Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সঠিক আগাছা ব্যবস্থাপনায় ফলন বাড়বে ২২ ভাগ

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২:২৯, ১৩ মে ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

সঠিক আগাছা ব্যবস্থাপনায় ফলন বাড়বে ২২ ভাগ

ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা : পরিবেশ বান্ধব ও আধুনিক পদ্ধতিতে সঠিক আগাছা ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রয়োগ করে মাঠ ফসলের প্রায় ১৮-২২ ভাগ ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব।

শনিবার গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে (ব্রি) অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আগাছা বিজ্ঞান সমিতির ৬ষ্ঠ সম্মেলনে ‘মাঠ ফসলের আগাছা ব্যবস্থাপনা: বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক আলোচনায় এ তথ্য জানানা কৃষিবিদরা।

দেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় চারশত জন গবেষকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াস উদ্দিন মিয়া।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউােটর মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. আনসার আলী ও এসিআই এগ্রি বিজনেজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এফ এইচ আনসারী।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ আগাছা বিজ্ঞান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. খায়রুল আলম ভূঁইয়া।

আলেঅচনায় জ্যেষ্ঠ কৃষিবিদরা জানান, আগাছা ব্যবস্থাপনা ফসল উৎপাদন প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। কারণ আগাছা মাঠ ফসলের শক্র। এটি ধানসহ অন্যান্য ফসলের খাদ্য, আলো, বাতাস ও পানিতে ভাগ বসিয়ে শস্যের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। আগাছার উপদ্রবের ফলে মাঠ ফসল লিকলিকে, লম্বা, দুর্বল ও হলদে হয়ে যায় এবং কুশির সংখ্যা কমে যায়। এটি ফসলে পোকামাকড় ও রোগ বালাইয়ের আক্রমণ বাড়িয়ে দেয়।

তারা জানান, ফসলের চেয়ে আগাছা বেশি পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। এসব কারণে ফসলের ফলন ব্যাপকহারে হ্রাস পায়। বাংলাদেশে আগাছার উপদ্রবের ফলে ধানে ৪০- ৫০%, গমে ২৪ - ৫৮% ভূট্রায় প্রায় ৪৯%, আলুতে ৪৩%, আখে ২০%, পাটে ৭৫-৮০%, চায়ে ৯% এবং অন্যান্য ফসলে গড়ে ২৫-৬০% ফলন কম হয়।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্তমানে এদেশে খালি হাতে, নিড়ানি যন্ত্র দিয়ে এবং আগাছানাশক ব্যবহার করে ফসলের আগাছা দমন করা হয়। কিন্তু হাত দিয়ে আগাছা নিড়ানো কষ্টসাধ্য। এতে সময় ও টাকা বেশি লাগে। নিড়ানি যন্ত্র দিয়ে আগাছা দমন করলেও কোন কোন ফসলের আগাছা দমনে পরবর্তীতে হাত নিড়ানির প্রয়োজন হয়। হাত দিয়ে আগাছা দমন বা নিড়ানি যন্ত্র দিয়ে আগাছা দমনে ফসলভেদে হেক্টর প্রতি ১০,০০০- ১৮,০০০ টাকা খরচ পড়ে।

দেশে কৃষকরা বর্তমানে আগাছানাশকের মাধ্যমে আগাছা দমন করছেন। এতে খরচ কম ও শ্রমিকের সাশ্রয় হয়। আগাছানাশক দিয়ে আগাছা দমন করলে ফসলভেদে হেক্টর প্রতি ৫০০০ - ৬০০০ টাকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু আগাছানাশক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ । এর ব্যবহার সঠিকভাবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে না করলে মাঠ ফসলের পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এ সম্মেলনে মাঠ ফসলের আগাছা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্য ও উপাত্ত নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে বলা হয়, ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদন স্থিতিশীল রাখতে পরিবেশ বান্ধব আগাছা ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের উপর জোর দিতে হবে। আলোচকরা জানান, যদি সঠিক নিয়মে ও সঠিক পদ্ধতিতে আগাছা ব্যবস্থাপনা করা যায় তবে মাঠ ফসলের মোট উৎপাদন ১৮-২২ ভাগ বাড়ানো সম্ভব। ভবিষ্যৎ পরিবেশ বান্ধব আগাছা ব্যবস্থাপনার মধ্যে যান্ত্রিক উপায়ে আগাছা দমন ও জৈবিক উপায়ে আগাছা দমনের উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

সভায় আরও বলা হয়, রাসায়নিক আগাছানাশক ব্যবহারের সঠিক প্রয়োগ, যান্ত্রিক ও জৈবিক উপায়ে আগাছা দমন সম্পর্কিত গবেষণা আরো জোড়দার করে মাঠ ফসলকে আগাছার জন্য ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে এবং সমন্বিত আগাছা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ ও কৃষির বাস্তু সংস্থানের ক্ষতি না করে আগাছা ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হবে।

বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে এ সম্পর্কিত ১৯টি প্রবন্ধ পাঠ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে গবেষণার জন্য প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে যা বাংলাদেশের টেকসই খাদ্য উৎপাদন, উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer