Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১০ ১৪৩১, বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪

শ্রদ্ধার্ঘ: বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টির ছাপ সমকালীন কৃষিতেও

ড. সুস্মিতা দাস

প্রকাশিত: ২৩:৫২, ১৪ আগস্ট ২০২১

আপডেট: ২৩:৫৫, ১৪ আগস্ট ২০২১

প্রিন্ট:

শ্রদ্ধার্ঘ: বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টির ছাপ সমকালীন কৃষিতেও

ছবি- সংগৃহীত

‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা/কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা’

দীর্ঘ সংগ্রামমুখর বর্ণাঢ্য এক জীবনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে উঠেছিলেন জাতির মুক্তি সংগ্রাম ও জাতীয়তাবাদের প্রতীক। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে হারিয়েছি আমাদের জাতির জনককে। সময়ের ঘুর্ণাবর্তে সেই শোকাবহ দিনটি আমাদের মাঝে আবারও উপস্থিত হয়েছে।

কিন্তু তিনি তাঁর মহান কর্মের মধ্যদিয়ে আমাদের মাঝে অনেক বেশি জীবন্ত ও প্রাসঙ্গিক হয়ে আছেন। সোনার দেশ তৈরি করতে সদ্য স্বাধীন ভূখন্ডে সর্বাগ্রে তিনি জোর দিয়েছিলেন কৃষি উন্নয়নের ওপর। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকীতে আমরা আজ জানাবার প্রয়াস পাবো, কৃষি উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী কর্মপ্রচেষ্টার আখ্যান। এবং আমাদের বলতে দ্বিধা নেই যে, বাংলাদেশের সমকালীন কৃষি ব্যবস্থাপনা মূখ্যত বঙ্গবন্ধুর কৃষিদর্শনেরই সার্থক প্রতিফলন।

আপনারা জেনে থাকবেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সব অংশেই কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের জীবনব্যবস্থাকে উন্নয়নের প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে চিন্তা করেছিলেন। ১৯৫৪-৫৫ সালের তৎকালীন যুক্তফ্রন্ট সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেও সেই মন্ত্রিসভা অল্প সময়ের জন্য টিকেছিল, ফলে সুদূরপ্রসারী কোন চিন্তার প্রতিফলন তখন ঘটাতে পারেননি তিনি।

কিন্তু মধুমতীর তীর থেকে উঠে আসা আজন্ম কৃষি-অন্তঃপ্রাণ একজন মুজিবের হৃদয়ে কৃষির প্রতি যে অনুরাগ জন্ম নেয়-তা তাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক জীবনে গভীর ছাপ ফেলে যায়। মুজিবের এই কৃষি অনুরাগই বদলে দেয় এই ভূ-খণ্ডের কৃষিজ উৎপাদনের চরিত্রও। আইনের ছাত্র হয়েও কৃষির সামগ্রিক উন্নয়নে তাঁর দূরদর্শী প্রয়াস স্বাধীন বাংলাদেশে, এমনকি সমকালীন কৃষিকে অন্তত শতবছর এগিয়ে রেখেছে বললেও অত্যুক্তি হবে না!

সদ্য স্বাধীন দেশে চার বছরেও কম সময় শাসন ক্ষমতায় থেকে তিনি কৃষি উন্নয়নের যে ভীত রচনা করে যান প্রকৃতঅর্থে আমাদের সমকালীন কৃষি ব্যবস্থা জাতির জনকের রচিত পথেই পল্লবিত হচ্ছে। তাঁর জন্মশতবর্ষে দাঁড়িয়ে একথা দ্ব্যর্থহীনভাবেই উচ্চারণ করা যায় যে, বঙ্গবন্ধু মুজিব কেবল দেশের স্বাধীনতাই রচনা করেন নি, তিনি হাজার হাজার বছরের এই বঙ্গীয় জনপদের আধুনিক বিজ্ঞাননির্ভর কৃষি ব্যবস্থারও জন্ম দিয়েছেন।

আমরা এই মহান নেতার কৃষি বিষয়ে অসংখ্য প্রয়াসের কথা স্মরণ করে তাঁর দূরদর্শিতার প্রতি আমাদের বিন¤্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবো। ১৯৭০ সালের ২৯ অক্টোবরে প্রাাক-নির্বাচনী বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘প্রকৃৃত প্রস্তাবে আমাদের গোটা কৃষি-ব্যবস্থাতে বিপ্লবের সূচনা অত্যাবশ্যক। কৃষকের স্বার্থে গোটা ভূমি-ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস সাধনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।” তিনি আরও বলেছিলেন, সরকারি খাসজমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে।

পরবর্তী সময়ে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বারবার উল্লেখ করেছেন এ দেশের কৃষক মজুর মেহনতি মানুষের কষ্টের কথা। কারণ তাঁর চিন্তা ও মননের মধ্যে চিরকালই তিনি লালন করেছেন বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দু কৃষক ও মেহনতি মানুষ। খাদ্য ঘাটতি নিয়ে জ›ম নেওয়া যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুর প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল বাংলার মানুষের খাদ্য জোগান দেওয়া।
তিনি ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে পরিবার প্রতি জমির মালিকানা ৩৭৫ বিঘা থেকে কমিয়ে ১০০ বিঘা নির্ধারণ করেন এবং ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমবায় চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলায় সমবায় ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় রূপরেখা রচনা করেন। তাঁর দূরদর্শী চিন্তার প্রভাবেই ব্যবস্থা রাখা হয় সমবায়ী পদ্ধতিতে কৃষকদের মধ্যে জমি বন্দোবস্তের।

স্বাধীনতা উত্তর ১৯৭২ সালে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন। সাড়ে ৭ কোটি মানুষের জন্য ওই খাদ্য পর্যাপ্ত ছিল না। খাদ্য ঘাটতির সংকুলানে বঙ্গবন্ধুর সরকার স্বাধীনতার পর ২ বছর পর্যন্ত খাদ্যে ভর্তুকি প্রদান করেছেন। ১ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কৃষি সেচ সুবিধায় বেশি বরাদ্দ ধরা হয়েছিলো। ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে সেচে বরাদ্দ ছিলো ৩৬.৬ কোটি টাকা, শস্য উৎপাদনে বরাদ্দ ছিলো ৩২.১৯ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় কৃষিতে বরাদ্দ ছিলো মোট এডিপি`র ১৩.১৪% যা সময়ের প্রেক্ষাপটে আশাব্যঞ্জক ছিলো।

১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের কৃষি শিক্ষায় আকৃষ্ট করে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার তাগিদ দেন। তখন তিনি কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা প্রদান করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর বিশেষ ভাষণে কৃষি বিপ্লবের কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন গ্রামের দিকে নজর দিতে হবে। কেননা গ্রামই সব উন্নয়নের মূল কেন্দ্র। তিনি বলেছিলেন, দেশের অর্থনীতিকে যদি গণমুখী করতে না পারি, তাহলে সমাজতন্ত্র কায়েম হবে না, কৃষিবিপ্লব হবে না। বঙ্গবন্ধু সেদিন আরও বলেছিলেন, কৃষির উন্নতির জন্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রাতিষ্ঠানিক কৃষি উন্নয়ন তথা কৃষি এবং কৃষকের কথা ভেবে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পুনঃসংস্কার, উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল নামক একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। কৃষি গবেষণা কাউন্সিল পরবর্তী ১৯৯৬ সালে একটি আইন প্রণয়নের মাধ্যমে জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেম প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং পরবর্তীতে ২০১২ সালে বিএআরসি এ্যাক্ট ২০১২ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল বর্তমানে নার্স-এর শীর্ষ সংস্থা হিসেবে ১২টি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)-কে কৃষি গবেষণা ও প্রশিক্ষণে গৌরবময় ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২১ এ ভূষিত করা হয়েছে।

বিএআরসি গত ১০ বছরে নোটিফাইড ৭টি ফসলের (ধান, গম, আলু, ইক্ষু, পাট, কেনাফ ও মেস্তা) ফলন ও মান নিশ্চিতপূর্বক বিভিন্ন কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উদ্ভাবিত ১৭০টিরও বেশী জাত ছাড় করেছে। জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেমভুক্ত ১২টি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবন নিয়ে ‘১০০ কৃষি প্রযুক্তি এটলাস” প্রকাশ করেছে। বর্তমান সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকপরিকল্পনা (২০২০-২০২৫) প্রস্তুতে সহায়তা করা এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিকপরিকল্পনা (২০২০-২০২৫), রূপকল্প২০২১-২০৪১, ডেল্টা প্ল্যান-১০০ এবং জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) এর গোল-২ অর্জনে, কোভিড-১৯ পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা ও ৪র্থ শিল্প বিপ্লব কর্মপরিকল্পনা এর কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা সমূহ বাস্তবায়নে কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু দেশে ধান গবেষণার গুরুত্ব অনুধাবন করেই ১৯৭৩ সালে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট- এর প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেন এবং ধানের ওপর নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা শুরু হয়।যার ফলস্বরূপ ধানের উচ্চফলনশীল আধুনিক জাত উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে এবং বর্তমানে দেশে চাহিদার অতিরিক্ত ধান উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। একইভাবে বঙ্গবন্ধুর শাসন আমলে কৃষি গবেষণাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার লক্ষ্যে ঢাকার অদূরে জয়দেবপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট- এর সিংহভাগ ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ফসলের উন্নত উচ্চফলনশীল জাতসহ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। ১৯৭৩ সালে সর্ব প্রথম গমের উচ্চফলনশীল জাত এদেশে গবেষণার জন্য আনা হয়। ১৯৭৪ সালে গমের উচ্চফলনশীল জাত মুক্ত করা হয় যার মধ্যে সোনালিকা জাতটি এদেশে গম উৎপাদনে যুগান্তকারী ভূমিকার শুভ সূচনা করেছিল।

