Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১০ ১৪৩১, বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪

শিশু সায়েমা ধর্ষণ :ধর্ষকরা মানুষ নামের কলঙ্ক-নরপশু

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ১৩:১৩, ১৩ জুলাই ২০১৯

প্রিন্ট:

শিশু সায়েমা ধর্ষণ :ধর্ষকরা মানুষ নামের কলঙ্ক-নরপশু

ঢাকা : ভেবেছিলাম এ বিষয়টি নিয়ে এখন আর লিখব না। কারণ টিভিতে, পত্র-পত্রিকার পাতায় অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যতই দেখছি ততই লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি এবং মনে হয় যেন এখনই এমন কোন জায়গায় লুকিয়ে থাকা যেতো যেখান থেকে এসব আর শুনতে হবে না।

আরো বেশি লজ্জা পাই যখন দেখি বাসায় থাকা আমাদের দশ বছরের পুত্র সন্তান ধর্ষণ মানে কী জিজ্ঞেস করে। কষ্ট পাই যখন এর উত্তর দিতে পারিনা যখন ছেলেটি আরো জিজ্ঞেস করে শিশু ধর্ষণ মানে কি ইত্যাদি ইত্যাদি। কারণ বাসায় প্রত্রিকা রাখা হয়, সারাক্ষণ টিভি চলতে থাকে। শুধু আমি কেন বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষেরই হয়তো একই প্রশ্ন। তাহলে এরা কারা যারা এগুলো করছে ?

এরা তো নিশ্চয়ই এ সমাজেরই মানুষ। হয়তো আমাদেরই কারো ভাই-বেরাদার। না এরা মানুষ নয়। মানুষ এরা হতে পারেনা। এরা মানুষ নামের কলঙ্ক, নরপশু। বুঝতেই পারছেন আমি সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ঘৃণ্য, সমালোচিত ৭ বছরের নিষ্পাপ শিশু সায়েমা ধর্ষণ ও নৃশংস হত্যার কথা বলছি। ঘটনার বিবরণে ধর্ষক এবং ঘাতক যেভাবে এ অবুঝ শিশুটিতে ফুসলিয়ে বাড়িটির ছাদে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণের পর গলায় দড়ি পেচিয়ে ফেলে রেখে ঠান্ডা মাথায় গোছল করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সেটি সত্যিই মানুষরূপী পশু অথবা জাত ধর্ষক না হলে এমনটি হওয়ার কথা ছিলনা। লোমহর্ষক ও ঘৃণিত এসব ঘটনার বর্ণনা একবার শুনলে আর জীবনে তা শুনতে ইচ্ছে করে না। কখনো মাদ্রাসার শিক্ষক, কখনো স্কুল, কলেজের শিক্ষকও রয়েছে এসব পশুদের তালিকায়।

দেখা যায় যখনই এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটার খবর পাওয়া যায় তখনই গণমাধ্যমে তা ফলাও হতে থাকে। উঠে আসে বিভিন্ন ধরনের পরিসংখান। গত এতদিনে এতসংখ্যক শিশু ধষণের শিকার হয়েছে এবং তারমধ্যে এতজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানীদের মতামতে জানা যায় তাতে বরং দুস্কৃতিকারীরা উৎসাহিত হয় এবং একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটতে সহায়তা করে। কিন্তু আমাদের করা উচিত উল্টোটা।

অর্থাৎ পরিসংখ্যানে তুলে আনতে হবে এসব ঘটনা ঘটানোর পর কতজনকে কত তাড়াতাড়ি কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। তাতে হয়তো এমন জঘণ্য অপরাথ সমাজে কমে আসতে পারে।

সমাজের একটি স্বাভাবিক নিয়ম হলো অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করা। কিন্তু আমাদের দেশে আইনগুলোই এমন যে ধারাবাহিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে করতে এত দীর্ঘসূত্রতা এবং এত বেশি সময় ক্ষেপন হয় যেখানে মানুষ ভুলেই যায় কোন ঘটনার বিচার কখন কার্যকর করা হচ্ছে। অথচ ঘটনা ঘটার পর পর সবাই বিষয়টি নিয়ে এত বেশি সোচ্চার থাকে পরে আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এমন অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনার বিচার বিশ বছরেও শেষ হতে পারেনি। সেজন্য অনেক সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও হয়তো প্রয়োজন দেখা দেয় বিচার বহির্র্ভত হত্যাকান্ডের। আর সেজন্যই কোন কোন ক্ষেত্রে বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-কে মানুষ স্বাগত জানাতেও বাধ্য হয়।

তবে সায়মা ধর্ষণ ও হত্যাকা-ের পর এ বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদেও ভিতরে বাইরে এমনকি সংসদে মাননীয় বিরোধী দলীয় উপনেতা বেগম রওশন এরশাদ এবং সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এসব বিষয়ে কঠোর বিচারের লক্ষ্যে প্রয়োজনে কঠোর আইন করার কথা উল্লেখ করেছেন। এসব বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন অনেকেই। এসব থামাতে হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিকল্প নেই। এসব ক্ষেত্রে সাধারণ বিচারিক প্রক্রিয়ায় না গিয়ে কেমনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায় সেটি দেখা দরকার। সেটি কোনভাবেই তিনদিন বা সর্বোচ্চ সাতদিনের বেশি হওয়া উচিত নয়। কারণ আমরা জানি কথায় আছে ‘জাস্টিস ডিলেইড জাস্টিস ডিনাইড’।

পৃথিবীর অনেক মুসলিম দেশে ইসলামী বিধানমতে কিছু আইন কার্যকর করতে দেখা যায়। যেমন সোদি আরবে চুরির শাস্তি হিসেবে হাত কেটে ফেলা হয়। খুনের বদলে খুন অর্থাৎ প্রকাশ্য দিবালোকে জনসমক্ষে ধারালো অস্ত্র দিয়ে শিরোচ্ছেদ করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশেও প্রয়োজনে প্রচলিত আইনের সংশোধন করে এমন চাক্ষুস বিচার প্রচলন করা যেতে পারে।

অপরদিকে এমন ঘটনা ঘটানোর পর তাৎক্ষণিক স্বীকারোক্তি ও তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে প্রয়োজনে প্রকাশ্যে ফারারিং স্কোয়াডে মৃত্যু নিশ্চিত করা যেতে পারে। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লিলতা বন্ধের জন্য আইসিটি আইন হালনাগাদ করা প্রয়োজন। যাতে সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে কেই এমন আপত্তিকর ঘটনা ঘটানোর প্রয়াস না পায়। তবে যাই হোক না কেন বর্তমান বিচারিক পদ্ধতিতে সংশোধন আনতেই হবে এবং তা কার্যকর করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেই কেবল তা রোধ করা সম্ভব। কারণ যারা এসব ঘটনার জন্য দায়ী তারা সমাজের খুবই ক্ষুদ্র এবয় বিচ্ছিন্ন অংশ। যেকোন মূল্যে তাদের বিচার হলে সমাজের সবাই খুশি হবে।

লেখক: ড. মো. হুমায়ুন কবীর, রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

email: [email protected]

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer