Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

শিশুর সম্পত্তি গ্রাসের চক্রান্তে স্বজনদের নামে হত্যা মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:৩৩, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

শিশুর সম্পত্তি গ্রাসের চক্রান্তে স্বজনদের নামে হত্যা মামলা

গাজীপুর: গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এলাকার মাঝুখানে তারা মিয়া (৩০) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনায় ভিন্নরকম চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এর নেপথ্যে পিতৃহারা পাঁচ বছরের এক শিশুর পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি গ্রাসের দুরভিসন্ধি থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ৯ সেপ্টেম্বর মাঝুখানে রাজ মিস্ত্রীর যোগালী তারা মিয়া (৩০) এই হত্যাকান্ডের শিকার হয়। এ ঘটনায় ওই শিশু আরফানের (৫) মা আকলিমা (২৭), বড় মামা মাজিদুল (৩৮) ও নানী মনোয়ারা বেগমকে (৫৫) প্রতিপক্ষরা আটক করে পূবাইল ফাঁড়ি পুলিশের হাতে তুলে দেয়। নিহত তারা মিয়ার পিতা মোঃ আঃ গফুর বাদি হয়ে ওই তিনজনসহ শিশুটির ছোট মামা আরজান হোসেন (৩৩) ও বাড়ির ভাড়াটিয়া সোহেল (৩০) এবং অজ্ঞাত আরও ৩-৪ জনকে আসামি করে জয়দেবপুর থানায় মামলা (নং ৬৫) করেছেন।

বাদি আঃ গফুর মামলার এজাহারে বর্ণনা করেন, পুত্র তারা মিয়াসহ তার পরিবার আকলিমাদের বাসায় ভাড়া থাকত। তারা মিয়া এলাকায় রাজ মিস্ত্রীর যোগালীর কাজ করত। একসময় লোকমুখে শোনেন তার ছেলের সাথে আকলিমার পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। তখন তারা ওই বাসা ছেড়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া নিয়ে চলে যান।

এরপরও আকলিমা ছেলের সাথে যোগাযোগ রাখত। পরে তারা মিয়া বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আকলিমা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এ বিষয়টি তারা মিয়া এলাকাবাসিকে জানায়। এ কারণে আকলিমা ও তার মা এবং ভাই ক্ষিপ্ত হয়ে তারা মিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৯ সেপ্টেম্বর আকলিমার দেয়া সংবাদের ভিত্তিতে তারা মিয়া ভোর রাত সাড়ে চারটার সময় আকলিমার বাড়ির সামনের রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ায়। তখন আকলিমা ও তার ছোট ভাই আরজান হোসেন এবং ভাড়াটিয়া মোঃ সোহেলসহ অজ্ঞাত ৩-৪ জন রাস্তা থেকে তাকে টানা-হেঁচড়া করে বাড়ির মধ্যে নিয়ে যায় এবং ঘরের সামনে আমগাছের সাথে হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে এলোপাথারী মারপিট করে।

অন্যদিকে আকলিমা গাজীপুরের বড় কয়ের এলাকায় তার বাপের বাড়িতে মা ও বড় ভাইকে এ সংবাদ দিলে তারাও ঘটনাস্থলে এসে তারা মিয়াকে মারপিট করতে থাকে। এ অবস্থায় ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে তারা মিয়া মারা যায়। এরপরই এলাকার লোকজন শিশু আরফানের মা, নানী ও মামাকে আটক করে এবং অন্যরা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। এ খবর পেয়ে বাদি ঘটনাস্থলে আসেন এবং তারা মিয়ার লাশ দেখে এবং লোকমুখে বিস্তারিত ঘটনা শোনেন। পরে খবর পেয়ে পূবাইল ফাঁড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আটক ওই তিনজনকে হেফাজতে নেয় এবং সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পরে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে আলাপ করে তিনি মামলা দায়ের করেন।

এদিকে আকলিমার স্বজনসহ স্থানীয় লোকজন জানান, আকলিমার গ্রামের বাড়ি পূবাইলের বড় কয়ের এলাকায়। মাঝুখান এলাকায় হাজী জহুরুদ্দিনের পুত্র আলাল উদ্দিনের সাথে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের এক পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। এর একবছর পর আকলিমার স্বামী আলাল উদ্দিন মারা যান। আলাল উদ্দিন মারা যাওয়ার পর একমাত্র ছেলের ভবিষ্যত চিন্তা করে শ্বশুর বাড়িতেই বসবাস করতে থাকেন আকলিমা।

স্বামীর ভিটাবাড়ি ও পার্শবর্তী টঙ্গী-পূবাইল সড়কের পাশে অবস্থিত ৪০টি দোকানের ভাড়ার আয় দিয়ে আকলিমার সংসার ভালভাবেই চলছিল। স্বামীর মৃত্যুর পর শিশুপুত্রসহ আকলিমা কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তির মালিক বনে যায়। এ কারণে তাকে ভিটাবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে সম্পত্তি গ্রাসের জন্য প্রতিপক্ষ শরীকরা নানা ফন্দি-ফিকির করতে থাকে। সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সালিশ বৈঠকও করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আজিজুর রহমান শিরীষ।

আকলিমার বড় ভাই ব্যাবসায়ি মাজিদুল ও তার মা তার খোঁজ খবর নিতে প্রায়ই মাঝুখানে যাতায়াত করত। এ কারণে শশুর বাড়ির স্বজনরা তাদেরকে কটুক্তিও করত। সালিশের সিদ্ধান্ত আকলিমার প্রতিপক্ষ শশুর বাড়ির স্বজনরা মেনে না নিয়ে ষড়যন্ত্র পাকাতে থাকে। এ অবস্থায় সম্পত্তির হিস্যাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ২০১৬ থেকে ১৮ সালের মধ্যে আকলিমার পক্ষে-বিপক্ষে গাজীপুর আদালতে ৫-৬টি মামলা দায়ের হয়। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। তখন ব্যর্থ ষড়যন্ত্রকারীরা আকলিমার নামে তার ভাড়াটিয়া চিহ্নিত মাদকসেবী তারা মিয়ার পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে বলে কুৎসা রটাতে থাকে।

চার মাস আগে প্রতিবেশী স্বজনদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি তারা মিয়ারা ওই বাসা ছেড়ে অনত্র চলে যায়। এই অবস্থার মধ্যেই আকলিমা তার সন্তান ও এক ভাইকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করছিল। আকলিমার চারপাশ ঘিরে প্রতিপক্ষ শরীকদের বসবাস করে। পরিকল্পিতভাবে ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে চোর চোর বলে অজ্ঞাত লোকেরা এক লোককে মারধর করতে থাকে। এ সময় আকলিমা ঘর থেকে বের হয়ে দেখে এক যুবককে টেনে হিচড়ে এনে তার ঘরের সামনে আমাগাছের সাথে বাধে। পরে তারা এলোপাথারি মারধর করতে থাকে। ডাক চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এসেও ওই যুবককে গণপিটুনি দিতে থাকে।

এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা মিয়া ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তখন আশপাশের লোকজন সটকে পরে। খবর পেয়ে আকলিমার ভাই এবং মা বড় কয়ের থেকে ৬টার দিকে ঘটনাস্থলে আসা মাত্র আশপাশের প্রতিপক্ষ শরীকরা তাদেরকে ঘেরাও করে আটক করে। এক পর্যায়ে তারা আকলিমার ভাই মাজিদুলকে ধরে মারধর করতে থাকে। খবর পেয়ে পূবাইল ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। আটকদের হেফাজতে নেয় পুলিশ এবং লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পূবাইল পুলিশ ফাঁড়ির এস আই মোঃ শফিকুল আলম জানান, পরকীয়ার জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। ওরাই তাকে মারধর করেছে। জমিজমা নিয়েতো আর তারা মিয়ার সাথে কোন মামলা নাই। প্রত্যক্ষদর্শী নিরপেক্ষ লোক স¦াক্ষী দিয়েছে। সকাল হয়ে যাওয়ায় ওরা পালাতে পারে নাই। এসময় এলাকাবাসী তাদের আটক করে ফেলেছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আজিজুর রহমান শিরীষ এ বিষয়ে জানান, আকলিমার স্বামী মারা যাওয়ার পর তার সম্পত্তি থেকে স্ত্রী ও শিশু পুত্রকে বঞ্চিত করতে স্বজনরা নানাভাবে চেষ্টা করেছে। এ নিয়ে কয়েকবার সালিশ বৈঠকও করেছেন। প্রাপ্য সম্পদের কিছু অংশ তিনি বুঝিয়ে দিতে পারলেও বেশীরভাগ দোকানসহ সম্পত্তি আকলিমার ভাসুরসহ স্বজনরা জবর দখলে রেখেছেন। যার মধ্যে কয়েকজন খুবই উশৃঙ্খল প্রকৃতির লোক রয়েছে।

পরে এ নিয়ে গাজীপুর আদালতে কয়েকটি মামলা মোকদ্দমার হয় যা চলমান আছে। তারা মিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে রাজ যোগালীর কাজ করতো এবং এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবী। এলাকার সবাই তাকে মাদক সেবী হিসেবেই চিনে। মাদক সেবনসহ বাসাভাড়া দিতে না পারায় কয়েকবার তাকে বাসা ছেড়ে দিতে বলা হলেও তাকে তাড়ানো যাচ্ছিল না। তারা মিয়ার পেছনে কেউ হয়তো মদদ দিয়ে মাদকের যোগানসহ ভাড়া দেয়া বন্ধ করেছে। এই ফাঁকে এলাকায় আকলিমার সাথে ওই মাদক সেবীর পরকীয়া সম্পর্কের কুৎসা রটানো শুরু করে। পরে এক পর্যায়ে ৭ মাসের বকেয়া ভাড়া না দিয়েই কয়েক মাস আগে তাকে (তারা মিয়া) ওই বাসা ছেড়ে যেতে হয়েছে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer