ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির আয়োজনে বঙ্গবন্ধুকে আরও বেশি করে জানার চর্চায় সকলকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ১০০ দিনব্যাপী ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজ’ প্রতিযোগিতা ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার ভেতর দিয়ে শেষ হয়েছে। গত বছরের ১লা ডিসেম্বর হতে চলতি বছরের ১০ই মার্চ পর্যন্ত (১লা ডিসেম্বর ২০২০ - ১০ই মার্চ ২০২১) অনলাইনে এই কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে বড় কুইজ প্রতিযোগিতা।
গত ১০০ দিনের অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ। দেশের সব অঞ্চলের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ শিক্ষার্থীরা যেভাবে বিপুল উদ্দীপনার সঙ্গে এ কুইজে অংশগ্রহণ করেছেন, তা একেবারে নজিরবিহীন। কুইজে মোট রেজিস্ট্রেশন করেছেন ১৫ লাখেরও বেশি প্রতিযোগী। ১০০ দিন ধরে মোট ৭,৬৩,৪০৬ জন প্রতিযোগী ৮৬,৩৮,০৭৮ বার কুইজে অংশগ্রহণ করেছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কুইজে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
কুইজের ওয়েবসাইটে ৩ কোটিরও বেশি মানুষ ভিজিট করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ এবং ইউটিউব ও গুগল নেটওয়ার্কে আরও ১ কোটির বেশি মোট ২ কোটি ৫০ লাখের বেশি মানুষের কাছে সরাসরি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এই কুইজের কনটেন্ট। তার ভেতর ১ কোটি ১৫ লাখ মানুষ কুইজের কনটেন্টে লাইক/কমেন্ট করেছেন। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ ন্যূনতম ১৮ লাখবার কুইজ বা কুইজ সম্পর্কিত বিভিন্ন লিংকগুলো নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন। মূল সংখ্যা আরও বেশি। ট্র্যাকিং করা লিংকগুলোর বাইরের অসংখ্য লিংক শেয়ার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের প্রতিটি ওয়েবসাইটে এই কুইজ প্রতিদিন দৃশ্যমান ছিল। পাশাপাশি এই কুইজকে ঘিরে ইউটিউবে শতাধিক চ্যানেল এবং ফেসবুকে অসংখ্য গ্রুপ খোলা হয়েছে, যেখানে কুইজ নিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষ কথা বলেছে, উত্তর খুঁজেছে।
অংশগ্রহণকারীরা সারা দেশব্যাপী বিস্তৃত। এই ১০০ দিনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের ১০ হাজারের বেশি মানুষ বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ী হিসেবে আমরা যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের পেয়েছি, তেমনি পেয়েছি প্রাথমিকের শিশু শিক্ষার্থীদেরও। পুরো পরিবার মিলে কুইজে অংশ নিয়েছেন এমন উদাহরণও অসংখ্য রয়েছে।
গত ১লা ডিসেম্বর থেকে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর প্রতিদিন একটি করে প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য নির্ধারিত সময় ছিল ২৪ ঘণ্টা। নির্ধারিত সময়ে যারা কুইজের সঠিক উত্তর দিয়েছেন, কম্পিউটার লটারির মাধ্যমে সেখান থেকে প্রতিদিন ১০০ জন বিজয়ী নির্বাচিত করা হয়েছে। এই ১০০জন বিজয়ীর প্রথম পাঁচজন পেয়েছেন দারাজের সৌজন্যে একটি করে স্যামসাং এম ৪০ স্মার্টফোন এবং বিজয়ীদের প্রত্যেকেই পেয়েছেন টেলিটকের সৌজন্যে ১০০ জিবি করে মোবাইল ডাটা। কুইজ প্রতিযোগিতার পুরোটা সময় ছিল পুরস্কারের ছড়াছড়ি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে লাইভ লটারির অতিথিদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ এবং তাদের পক্ষ থেকে অপ্রত্যাশিত পুরস্কার।
প্রতিদিন ১০০ জন বিজয়ী নির্বাচিত করা ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে ছিল লাইভ লটারির আয়োজন, যেখানে প্রিয়.কমের ফেসবুক এবং ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে কুইজ সম্পর্কিত তথ্য শেয়ারকারীদের মধ্য থেকে লটারি করে বিজয়ী নির্বাচিত করা হয়েছে।
সাপ্তাহিক লাইভ অনুষ্ঠানগুলোতে এক বা একাধিক বিশেষ অতিথি থেকেছেন, যারা লাইভ অনুষ্ঠানেই নিজের মুঠোফোন থেকে বিজয়ীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। লাইভ লটারির বিজয়ীদের সঙ্গে পরে আরও যোগ হয়েছে টপ কনট্রিবিউটরের পুরস্কার। প্রতি সপ্তাহে লাইভ লটারিতে সপ্তাহজুড়ে যারা কুইজগুলো সবচেয়ে বেশিবার শেয়ার করেছেন, তাদের মধ্য থেকে আরও ১০০ জনের বেশি মানুষকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এসব বিজয়ীদেরকে পুরস্কার হিসেবে হেডফোন, স্মার্টফোন ও ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে। প্রতিযোগীতার শেষ লাইভ লটারি এবং সমাপনী আয়োজন উপলক্ষ্যে ১২ই মার্চ শুক্রবার লাইভে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোস্তফা জব্বার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির মাননীয় প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য প্রফেসর মো. সাজ্জাদ হোসেন। এই লাইভে লাইভ লটারিতে ৫ জন বিজয়ীকে ৫টি ল্যাপটপ পুরস্কার দেওয়া হয়।
আগের সাপ্তাহিক লাইভগুলোতে অতিথি হয়ে এসেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী ও জনপ্রিয় অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর এমপি, শিক্ষা সচিব মাহবুব হোসেন, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য প্রফেসর মো. সাজ্জাদ হোসেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টি এম এ কাসেম, দারাজ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোস্তাহিদল হক এবং ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈন উদ্দিন হাসান রশিদ। ১০০ দিনব্যাপী চলা কুইজ প্রতিযোগিতায় এ রকম ১৪টি লাইভে অনুষ্ঠান দেখেছেন ১ কোটিরও বেশি মানুষ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি, সার্বিক সহায়তা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, কুইজটির স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে ছিল তথ্য মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। এর বাস্তবায়ন সহযোগী হিসেবে ছিল প্রিয়.কম।
এ ছাড়াও এই আয়োজনের সঙ্গে ছিল ‘পাওয়ার্ড বাই’ হিসেবে দারাজ বাংলাদেশ, ‘নলেজ পার্টনার’ হিসেবে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ‘কর্পোরেট পার্টনার’ হিসেবে ইউনাইটেড গ্রুপ ও ‘টেলিকম পার্টনার’ হিসেবে টেলিটক বাংলাদেশ। আগামী মাসের সুবিধাজনক তারিখ ও সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্র্যান্ড প্রাইজ হিসেবে ১০০ জনকে ১টি করে ল্যাপটপ বিতরণ করা হবে। উল্লেখ্য, মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদয় নির্দেশনায় দেশব্যাপী অভূতপূর্ব যে অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজিত হলো, তা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তৈরিতে সরাসরি অবদান রাখবে।
দেশে এ ধরনের অনলাইন প্রতিযোগিতা আয়োজনে সহযোগিতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় কমিটি ও জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যবৃন্দ, বিটিভি ও অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো)-সহ সকল প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যম, সহযোগিতা প্রদানকারী প্রিয়.কম, দারাজ বাংলাদেশ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড গ্রুপ, টেলিটক বাংলাদেশ এবং বিশেষ করে অংশগ্রহণকারী সকল প্রতিযোগীকে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।