Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৯ ১৪৩১, মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪

সম্প্রীতির আবহে যথাযোগ্য মর্যাদায় শারদীয় দুর্গোৎসব

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ১৪:২১, ১৬ অক্টোবর ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

সম্প্রীতির আবহে যথাযোগ্য মর্যাদায় শারদীয় দুর্গোৎসব

ঢাকা : বাঙাালি হলো উৎসব প্রিয় জাতি। এসব উৎসব যে শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতেই আটকে থাকে তাই নয়। ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির বাইরে পহেলা বৈশাখ, ভালোবাসা দিবস, চৈত্র সংক্রান্তি, পিঠা উৎসব ইত্যাদি কোন কিছুই বাদ যায় না।

দুর্গাপূজা সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব। কিন্তু বাংলাদেশের ধর্মীয় চরিত্রটি এখন এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে যে সকল ধর্মের রীতিনীতি পালনই এখন সার্বজনীনতা লাভ করেছে।

মুসলমানদের দুটি ঈদ, খ্রিস্টানদের বড়দিন, ইস্টার সানডে, বৌদ্ধদের বৌদ্ধ পূর্ণিমা, হিন্দুদের শ্রী শ্রী শারদীয় দুর্গাপূজাসহ আরো অনেক পূজাপার্বণ উদযাপন এখন এতটাই সার্বজনীনতা পেয়েছে যে, প্রত্যেকে প্রত্যেকের ধর্মীয় দিবসগুলোতেও অন্য ধর্মের মানুষদের দাওয়াত করে তাদের আনন্দে শরিক হওয়ার জন্য। এভাবে ধর্মে ধর্মে মানুষে মানুষে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়।

অন্যান্য বছরের মতো এবারেও দুর্গাপূজা সেভাবেই পালন করা হচ্ছে। মহালয়ার মাধ্যমে পূজার আনূষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

সেই শুরুর প্রথম দিকে প্রথমা, দ্বিতীয়া... এভাবে যেতে যেতে মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে দুর্গাপূজা আরম্ভ হয়ে থাকে। সেভাবেই ১৫ অক্টোবর ২০১৮ থেকে মহাষষ্ঠীর যাত্রা শুরু হয়েছে। তারপর একে একে মহাসপ্তমী ও মহাঅষ্টমীর দিকে অগ্রসর হয়ে প্রতিটিতেই নতুন নতুন আরাধনা ও অঞ্জলির দ্বারা বরণ করা হয়েছে মা দুর্গাকে। মহাঅষ্টমীতে কুমারীপূজার মাধ্যমে ঈশ্বরের নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা হয়েছে। নবমীতে আরতি নৃত্য, পূজা অঞ্জলি, মন্ডপে মন্ডপে পূজারি ও সকল বয়সের ছেলে-মেয়েদেও প্রতিযোগিতার আয়োজন সার্বজনীন মানুষের ঢল ইত্যাদি সবারই এক মঞ্চে এনে দাঁড় করায়।

দেখা গেছে, একটি শহরে প্রতি পাড়ায় কিংবা প্রতি মহল্লায় প্রতিষ্ঠিত পূজাম-পগুলো দেখার জন্য সকল ধর্মের মানুষের ঢল নামে। এ সময় পূজার কারণে শহরের নির্দিষ্ট কিছু রাস্তা-ঘাটে এমন তীব্র যানজট হয় যে, এর জন্য স্বাভাবিক চলাফেলা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।

কিন্তু তারপরেও কারো তেমন কোন অভিযোগ নেই। কারণ তখন পূজারিগণ তাদের দামী গাড়ি ছেড়ে হয় পায়ে হেটে, নয়তো মামুলি রিক্সা কিংবা অটোবাইক নিয়ে এক পূজা থেকে অন্য পূজামন্ডপে মন্ডপে ঘুরে বেড়ান।

এখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার একটি সময়োপযোগী শ্লোগান রয়েছে, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ যা আমাদেও সম্প্রীতির বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করে তোলে। এবারের পূজা নিয়ে একটা চাপা আতঙ্ক ছিল যে কোন ধরনের জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটে কি না। এর অনেক যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকাটাও ছিল অত্যন্ত স্বাভাবিক।

কারণ যে দেশের জঙ্গিরা দেশের অত্যন্ত নামকরা এবং সবচেয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে থাকা রাজধানী কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশানের হলি আর্টিজান নামক রেঁস্তেুারায় পবিত্র রমজানের মধ্যে ইফতাররত অবস্থায় এবং দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় পবিত্র ধর্ম ইসলামের নামে জঙ্গিরা হামলা করে নিরীহ দেশি-বিদেশি মানুষ হত্যা করে। যারা আরো ধর্মশালার ধর্মগুরু, পুরোহিত, মসজিদের ইমাম, খাদেম, খ্রিস্টীয় ধর্মযাযক, ফাদার, মসজিদ, মন্দির প্যাগোডা ইত্যাদি কোন কিছুই তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি সেখানে হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদেরও এমন একটি অনুষ্ঠানে আক্রমণ করবে না কিংবা আক্রমণের পরিকল্পনা থাকবে না তা কোন অবস্থাতেই ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই।

আর সাম্প্রতিক এসব ঘটনার পর সরকারি জিরো টলারেন্স নীতির কারণে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সমূলে উৎপাটনের লক্ষ্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদা তৎপর রয়েছে। তারই অংশ হিসেবে তারা একের পর জঙ্গি আস্তানা সনাক্ত করে আক্রমণ চালিয়ে তাদের সকল পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে সমর্থ হচ্ছে। হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়া হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্প্রতি ঢাকার মিরপুর, কল্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জ ইত্যাদি কয়েকটি স্থানে সফল অভিযান চালিয়ে তাদের নেটওয়ার্ক অনেটাই দুর্বল করতে সমর্থ হয়েছেন। এ পূজা চলাকালীন পূজার বিভিন্ন কর্মকা-ে নাশকতার হামলার পরিকল্পনা বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে পূর্বেও ন্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক যৌথ সফল অভিযার পরিচালনা করা হয়। এতে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্ব পর্যায়ের পরিকল্পনাকারী অনেককে ধরাশায়ী করতে সমর্থ হয়। তাছাড়া কিছুদিন পূর্বে চট্টগ্রাম ও কক্সব্জারের বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু জঙ্গিকে তাদের পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার কারণে বন্দুকযুদ্ধে জীবন দিতে হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বিঘেœ দুর্গোৎসব পালনের জন্য যেকোন ধরনের নাশকতা নস্যৎ করে দেওয়ার জন্য তৎপর রয়েছে।

কাজেই বিজয়া দশমীতে মা দুর্গার দশ হাত দিয়ে যেকোন ধরনের অসুরীয় শক্তি বিনাশ করে সত্য ও সুন্দরের জন্য বিজয় নিশ্চিত করবেন এটাই সবাার প্রত্যাশা। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশিত ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই অর্থাৎ দিনের অবস্থাতেই সবাই তাদের প্রতিমা বিসর্জন করবেন বলে আমাদের সকলের বিশ্বাস।

তাতে হয়তো অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনার এড়ানো যেতে পারে। বলা তো যায় না, কারণ কথায় আছে, সাবধানের মার নেই। পুলিশি এসব সফল অভিযানের ফলেএকদিকে যেমন জঙ্গিরা তাদের পরিকল্পনামাফিক কার্যক্রম চালাতে পারছেনা ঠিক সেরকম সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে। সেজন্য এবারের দুর্গাপূজাতে উপচেপড়া মানুষের ভিড় সেরকমটাই জানান দেয়। আস্তে আস্তে এখন সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এবারে নির্বিঘœতাই আগামী দিনে ভরসা হবে সকলের জন্য। 

লেখক: রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
email: [email protected]

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer