ছবি-সংগৃহীত
লন্ডন, যুক্তরাজ্য থেকে: আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে বাহারি বিজ্ঞাপনগুলোর খুবই মিল। বিজ্ঞাপনগুলোতে যেমন চটকদার, শ্রুতিমধুর কথা দিয়ে আমাদের মন ভোলানোর চেষ্টা থাকে তেমনি আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতাদেরও একই রকমের চেষ্টা। কিন্তু এই সব শুভঙ্করের ফাঁকি বুঝতে আর এখন খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না।
উনারা বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ-কথাটা বলে বলে মুখ দিয়ে ফেনা তুলে ফেলেন অথচ সেই ১৯৭১ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সংখ্যালঘুরা শুধু রাজনীতিকদের বলির পাঁঠা-ই হয়েছেন।নিজেদের স্বার্থে যখন যেমন ভাবে খুশি সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করেছেন।
সম্প্রতিকালে সাঁওতালদের ঘটনায় যদি ধরি এখানেও সেই রাজনীতিবিদেরই স্বার্থ। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সাঁওতালদের ওপর যা ঘটে গেলো, সেই কষ্ট বর্ননা করার সাধ্য আমার নাই।
সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের সাঁওতাল আদিবাসীদের উচ্ছেদের ১০দিন পরেও জয়পুর ও মাদারপুর সাঁওতাল পল্লীতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সংঘর্ষে সাঁওতালদের চার জন গুলিবিদ্ধ হন। তাদের মধ্যে দিনাজপুর মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রোববার রাতেই চাপাইনবাবগঞ্জের গোমেস্বরপুরের বাসিন্দা শ্যামল হেমভ্রম (৩৫) মারা যান। অনেকেই এখনো নিখোঁজ আছেন বলে অভিযোগ উঠছে।
এখন পর্যন্ত কোন সাঁওতালদের চলমান দাবি-দাওয়ার কোন সুরাহা হয়নি। কাজের সুযোগ না থাকায় তারা সারাদিনে একবেলামাত্র রাতে ভাত খাচ্ছে। নির্যাতনের শিকার সাঁওতালরা সরকারি ত্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছেন। ‘বাপ-দাদা’র জমি ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা ত্রাণ নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
তারা মনে করছেন, তাদের মূল দাবি এড়িয়ে ত্রাণের নামে সামান্য খাদ্য দিয়ে এবং গালভরা নানা আশ্বাস দিয়ে মুখবন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে।
এদিকে, শিল্পসচিব মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, ৬ নভেম্বর চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গিয়েছিলেন পাশের একখণ্ড জমিতে আখের বীজ কাটতে, উচ্ছেদ অভিযানে নয়। কিন্তু অবৈধ দখলদারেরা তাতে বাধা দেন। তির-ধনুক নিয়ে তাঁরা আক্রমণ করেন। কিছু স্বার্থান্বেষী ভূমিদস্যু এ ঘটনায় ইন্ধন দেয়। নিরীহ ও সহজ-সরল প্রকৃতির সাঁওতালরা পরিস্থিতির শিকার।
তিনি আরও বলেন, তাঁদের প্রতি সরকার অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। সেখানে হতাহত ব্যক্তিদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। প্রয়োজনে ভূমিহীন সাঁওতালদের পুনর্বাসনেরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু সরকারি মালিকানাধীন চিনিকলের জায়গা দখল করে থাকতে দেওয়া হবে না।
অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারাকাত গত রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রংপুর চিনিকলের যে জমি নিয়ে এই সংঘর্ষ, সেটার দলিল ও পুরোনো কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন।
সেগুলো পর্যালোচনা করে তিনি দাবি করেন, ‘জমি যে সাঁওতালদের, কোনো সন্দেহ নেই। কাগজে দেখা যায়, ১৯৬২ সালের ৭ জুলাই একটি চুক্তির মাধ্যমে চার মৌজার ১৮৪২ দশমিক ৩০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। চুক্তিপত্রের ৫ ধারায় বলা আছে, চিনিকল ও আখ চাষের জন্য এ জমি নেওয়া হলো। যদি কখনো এ জমিতে এ ছাড়া (আখ চাষ ছাড়া) অন্য কিছু হয়, তাহলে এটা মূল মালিকদের ফেরত দেওয়া হবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গণমাধ্যম-কে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ও সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য সবকিছুই করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।’ তাঁর দাবি, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য একটা চক্র পেছনে কলকাঠি নাড়ছে।"
অপরদিকে, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘এই ঘটনাগুলোকে এক করে দেখলে চলবে না৷ নাসিরনগরের ঘটনা তারাই ঘটিয়েছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে৷ যারা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়৷ যারা হোলি আর্টিজনের ঘটনা ঘটিয়েছে।’
উনাদের সবার কথা শুনে মনে হয়, উনারা অতি চালাক কাকের মত, যে চোখ বন্ধ করে সাবান চুরি করে আর ভাবে যে ওদের মত সবারই চোখ বন্ধ কেউ ওদের চুরি দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু মজার বিষয় হলো তাদের চোখই বন্ধ আর সবার চোখই খোলা।
শুধু এটুকুই বলতে চাই, এই দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এই দেশ আপনার আমার সকলের।
‘‘নেই ভেদাভেদ হেথা চাষা আর চামারে,/নেই ভেদাভেদ হেথা কুলি আর কামারে।।/হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান।।/দেশ মাতা এক সকলের।’’-কবির চিরকালের এই উচ্চারণই সত্য হোক।
মাহমুদ পারভীন নূপুর: সাংবাদিক
বহুমাত্রিক.কম