ছবি : বহুমাত্রিক.কম
গাজীপুর : আগুন ধরিয়ে দিতেই ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো শিউলি আক্তারের (৩২)। তখন রাত ১২টা। সারা গায়ে আগুন নিয়ে চিৎকার করে ঘরের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। স্বামী শহিদুল তখন বিছানায় বসে তাকিয়ে দেখছেন। পরে পাশের রুমে থাকা স্বজনেরা এসে আগুন নিভিয়ে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারেননি শিউলি।
মঙ্গলবার গভীর রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মুলাইদ গ্রামের আব্দুর রশিদ মিয়ার বাসার ভাড়াটিয়া শিউলি আক্তারের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন স্বামী শহিদুল ইসলাম।
সোমবার দিবাগত মধ্য রাত ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যায় তার স্বজনেরা,সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকাল পৌনে তিনটার দিকে তার মৃত্যু হয়। মারা যাওয়ার আগে স্বজনদের কাছে ভয়াবহ এই ঘটনার কথা বলে গেছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আগুনে শিউলির শ্বাসনালীসহ শরীরের ৫৩ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল।
শিউলির বাবা শুকুর আলী জানান, ১২ বছর আগে কিশোরী মেয়েকে শহিদুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে দেন। আমার মেয়েকে প্রায় সময নির্যাতন করতো,তাদের সংসারে বনিবানা না হওয়ায় আমার মেয়ে একাই থাকতেন উপজেলার মুলাইদ গ্রামের আব্দুর রশিদ মিয়ার বাড়িতে। ভাড়া থেকে আমার মেয়ে ছাতির বাজার ডিবি এল কারখানায় চাকরি করতো, সংসারের শুরু থেকেই শহিদুল কিছু করতেন না, আমার মেয়ে বেতনেই চলতো সংসার। কিন্তু চার বছর আগে শহিদুল ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েন। এরপর শুরু হয় অশান্তি। প্রায়ই সময় আমার মেয়েকে মারধর-গালিগালাজ করতেন তিনি। বেতনের সময় হলেই,বেতনের টাকা নেওয়ার জন্য শহিদুল শিউলির কাছে আসতো,বেতনের টাকা না দেওয়ায় আমার মেয়েকে হত্যা করেছে শহিদুল।
শিউলির স্বজনেরা বলেন, শহিদুলের অত্যাচার দিনদিন বেড়েই উঠেছিলো। সোমবার রাতে প্রচন্ড আক্রোশে শহিদুল বলেন‘আইজ তোর শেষ দিন।’ কিন্তু মাদকাসক্ত স্বামীর চোটপাটে অভ্যস্থ শিউলি তাঁর কথায় গুরুত্ব না দিয়ে শুয়ে পড়েন। এরপর রাত ১২টার দিকে ঘুমন্ত শিউলির ওপর কেরোসিন ঢেলে দিয়াশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে দেন শহিদুল। এ সময় শিউলির আর্তচিৎকারে পাশের ঘরে থাকা বাড়ির মালিক ও প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে,পরে তার স্বজনেরা হাসপাতালে নিয়ে যান। শহিদুল ইসলাম গাজীপুরের কোনাবাড়িতে তার আরেক স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন।
নিহত শিউলি আক্তার ময়মসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া গ্রামের শুকুর আলীর মেয়ে। আনুমানিক ১৪ বছর আগে বরিশাল জেলার বানারিপাড়া উপজেলার সৌরভকাঠি গ্রামের আব্দুল মোতালেব মিয়ার ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪২) এর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে বিয়ে হয়।
শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল মালেক জানান,ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিউলিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়,পরে বিকাল পৌনে তিনটার দিকে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় তার স্বামী শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।
বহুমাত্রিক.কম