বঙ্গবন্ধুর শাসন আমলেই ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট, হর্টিকালচার উন্নয়ন বোর্ড, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি, মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনসহ অনেক নতুন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেন। কৃষি বিষয়ক বিদ্যমান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামো ও কার্যক্রমের আমূল পরিবর্তন ও সংস্কারের মাধ্যমে এবং প্রযুক্তি চর্চায় মেধা আকর্ষণের যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি খাদ্যের স্বয়ম্ভরতা অর্জনের জন্য কৃষিশিক্ষা, মানসস্মত বীজ উৎপাদন এবং বিতরণ, সুষ্ঠু সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা, কৃষিতে ভর্তুকি, বালাই ব্যবস্থাপনা, সমন্বিত ফসল ব্যবস্থাপনা, খামারভিত্তিক ফসল ব্যবস্থাপনা, সমবায়ভিত্তিক চাষাবাদ, ভেঙে যাওয়া অর্থনীতি পুনর্গঠন, মিল্কভিটা পুনর্গঠন, সার, সেচ, বীজ বিষয়ক কার্যক্রমের ওপর সর্বাত্মক জোর দিয়েছিলেন।

তাঁর আমলেই দেশে প্রবর্তন করা হয় কৃষি ঋণ ব্যবস্থার এবং ৭৩-এর ৭ নং অ্যাক্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হয় কৃষি ব্যাংক; গঠন করা হয় কৃষিতে জাতীয় পুরস্কার তহবিল। ১৯৬৮-৬৯ সালে কৃষিকাজের জন্যে সারাদেশে ১১ হাজার শক্তিচালিত পাম্প ছিলো। বঙ্গবন্ধুর দিক নির্দেশনায় ১৯৭৪-৭৫ সালে পাম্পের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬ হাজারে। ফলে সেচের আওতাধীন জমির পরিমাণ এক তৃতীয়াংশ বেড়ে ৩৬ লাখ একরে উন্নীত হয়।

১৯৯৬-২০০১, ২০০৯-২০১৪ এবং ২০১৪ থেকে চলমান চতুর্থ মেয়াদ অবধি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকারের বাস্তসম্মত কৃষিনীতি এবং তদানুযায়ী বাজেটসহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ দেশকে কৃষি উন্নয়নের জন্য এক রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শেখ হাসিনা তাঁর বাবা বঙ্গবন্ধুর মতোই বুঝতে পেরেছেন, যে দেশের শতকরা ৮০ ভাগই খেটেখাওয়া কৃষিজীবী মানুষ, সেখানে অন্য যা কিছুই করা হোক না কেন সেই ৮০ ভাগ মানুষের পাশে না দাঁড়ালে এ দেশ এবং দেশের অর্থনীতিও দাঁড়াবে না।

১৯৭৩ সালে মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল যেখানে ৭০ ডলার, ২০২১ সালে সেটি ২ হাজার ২২৭ ডলারে, বাংলাদেশি মুদ্রায় তা বছরে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৭৩ টাকা। গত বছর করোনা শুরুর আগেও মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৬৫ ডলার। করোনার ধকলে থেমে থাকেনি অর্থনীতির চাকা। মাথাপিছু আয়সহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে ঊর্ধ্বগতি এসেছে। একমাত্র কৃষিখাতের ঈর্ষণীয় সাফল্যের সুবাতাসের কারণ বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান। স্বাধীনতার পর দেশের শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল ছিল, বর্তমানে এ হার ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ। ১৯৭২-৭৩ সালে জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ৫৮ দশমিক ০৪ শতাংশ, ২০১৯-২০ সালে জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ।

জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান কমলেও মোট অবদান বেড়েছে প্রায় ৬ গুণ। এক দশক ধরে আমাদের অর্থনীতি রয়েছে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথে। আর ঠিক এ সময়েই জাতি উদ্যাপন করছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি তথা সুবর্ণজয়ন্তী।

কৃষিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পাট রপ্তানিতে ১ম, পাট ও কাঁঠাল উৎপাদনে ২য়, ধান ও সবজি উৎপাদনে ৩য়, আম ও আলু উৎপাদনে ৭ম, পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম এবং সামগ্রিক ফল উৎপাদনে বিশ্বে ২৮তম স্থানে।

বঙ্গবন্ধুর দূরকল্পী প্রত্যাশা ছিল খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং দারিদ্র দূরীকরণ যা কখনই অমূলক ছিল না। পিতার সেই স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা, আন্তরিকতা ও গভীর মমত্ববোধ উৎসারিত কৃষিবান্ধব নীতি কৌশল খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা হয়েছে। পুষ্টি নির্ভর মেধাবী জাতি গঠনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

লেখক: প্রিন্সিপাল ডকুমেন্টশন অফিসার, কৃষি তথ্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer