Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

শাজাহানপুরে বিলুপ্তির পথে মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন

আবদুল ওহাব বগুড়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩:৩৬, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

শাজাহানপুরে বিলুপ্তির পথে মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

বগুড়া : বগুড়া শাজাহানপুরে চরম অবহেলা ও উদাসীনতায় বিলুপ্তির পথে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও নিদর্শন। যা শুধু বেদনাদায়ক না, স্পর্শকাতরও।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া বাজারে ছিল পাকিস্তানি সেনাক্যাম্প। এখান থেকে পাকিস্তানি সেনারা জনগনের উপর আক্রমন চালাতো, নির্বিচারে হত্যা করতো এদেশের নীরিহ জনগনকে।

যুদ্ধ চলাকালীন এখানকার স্থানীয় স্বাধীনতাকামী কিছু যুবক সংঘবদ্ধ হয়ে আক্রমণ  চালায় এ সেনা ছাউনিতে। এরপর তারা পাকিস্তানি সেনাদের হত্যা করে ছাউনিটি দখল ও তাদের অস্ত্র গোলাবারুদ নিয়ে দৃঢ প্রত্যয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। ক্যাম্পটি পরিনত হয় মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে।

তবে পাকিস্তানী এ সেনা ক্যাম্পটি দখল করতে অপারেশনে নেতৃত্ব দানকারী বগুড়ার কৃতি সন্তান টিএইচ খানের ছেলে মাসুদ সহ এখানে শহীদ হয় বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। যাদের স্মরনে এখানে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মান সহ মুক্তিযোদ্ধারা স্থানটির নামকরণ করেন “মাসুদ নগর”। নাম ফলক “মাসুদ নগর”, সেনা ক্যাম্প ও ট্রেনিং গ্রাউন্ড আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখলেই স্মরণ করিয়ে দেয় ১৯৭১ এর ভয়াবহ দিনগুলোর কথা। ফলে আজও চোখের পানিতে বুক ভাসায় প্রবীনেরা।

কিন্তু স্বাধীনতার ৪৮ বছর অতিবাহিত হলেও মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতি স্তম্ভ সংস্কার বা উন্নত করা তো দুরের কথা পুরোনো স্মৃতি স্তম্ভটিও কয়েক বছর আগে ভেংগে ফেলা হয়েছে। তবে জনগনের দাবীর মুখে প্রশাসন থেকে বার বার নতুন আঙ্গিকে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মানের

প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও আজও নেয়া হয়নি কোন উদ্যোগ। ফলে স্থানটি ঐতিহাসিক হিসেবে পরিচিত হলেও তা মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত না করায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চরম অবমুল্যায়ন করা হয়োেছ বলে বিশিষ্ট জনেরা মনে করেন। শুধু তাই নয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত এ ভুমিতে দখলের আগ্রাসনে গড়ে উঠেছে বাসা-বাড়ী। অবহেলা অনাদরে এভাবেই হারিয়ে যেতে বসেছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি।

মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যাক্ষদর্শী প্রবীন ব্যক্তিগন ও আড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ তছলিম উদ্দীন জানান, স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও সংরক্ষনের কোন উদ্যোগ না নেয়ায় বিলুপ্তি হয়ে পড়েছে শাজাহানপুর উপজেলার একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত এ স্থানটি। তারা আরও বলেন, শাজাহানপুরে অনেক নেতার আবির্ভাব হয় কিন্তু স্থানটি সংস্কার ও সংরক্ষনের কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়না। এমনকি দৃষ্টি পড়েনা কারও।

আবার প্রতি বছর উপজেলায় নানা বরাদ্দ এলেও আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে যাদের অবদান, তাদের প্রতি সম্মান ও পরিচয় সংরক্ষনের মন মানসিকতাও তৈরী হয়নি আজও। এভাবে চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম হারিয়ে ফেলবে এ এলাকার মুক্তিযুদ্ধের এসব স্মৃতি আর নিদর্শন। এবিষয়ে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফুয়ারা খাতুনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঐ স্থানে স্মৃতিসৌধ পুনঃ নির্মানের কোন পরিকল্পনা নেই। তবে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘড় নির্মানের পরিকল্পনা রয়েছে।

তাই সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষার্থে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ সহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে এমন প্রত্যাশা স্থানীয় জনগনের।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer