-লেখক
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বিজ্ঞানই যে একমাত্র অস্ত্র, তা অনুধাবনে আমাদের বড্ড বিলম্ব হয়ে যাচ্ছে। অগ্রসর দেশগুলো এই সংকটে বিজ্ঞান নির্ভর পদক্ষেপ গ্রহণে কালবিলম্ব করেনি। কিন্তু আমরা দেশের প্রতিতযশা বিজ্ঞানীদের নিয়ে কোন জাতীয় জরুরি টাস্কফোর্স আদৌ করতে পারলাম না! করোনা মোকাবেলায় সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আমরা কেবলি পরদেশ মুখাপেক্ষী নীতিতে দৌড়ঝাপে ব্যস্ত রয়েছি।
জাতীয়ভাবে অণুজীব, অণুপ্রাণ, জীবপ্রযুক্তি এবং জিনপ্রকৌশলবিদগণের সমন্বয়ে করোনা ভাইরাস নিয়ে সমন্বিত গবেষণা কার্যক্রম শুরু করা প্রয়োজন। করোনা ভাইরাস বিদায় নিলেও নতুন ভাইরাস মানব স্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি হতে পারে। সুতরাং জ্ঞান-নির্ভর সমাজ বিনির্মাণে আমাদের বিজ্ঞানই একমাত্র ভরসা নয় কী?
যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে আমরা ভ্যাকসিন সংগ্রহের প্রাণপণ চেষ্টা করছি, সে পরিমাণ টাকা দিয়ে দেশের প্রতিষ্ঠিত ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো দিয়ে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন তৈরি করে অতিরিক্ত বিদেশে রপ্তানিও করা যেত। যদিও সেই সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি, কিন্তু আপাতদৃষ্টে সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে সামান্যই।
দৃঢ় বিশ্বাসে একথা বলতেই পারি যে, দেশে একটি বিশ্বমানের পূর্ণাঙ্গ ভাইরাস গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন এখন সময়ের দাবিই শুধু নয়, এটি রীতিমতো অবশ্য কর্তব্য হয়ে গেছে। কাঙ্খিত সেই প্রতিষ্ঠানে মানুষ, প্রাণি, মাৎস্য, উদ্ভিদসহ অন্যান্য জীবের ভাইরাস নিয়ে বিশ্বমানের গবেষণা সুবিধা নিশ্চিত করা যেতে পারে। আইসিডিডিআর,বি’র মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতার মাধ্যমে সকল ধরণের ভাইরাস নিয়ে মৌলিক এবং ফলিত গবেষণায় এটি ভাইরাসজনিত রোগব্যাধি নিরাময়ে জনগণের নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠতে পারে।
করোনা মোকাবেলায় এখন বড় কর্তব্য হবে, ভ্যাকসিনের ফর্মুলা সংগ্রহ করে দেশেই তা উৎপাদনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। একইসঙ্গে দেশে যেহেতু পর্যাপ্ত টিকা নেই, মাস্ক আমাদের দেশে বড় ভ্যাকসিন। সরকারি সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশের প্রসিদ্ধ গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান দিয়ে কমপক্ষে ৪০ কোটি উন্নতমানের কাপড়ের মাস্ক তৈরি করে বিনামূল্যে আশু বিতরণ করা প্রয়োজন।
দেশের প্রতিনিধিত্বশীল বিজ্ঞানীগণ বিচ্ছিন্নভাবে নিজস্ব উদ্যোগে করোনা ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করে সহস্রাধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। জাতীয়ভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে একটি ডাটাবেস তৈরি করে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের বিশেষ প্রতিযোগিতামূলক গবেষণা বরাদ্দ প্রদান করা এখন সময়ের দাবি।
উল্লেখ করা দরকার, গত ৫০০ দিনের প্রচেষ্টায় আমাদের করোনা ভাইরাস নমুনা পরীক্ষার সামর্থ্য দিনে সর্বোচ্চ ৪৫,০০০ মাত্র, যা সামগ্রিক বিচারে খুবই অপ্রতুল। দেশে জরুরিভিত্তক অটোমেটেড হাইথ্রোপুট আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপনও করা অতি জরুরি। সারাদেশে শক্তিশালী ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক তৈরি এবং প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরি করে কার্যকরি অনলাইন শিক্ষা চালু করা প্রয়োজন। করোনার সাথে অভিযোজনের জন্য এর বিকল্প নেই।
লেখক: খ্যাতিমান জীবপ্রযুক্তি বিজ্ঞানী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবিজিই)’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো। ইমেইল: [email protected]
বহুমাত্রিক.কম