এই ইতিহাসবিদ জানান, বন্দি সেনারা যাতে করে বিদ্রোহ করতে না পারে-তার জন্য ঝিকরগাছায় ৪টি ট্রানজিট ক্যাম্পে বিভক্ত করে রাখা হয় আজাদ হিন্দের সেনাদের। ক্যাম্পগুলো হচ্ছে-কৃষ্ণনগর, কীর্তিপুর, মোবারকপুর ও পায়রাডাঙ্গা। এর মধ্যে পায়রাডাঙ্গায় রাখা হতো সবচে বিপজ্জনক সেনাদের। বর্তমানে সরকারি শিশুসদন হিসেবে ব্যবহৃত ওই স্থানটিতে আজাদ হিন্দের সেনাদের খুব গোপনে ফাঁসি দেওয়া হত। ফাঁসি কার্যকরে একটি বিশালাকারের বর্গাকার সুউচ্চ স্থাপনা তৈরি করা হয়। যার নীচে ছিল অন্ধকূপ।

জনশ্রুতি রয়েছে, এই কূপের সঙ্গে সংযোগ ছিল স্বোতস্বিনী কপোতাক্ষের। জোয়ার-ভাটায় ফাঁসি হওয়া সেনার দেহ নদীতে ভেসে যেত। নদীর সঙ্গে সেই সুরঙ্গ বা কূপটি না থাকলেও বর্বরতার সেই স্মৃতি হয়ে আজও টিকে আছে ফাঁসি কার্যকরের উচু ঘরটি।

স্থানীয় প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে, কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত জনবসতি উঠিয়ে দিয়ে ব্রিটিশ আর্মি অতি গোপনীয়তায় সেনাদের আনা-নেওয়া এবং ‘চরম শাস্তি’ কার্যকর করতো। তারা জানান, গোপনীয়তার অংশ হিসেবে ঝিকরগাছা রেলওয়ে স্টেশনটি সাধারণের ব্যবহারের সুযোগ ছিল না। সাধারণের ব্যবহারের জন্য কয়েক কিলোমিটার ব্যবধানে অমৃতবাজার নামে আরও একটি স্টেশন করে দেওয়া হয়।

হোসেনউদ্দিন হোসেন মনে করেন, ব্রিটিশ আর্মি ঝিকরগাছায় কৌশলগত কারণে সেনা ছাউনী স্থাপন করে। এর মাঝে মুখ্য কারণ হচ্ছে-স্থানটি ব্যারাকপুরের কাছে এবং রেল ও নৌপথে যাতায়াত সুবিধা ছিল।

কৃষ্ণনগর, কীর্তিপুর ও মোবারকপুর ঘুরে পায়রাডাঙ্গা যতক্ষণে পৌছেছি, ততোক্ষণে সন্ধ্যা নেমেছে। এখনও টিকে থাকা গা শিউরে উঠা বর্বরতার সেই নিদর্শন ফাঁসির ঘরটির চূঁড়ায় একটি মেশিন বসানো ছিল বলেও জানালেন শিশু সদনে কর্মরত এক কর্মচারী। শিশু সদনের অভ্যন্তরে মাত্র দু-তিনটি আবাসিক ভবন ছাড়া পুরোটাই ফাঁকা মাঠ।

এখানকার কর্মচারী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল ব্রিটিশ আর্মির সবচেয়ে সুরক্ষিত ও নির্মমতার এই ক্যাম্পটির বিষয়ে অনেকে জানলেও স্বাধীন ভারতের কোনো রাজনৈতিক নেতা বা সরকারি কর্মকর্তা স্থানটিতে শহিদদের জন্য কোনো স্মৃতিফলক নির্মাণের উদ্যোগ নেননি। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় মুক্তিসংগ্রামীদের এতবড় আত্মত্যাগের কোনো মূল্যই দেননি কেউ। দেশভাগ বা স্বাধীন বাংলাদেশেও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রশ্নে এই নীরবতা অব্যাহত রয়েছে।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর নেতাজি সুভাষ আইডিওলজি (আইসিএনএসআই)ও প্রধান সম্পাদক, বহুমাত্রিক ডটকম।

ঋণস্বীকার :

-ড. জয়ন্ত চৌধুরী, নেতাজি বিশেষজ্ঞ; হোসেনউদ্দীন হোসেন, ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক; পদ্মনাভ অধিকারী, কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer